আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎকারে অকপট পর্দার ‘নোলক’ সমু সরকার।
দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায় নন! রাজ চক্রবর্তীর নতুন ধারাবাহিক ‘গোধূলি আলাপ’-এর নায়িকা দক্ষিণ দিনাজপুরের সমু সরকার। বিপরীতে কৌশিক সেন। প্রচার ঝলক দেখে ফোনের পরে ফোন। একাধিক ধারাবাহিকের নায়িকাদের সঙ্গে অলিখিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু? সব মিলিয়ে কেমন লাগছে? আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎকারে অকপট পর্দার ‘নোলক’
প্রশ্ন: ‘সোমু’ নামটা কি এবার বদলাতে হবে?
সোমু: (হেসে ফেলে) এখনও কেউ কিচ্ছু বলেননি। বললে ভাবব। তার আগেই সবার মুখে মুখে আমার নাম বদলে গিয়েছে। ‘সোমু’কে সবাই ‘সোমি’ করে দিয়েছেন!
প্রশ্ন: রাজ চক্রবর্তীর প্রযোজনা, বিপরীতে কৌশিক সেন! সোমু পর্দার ‘নোলক’-এর মতোই আনন্দে লাফাচ্ছেন?
সোমু: সুযোগ পেলে সেটাই করতাম, কিন্তু করিনি। উল্টে প্রথম জানার পরে অনেক ক্ষণ কেঁদেছি। মাকে ফোন করেছিলাম খবরটা দিতে। তখনই অঝোরে কেঁদেছি। মা বলছেন, কাঁদছিস কেন? বললাম, কী করব। সামলাতে পারছি না। মা ফোনেই আদর করে বললেন, ঈশ্বরের নাম নিয়ে মন দিয়ে কাজ শুরু কর। ঠিক পারবি। কিছুতেই নিজেকে সামলাতে পারিনি সে দিন।
প্রশ্ন: পরিবারের বাকিরা?
সোমু: বাড়িতে মা, ঠাকুমা আর ভাই। ওঁরা খুব বেশি অভিনয় জগৎ সম্পর্কে জানেন না। বাবা বিএসএফ-এর জওয়ান। সীমান্তে থাকেন। তাই বাবা ছাড়া বাকিরা আনন্দ অবশ্যই করেছেন। তবে হ্যাঁ, বেশি ওয়াকিবহাল হলে যতটা করতেন, ততটা স্বাভাবিক ভাবেই হয়নি।
প্রশ্ন: রাজ চক্রবর্তীর মুখোমুখি হয়েছেন?
সোমু: বিশ্বাস করুন, এখনও তাঁকে চোখেই দেখিনি! অথচ রাজদাই আমার ছবি দেখেছেন। অডিশন দেখেছেন। তার পর আমায় পছন্দ করেছেন।
প্রশ্ন: কৌশিক সেনের বিপরীতে প্রচার ঝলকে অভিনয়! চোখা চোখা সংলাপ, এক বারেই পেরেছিলেন?
সোমু: এক বারে হয় নাকি! সময় লেগেছিল। কৌশিকদাকে দেখেই তো হাত-পা ঠান্ডা। তারপর শহুরে উচ্চারণে সংলাপ বলে ফেলেছিলাম। কৌশিকদা দেখিয়ে দিলেন, কী ভাবে বলতে হবে। বলেছিলেন, সামনে থাকা অভিনেতার চোখে চোখ রেখে অভিনয় করতে। তাহলে নিজের ভিতর থেকেই অভিনয় বেরিয়ে আসবে। এসব কথা শুনে আস্তে আস্তে ধাতস্থ হয়ে অভিনয় করলাম। অবশেষে ঠিক হয়েছে।
প্রশ্ন: কৌশিকের বদলে বাবুল সুপ্রিয়র অভিনয়ের কথা ছিল...
সোমু: হ্যাঁ, শুনেছি লুক টেস্টও হয়েছিল। আমার চরিত্রে দেবচন্দ্রিমা সিংহ রায়ের অভিনয় করার কথা ছিল। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। আমি সুযোগ পেলাম। আর আমি কৌশিকদার অন্ধ ভক্ত। এর আগে দেখেছি ওঁকে। কিন্তু আলাপ হয়নি। যেই শুনলাম ওঁর সঙ্গে কাজ করতে চলেছি, হৃদস্পন্দন বেড়ে গিয়েছিল।
প্রশ্ন: কৌশিক সেনের সঙ্গে কাজ করা আর পর্দায় ওঁর বউ হওয়া এক হল?
সোমু: (হো হো হাসি) আমি যে কী করে নিজেকে সামলে রাখছি, আমিই জানি। পুরোটাই স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। এখনও ভাল করে কথা হয়নি। তাই ওঁকেও আমার অনুভূতির কথা জানাতে পারিনি। আপনাদের মাধ্যমেই এই প্রথম ভাগ করে নিচ্ছি সব কিছু।
প্রশ্ন: আপনারও কি এই প্রথম অভিনয়?
সোমু: না না। এর আগে আকাশ আট চ্যানেলের ধারাবাহিক 'ইকির মিকির'-এ দ্বিতীয় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছিলাম। সেখান থেকে এখানে সুযোগ পাই।
প্রশ্ন: দুটো চরিত্রের মধ্যে মিল রয়েছে না অমিল? ছায়াছবি ‘বিকেলে ভোরের ফুল’-এর সঙ্গে মিল রয়েছে?
সোমু: কোনও মিল নেই। ‘ইকির মিকির’-এ আমি খুবই ভেবেচিন্তে কথা বলি। কম কথা বলি। ‘গোধূলি আলাপ’-এ আমি ঠিক উল্টো। ভীষণ দস্যি। সারা ক্ষণ ছটফট করছি। কথা বলছি। পেশায় বহুরূপী। একই ভাবে ছায়াছবি ‘বিকেলে ভোরের ফুল’-এর সঙ্গেও কোনও মিল নেই। প্রচার ঝলক অনুযায়ী, আমি মৌরীগ্রামের গ্রামের মেয়ে। বাবা গরিব। অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে আদালতে গিয়েছেন। সেখানেই তাঁকে বাঁচান আইনজীবী ‘অরিন্দম রায়’ ওরফে কৌশিক সেন। পাকেচক্রে আমার বিয়ে ভাঙলে লগ্নভ্রষ্টাকে বিয়ে করেন তিনি। বউ নিয়ে ফিরতেই পরিবারে হাজার মন্তব্য। আপাতত এটুকুই বলতে পারব (হাসি)।
প্রশ্ন: আপনি বহুরূপী দেখেছেন? নিজেকে কী ভাবে তৈরি করছেন?
সোমু: সে ভাবে বহুরূপী দেখিনি। যদিও আমার বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুরে। কাজের সূত্রে কলকাতায় একা থাকি। সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করেছি মালদহে। দেশের বাড়িতে পুজোর সময়ে যখন যাই, তখন দেখি দেব-দেবীর মুখোশ পরে কিছু মানুষ বহুরূপী সাজেন। এ ছাড়া, শ্যুটের কারণে কিছু বহুরূপীকেও আনা হয়েছিল। যাঁরা প্রচার ঝলকে আমার পিছনে লাফালাফি করেছেন, তাঁরা কিন্তু সত্যিকারের বহুরূপী। তাঁদের থেকে এই পেশা, পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের কথা খুঁটিয়ে জেনেছি। তাঁদের মতো করে অভিনয়ের চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: প্রথম দিনের শ্যুটের অভিজ্ঞতা?
সোমু: খুব ভাল। যদিও যেই শুনেছি কৌশিকদার সঙ্গে দৃশ্য, তখনই সবাইকে পাগল করে দিয়েছি, শিগগিরি সংলাপ দাও। আমি মুখস্থ করব। শুধু কৌশিকদা নন, সোহাগ সেন, সৌমিলি বিশ্বাস, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়-সহ তারকাদের ভিড়। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ওঁরা কিন্তু আমায় সহজ করে নিয়েছেন। এবং শটে ভাল অভিনয়ের পরে ওঁরা এসে আমার হাত জড়িয়ে ধরেছেন। আমি আশ্বস্ত হয়েছি। ওঁরা বুঝেছেন, বরফের মতো ঠান্ডা হাতদুটো ঠকঠক করে কাঁপছে।
প্রশ্ন: যদি পরিচালনায় রাজ আর বিপরীতে কৌশিক সেন থাকতেন?
সোমু: একদম ভয়ের চোটে মরে যেতাম। এই-ই নিতে পারছি না! আপাতত শুধুই প্রচার ঝলক শ্যুট হয়েছে। পয়লা মার্চ থেকে আসল শ্যুট শুরু। তার আগে যতটা পারছি, ঘষেমেজে নিজেকে ধারালো করছি।
প্রশ্ন: প্রচার পর্ব থেকেই অলিখিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু ‘খুকুমণি’, ‘ফড়িং’-এর সঙ্গে? ওরাও পর্দায় নোলকের মতোই গ্রামের মেয়ে...
সোমু: ধারাবাহিক ‘খুকুমণি হোম ডেলিভারি’, ‘আলতা ফড়িং’-এর কথা বলছেন তো? বিশ্বাস করুন, এসব নিয়ে মাথা ঘামানোর মতো পরিস্থিতিতেই নেই। নিজের চরিত্র ভাল করে বোঝার চেষ্টা করছি। অভিনয়ে যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, তার জন্য নিজেকে তৈরি করছি। এই পর্যন্ত। এখনই প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা মাথায় ঢুকে গেলে আর অভিনয় করতে পারব না।
প্রশ্ন: বিএসএফ জওয়ানের মেয়ে অভিনেত্রী হবেন, পরিবার মেনে নিয়েছিল?
সোমু: আমি সাংবাদিকতা নিয়ে পড়েছি। মালদহ কলেজ থেকে স্নাতক। আমার তখন ইচ্ছে ছিল, সাংবাদিকতার পাশাপাশি সঞ্চালনা, পরিচালনা করব। এই করতে করতেই অভিনয়ে ডাক পাই। করতে করতে দেখলাম, এটাতেই বেশি আগ্রহ জন্মাচ্ছে। কাজটা করতে ভাল লাগছে। ঠিক করলাম অভিনয়কেই পেশা করব। বাড়ির সবাই একটাই কথা তখন বলেছেন, যা করবি মন দিয়ে করবি। সেটাই করার চেষ্টা করছি।
প্রশ্ন: একা কলকাতায় থাকেন। ভয় করে না? ইন্ডাস্ট্রিতে ‘দুষ্টু লোক’ও তো আছে...
সোমু: আমাদের বাড়ির কারওর শরীরে ভয়ডর বলে কিচ্ছু নেই। বাবার কথা ছেড়েই দিন। মা, ভাই, আমি সবাই এক রকম। তাই দিব্যি আছি কলকাতায়। আর হ্যাঁ, দুষ্টু লোক অবশ্যই আছে। তাদের দেখেওছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে কথা বলে তারা আমায় কব্জা করার চেষ্টাও করেছে। প্রথম প্রথম বুঝতাম না। টানা বকতাম। কিন্তু কখনও ওদের ফাঁদে পা দিইনি। কেটে বেরিয়ে এসেছি।
প্রশ্ন: প্রেমিক বা ‘গড ফাদার’ আছেন?
সোমু: ইন্ডাস্ট্রিতে, ইন্ডাস্ট্রির বাইরে এ রকম কেউ নেই। দরকারও নেই। কাজ করছি। ভাল আছি।
প্রশ্ন: রাজের পরিচালনায় ওঁর ছবিতে অভিনয়ের আবদার করবেন?
সোমু: দেখুন, এখনও রাজদাকেই চোখে দেখিনি। ফলে, আবদারের প্রশ্ন নেই। তবে কার না শখ হয় রাজ চক্রবর্তীর ছবিতে অভিনয়ের! আমারও আছে। এবং এটাও জানি, ধারাবাহিকে ভাল অভিনয় করলে সেই সুযোগ আপনা থেকেই আসবে। রাজদা আমার মতো চরিত্র পেলে ঠিক ডাকবেন। সেই আশাতেই আপাতত এক মনে ধারাবাহিকে অভিনয় করছি।
প্রশ্ন: বাস্তবে যদি সোমুর এ রকম মাঝবয়সী কারও সঙ্গে বিয়ে হয়?
সোমু: কোনও সম্ভাবনাই নেই। আমি কোনও দিন বিয়েই করব না! যা করছি পর্দায় ‘নোলক’ হয়ে করছি।
প্রশ্ন: অভিনয় করতে করতে কী দেখলেন, কৌশিক সেন দারুণ রোম্যান্টিক? প্রেমে পড়া যায়?
সোমু: কী যে বলেন! আরও একটু অভিনয় করি। তার পর এই প্রশ্নের জবাব দিতে পারব। (ফোনে লজ্জা আর হাসি মিলেমিশে একাকার)