পরিক্রমা নিয়ে আলোচনায় পরিচালক গৌতম ঘোষ ও অন্যরা। ছবি: উপালি মুখোপাধ্যায়।
এক দিকে ইতালি, অন্য দিকে ভারতের মধ্য প্রদেশ। এক দিকে করোনা অতিমারি, অন্য দিকে এক নদীর অপমৃত্যু। তারই সঙ্গে প্রাচ্য-পশ্চিমের মিলন। পর্দায় এক সুতোয় বাঁধা সহজ নয়। সেই কাজ মানবিকতার বাঁধনে বেঁধে উপহার দিয়েছেন পরিচালক গৌতম ঘোষ। তাঁর ‘পরিক্রমা’ ছবিতে। ছবির দৌলতে চিত্রাঙ্গদা সিংহ, আরিয়ান বাদকুল এবং আরও অনেকে পর্দা ভাগ করেছেন মার্কো লিওনার্দির সঙ্গে। সেখানে ‘নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন’-এর সঙ্গে মা-হারা কিশোর লালার জীবন জুড়ে গিয়েছে করুণ আবহে। ছবিকে আলাদা উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন পরিচালক। সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে গৌতম ঘোষ বলেন, “সিনেমার ভাষা সবচেয়ে জোরালো। যে কোনও বিষয় খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়।”
অনেক স্মৃতি ছবি ঘিরে। ২০ বছর আগে পরিচালকের লেখক বন্ধু সারজোর মাথায় প্রথম বিষয়টি আসে। তিনি তাঁর ভাবনাকে দুই মলাটে বন্দি করে পাঠান গৌতমের কাছে। উপন্যাস পড়েই ছবি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পরিচালক। কিন্তু সেই প্রস্তুতি শুরু হয় ২০১৯ সাল থেকে। প্রথম ভাগের শুটিং হয় ইতালিতে। সেই পর্ব শেষ হতেই বিশ্ব জুড়ে তাণ্ডব চালাতে শুরু করে অতিমারি। ঘটনাচক্রে অতিমারির প্রথম ঢেউও আছড়ে পড়েছিল ইতালিতে। গৌতমের কথায়, “আমরা দ্রুত সে দেশ ছেড়ে ফিরে আসি। তার পর দীর্ঘ বিরতি। পৃথিবী সুস্থ হল। ফের শুটিং। এ বার ইতালি ছেড়ে ভারতে পা মার্কো লিওনার্দির। মধ্যপ্রদেশ-সহ নানা জায়গায় টানা শুটিং।”
অতিমারির কারণে দীর্ঘ বিরতির পাশাপাশি আরও একটি সমস্যায় পড়েছিলেন গৌতম। ‘লালা’ চরিত্রে যে কিশোরদের বেছেছিলেন, তারা বড় হয়ে গিয়েছে এ ক’বছরে। ফলে নতুন করে অডিশন নিতে হয়। সেখান থেকে সুযোগ পায় আরিয়ান। গৌতমের কথায়, “ভীষণ লাজুক। কোনও দিন অভিনয় করেনি। বন্ধুত্ব পাতাতে কিছুটা সময় লেগেছে। বলেছিলাম, আমি তোমার বন্ধু। গৌতম বলে ডেকো। শুনে আঁতকে উঠেছিল কিশোর অভিনেতা। জানিয়েছিল, ‘গৌতম স্যর’ বলবে।” একই ভাবে মার্কোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ পরিচালক। দাবি, ‘মারাদোনা’-খ্যাত অভিনেতা ছবি তৈরির আগে খুঁটিয়ে ভারতকে জেনেছেন। উপন্যাস, চিত্রনাট্য পড়েছেন। উজাড় করেছেন ক্যামেরার সামনে।
যাঁকে নিয়ে এত কথা তিনি কী বলছেন? মার্কোর কথায়, “প্রথম যখন নর্মদা নদীর কথা শুনি, ভেবেছিলাম স্বচ্ছ, খরস্রোতা জলধারা দেখব। উৎস অঞ্চলে নদী তেমনই। নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে আচমকা গতি স্তব্ধ। শ্যাওলা জমে সবুজ রং। নর্মদা মরে গিয়েছে!” দেখে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন অভিনেতা।
অভিনেতা থেকে পরিচালক— মনে রেখেছেন দু’টি ঘটনা। কিশোর ‘লালা’ ওরফে আরিয়ান চিত্রনাট্য মেনে জিনিস বিক্রি করছে। এমন সময় দুই পর্যটক তাকে সত্যিকারের বিক্রেতা ভেবে জিনিস কিনে ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন! আর হনুমানদের নিয়ে শুটিং, তাদের সঙ্গে সকালের জলখাবার খাওয়া। বলতে বলতে হাসিতে ফেটে পড়েছেন সকলে।