শ্রীলা মজুমদারের স্মৃতিচারণায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় । ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
শ্রীলা মজুমদার আর নেই! এটা শোনার পর নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারিনি। এখনও পারছি না। মনে হচ্ছে, একটা দুঃস্বপ্ন দেখছি। একেবারেই তৈরি ছিলাম না এই খবরটা শোনার জন্য। একটা কষ্ট দলা পাকিয়ে উঠে আসছে গলার কাছে।
শ্রীলাদি যে অসুস্থ সেটা আমরা জানতামই না। তিনি নিজেও কখনও জানতে দেননি। শরীরে একটা সমস্যা ছিল। সেটা বুঝতে পারতাম। মনে হত, তিনি আর আগের মতো সচল নেই। কোথাও একটা কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সৌজন্য দেখিয়ে কখনও জিজ্ঞেস করিনি। আর উনিও নিজে থেকে কিছু বলেননি। তবু মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছেন। কখনও বিশ্রাম চাননি। বাকি সকলের সঙ্গে একটানা কাজ করে গিয়েছেন। শুটিংয়ের চাপের কথা সকলেরই কমবেশি জানা। মারণরোগ শরীরে নিয়ে কী ভাবে তিনি বিনাবাক্যব্যয়ে সবটা করেছেন, সেটা এখন ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।
শ্রীলাদির সঙ্গে আমার স্মৃতি বলতে দুটো পর্যায়ে। অনিকেত চট্টোপাধ্যায় পরিচালিত ‘শঙ্কর মুদি’ সিনেমায় শ্রীলাদি আমার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আর ‘পালান’-এ শ্রীলাদি ছিলেন। সেটা আমার একটা ভাল স্মৃতি বলা যায়। ক্যামেরার পিছনে বসে শ্রীলাদির অভিনয় দেখতাম। আর বিভোর হয়ে থাকতাম।
কেরিয়ারের শুরুর দিকে মৃণাল সেনের ‘খারিজ’-এ শ্রীলাদি অভিনয় করেছিলেন। আর পালান হল ‘খারিজ’-এর সিক্যুয়েল। অদ্ভুত লাগছে শ্রীলাদির শুরু আর শেষটা কী ভাবে যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল। যে কোনও দুঃখের ঘটনায় কিছু ভাল বিষয় না খুঁজলে তো আমরা বাঁচতে পারব না। দুঃখটা এক পাশে সরিয়ে রেখে মনের মধ্যে একটা ভাবনা বুদবুদ কাটছে যে, শ্রীলাদি তাঁর সবচেয়ে প্রিয় পরিচালকের কাছে গিয়েছেন। তিনি ভাল থাকবেন।