পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বাইরে থেকে চিত্রগ্রাহক আনলেও ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী বাড়তি চিত্রগ্রাহক রাখতেই হয়। ছবি: সংগৃহীত।
মিথ্যা ভাষণ করছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, সমাজমাধ্যমে অভিযোগ তুললেন চিত্রগ্রাহক গিল্ড-এর সম্পাদক স্বপন মজুমদার। শনিবার স্বপনের করা পোস্টের পাল্টা হিসাবে আরও বড় পোস্ট করলেন পরমব্রত। তাঁর বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ হিসাবে তুলে ধরলেন একের পর ঘটনার কথা। সঙ্গে কিছু নথির ছবিও। আর তার পর থেকেই আমজনতার দরবারে আরও হাট-খোলা হয়ে গিয়েছে এই দ্বন্দ্বের ছবি।
গত জুলাই মাস থেকে সম্মুখ সমরে পরিচালক-প্রযোজক এবং ফেডারেশন। হস্তক্ষেপ করতে চেয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পরিচালক-প্রযোজকদের অভিযোগ, সমস্যা মেটেনি। এরই প্রেক্ষিতে গত ৩ ডিসেম্বর ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া (ডিএইআই) সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দিয়েছে, ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ১৪ দফা দাবি নিয়ে তারা আইনি পথে হাঁটছে।
সেই বৈঠকেই ডিএইআই-এর কার্যনির্বাহী সমিতির অন্যতম সদস্য পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, বাইরে থেকে চিত্রগ্রাহক আনলেও ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী বাড়তি চিত্রগ্রাহক রাখতেই হয়। পরমের এই বক্তব্যের বিরুদ্ধেই গর্জে উঠেছেন চিত্রগ্রাহক গিল্ড-এর সম্পাদক স্বপন মজুমদার। তাঁর দাবি, পরিচালক-অভিনেতার এই অভিযোগ মিথ্যা। সমাজমাধ্যমে সেই কথা লিখে তিনি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন পরমব্রতকে। সাফ জানান, ফেডারেশনের তরফে এমন কোনও দাবি করা হয়ে থাকলে যেন প্রমাণ করেন পরমব্রত। “প্রমাণ দিতে পারলে ইন্ডাস্ট্রি এবং গিল্ড-এর সম্পাদক পদ ছেড়ে দেব”, লেখেন স্বপন।
সমাজমাধ্যমে করা এই পোস্টের পাল্টা হিসাবে সমাজমাধ্যমকেই বেছে নেন পরমও। এক লম্বা পোস্টে তিনি একাধিক ঘটনা উল্লেখ করেন। সেই সব ঘটনার পক্ষে প্রমাণ হিসাবে একাধিক স্ক্রিনশট-ও দিয়েছেন। পরমব্রত দাবি করেছেন, চিত্রগ্রাহক শ্রীজিৎ বসু, আপ্পু প্রভাকর, কে কে মহাজনদের উদাহরণ দিয়েছেন। তাঁরা সত্যজিৎ রায় বা বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। সেই সময়েও ফেডারেশন থেকে সহকারী চিত্রগ্রাহক নিতে হত। কিন্তু জাতীয় স্তরের এই চিত্রগ্রাহকেরা তাঁদের পছন্দের এক জন সহকারী চিত্রগ্রাহককে সঙ্গে রাখতে পারতেন। এখন সেই সুযোগ নেই। দু’জন সহকারী চিত্রগ্রাহকই কলকাতার নিয়ম নিতে হবে। পাশাপাশি, এই দুই জাতীয় স্তরের চিত্রগ্রাহক কিন্তু তাঁদের গিল্ড-এর (জাতীয় স্তরের) কার্ড দেখিয়ে সর্বত্র কাজ করতে পারতেন। এখন যা আর হয় না। কলকাতা গিল্ড বা ফেডারেশনের কার্ড না থাকলে নানা সমস্যা তৈরি করা হয়।
আইনি পথে হাঁটার কথা ঘোষণার পরেও সমাজমাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে এই কাজিয়া। স্বপনবাবুর শর্ত মেনে পরমব্রত সমাজমাধ্যমেই নিজের বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু এই উস্কে দেওয়া সমস্যা নিয়ে কি পরিচালকদের সংগঠন কোনও পদক্ষেপ করবে? আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল সংগঠনের সভাপতি সুব্রত সেন, সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়ের কাছে। উভয়েই বলেছেন, “আমাদের নতুন করে কিছুই আর বলার নেই। কেন স্বপন মজুমদার এই পোস্ট করলেন, বুঝতে পারছি না। তিনি যে হেতু পরমব্রতর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাই পরমব্রত আমাদের সকলকে জানিয়েই উত্তর দিয়েছেন।”
আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন পরিচালক-অভিনেতাও। তাঁর কথায়, “আমার প্রমাণ দেওয়ার কথাই নয়। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জের একটা মোক্ষম জবাব দেওয়া প্রয়োজন।” তিনি এ-ও জানিয়েছেন, হয়তো সংগঠনের আগের দিনের বৈঠক শুনে এই একটি ত্রুটিই ‘চিত্রগ্রাহক গিল্ড’ বার করতে পেরেছে। তাই বক্তব্য রেখেছেন। পরম আরও বলেন, “স্বপনদা এর পর ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে যাবেন কি না সেটা তাঁর বিষয়। আমি বা আমরা কেউ সেটা চাই না। এই কারণেও আমি কোনও প্রমাণ দাখিল করিনি। প্রাথমিক ভাবে স্বপনদার অভিযোগ হাস্যকর শোনালেও তার মোক্ষম জবাবটা দেওয়া প্রয়োজন ছিল। কারণ প্রকাশ্যে আমরা কোনও ভিত্তিহীন অভিযোগ করিনি, করতে পারি না।”
তিনি একটি প্রমাণ চেয়েছিলেন, পরমব্রত একাধিক প্রমাণ দিয়েছেন। এই প্রেক্ষিতে স্বপনের বক্তব্য জানতে আনন্দবাজার অনলাইন যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিল তাঁর সঙ্গেও। কিন্তু কোনও ভাবেই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।