এক প্রযোজকের দাবি, ক্রমাগত দ্বন্দ্ব, টানাপড়েনে বিপর্যস্ত কলাকুশলীরা হতাশার শিকার।
বিজ্ঞপ্তি বনাম খোলা চিঠির জোড়া ধাক্কায় তোলপাড় টেলিপাড়া। শনিবারের বেনামি বিজ্ঞপ্তি একাধিক নতুন ধারাবাহিকের শ্যুট বন্ধ করে দিয়েছিল। মঙ্গলবার খোলা চিঠিতে প্রযোজকদের সমর্থন জানিয়ে ফেডারেশনের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন অজ্ঞাতপরিচয় কলাকুশলী। কী তাঁর বক্তব্য? খোলা চিঠিতে নিজের নাম-পরিচয় গোপন রেখে ওই কলাকুশলী সরাসরি অভিযোগ জানিয়েছেন, অতিমারির কারণে লকডাউন।আর তার ফলে উপার্জনহীন হয়ে টেলিপাড়ার প্রায় সবাই সমস্যার সম্মুখীন। কলাকুশলীরা প্রায় একমাস কর্মহীন ছিলেন। সেই সময় গিল্ড বা ফেডারেশন অর্থনৈতিক ভাবে কোনও সাহায্য করেনি, কলাকুশলীর এই অভিযোগ কি প্রকাশ্যে আনল ফেডারেশনের গৃহবিবাদকেই? এই বিষয়ে যদিও এখন মুখ খুলতে নারাজ আর্টিস্ট ফোরাম। সংগঠনের যুগ্ম সহকারি সম্পাদক দিগন্ত বাগচী আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেলে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে বৈঠকে বসবে সমস্ত সংগঠন। বৈঠকের পর বিষয়টি নিয়ে ফোরাম বক্তব্য রাখবে। এ দিকে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রযোজকের দাবি, ক্রমাগত দ্বন্দ্ব, টানাপড়েনে বিপর্যস্ত কলাকুশলীরা হতাশার শিকার। তাই এই ধরনের বার্তা বা মন্তব্য প্রকাশ্যে এসেছে।
খোলা চিঠিতে আর কী বলা হয়েছে? অভিযোগকারী আরও লিখেছেন, কলাকুশলীরাও ফেডারেশন বা গিল্ডের কাছে কোনও অর্থসাহায্য চাননি। কিন্তু বিপদের দিনে নিঃস্বার্থ ভাবে তাঁরা পাশে পেয়েছেন প্রযোজকদের। লকডাউনেও তাঁরা সবার কথা ভেবে শ্যুট করে গিয়েছেন এবং নিয়মিত পারিশ্রমিক দিয়েছেন কলাকুশলীদের। তাঁর দাবি, সেটা কোনও অনুদান নয়। এর পরেই বিস্ফোরক অভিযোগ তাঁর, ফেডারেশনের কিছু কর্মকর্তার নির্দেশে কলাকুশলীদের সেই পারিশ্রমিক ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন গিল্ডের কিছু কর্মকর্তা। কর্মকর্তাদের কথায়, বিনা পরিশ্রমে পারিশ্রমিক গ্রহণ দান নেওয়ার সামিল। তাই প্রযোজকদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই অভিযোগকারীর প্রশ্ন, গত বছর লকডাউনের সময় যদি সব কলাকুশলী প্রযোজকদের দেওয়া পারিশ্রমিক নিতে পারেন তা হলে এ বছর নয় কেন? একই সঙ্গে তাঁর দাবি, অতিমারির সংকটে ফেডারেশন এবং গিল্ড থেকেও নির্দিষ্ট অর্থের কুপন সাহায্য হিসেবে দেওয়া হয়েছিল কলাকুশলীদের। সে দিন কি ওই দুই সংগঠন তা হলে অপমানের দৃষ্টিভঙ্গ নিয়েই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল কলাকুশলীদের দিকে!
সাউন্ড রেকর্ডিস্ট সুব্রত মাইতি-র বক্তব্যেও ছিল একই কথা। তিনি যুক্তি দিয়েছিলেন, গত বছর তবু নানা জন সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন। এ বছর কাউকে পাশে পাওয়া যাচ্ছে না। সবার খারাপ অবস্থা। প্রযোজকেরা যদি এমন দিনে পাশে দাঁড়ান তা হলে তাঁদের সাহায্য নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী দিনে তাঁরাই কাজ এবং অর্থ দুটোই দেবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্যামেরাম্যান স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, প্রযোজকেরাই তাঁদের সারা বছর কাজ দেন। সবার উপার্জনের ব্যবস্থা করেন। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ক্যামেরাম্যানের প্রশ্ন, ফেডারেশন কি সবার দায়িত্ব নেবে? তাই তিনিও প্রযোজকদের পক্ষেই।
এত দিন ফেডারেশন এবং তার অন্তর্গত গিল্ড এককাট্টা হয়ে লড়েছে নানা বিষয় নিয়ে। শ্যুট ফ্রম হোম, লকডাউনে বাড়ির বাইরে শ্যুটিং নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। ১১টি প্রশ্ন সম্বলিত শ্বেতপত্রে উত্তরেরও দাবি জানিয়েছে। অবশেষে কি সেই জোটে ভাঙন? তারই প্রকাশ্য ইঙ্গিত এই ভাইরাল হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা? যথারীতি মৌন ফেডারেশন সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস এবং সম্পাদক অপর্ণা ঘটক।
তবে মুখ খুলেছেন একাধিক প্রযোজক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সবাই জানিয়েছেন, মঙ্গলবার বিকেলে বৈঠক হবে। বৈঠক থেকে উঠে আসা সিদ্ধান্তও যে আগামী দিনে বহাল থাকবে, তার নিশ্চয়তা কে দেবে? তাঁদের মতে, টেলিপাড়া ঘোর সংকটে। অজ্ঞাত কলাকুশলীর এই খোলা চিঠি সে কথাই বলছে। দিশা হারিয়ে, উদ্বেগ চেপে রাখতে না পেরেই এ ভাবে তাঁরা তাঁদের মনের কথা জানিয়েছেন।
খোলা চিঠির শেষে ফেডারেশনের অনুকরণেই ৮ দফা প্রশ্ন রেখেছে অভিযোগকারীও। জানতে চাওয়া হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস এবং রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। নতুন ধারাবাহিকের শ্যুট বন্ধ হওয়ায় সেই নির্দেশ অমান্যের পাশাপাশি অপমান করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর পাঠানো মধ্যস্থতাকারীদের।
প্রযোজকদের অর্থসাহায্য ফেরত দিয়ে তাঁদেরও অপমান করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। কলাকুশলীদের ফেরত দেওয়া অর্থ প্রযোজকদের হাতে তুলে না দিয়ে সংগঠন বিরোধী কাজ করেছে গিল্ড, খোলা চিঠিতে সে দিকও তুলে ধরা হয়েছে। কেন বারে বারে অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক, কলাকুশলীদের হুমকি দিচ্ছে ফেডারেশন, গিল্ড? তারও কৈফিয়ৎ চাওয়া হয়েছে খোলা চিঠিতে। এমনও জানতে চাওয়া হয়েছে, সদস্যদের কথাই গিল্ডের কথা? নাকি ফেডারেশনের শীর্ষপদস্থ ব্যক্তিত্বের কথাই ফেডারেশন এবং গিল্ডের বক্তব্য হিসেবে ধার্য হবে?
খোলা চিঠির মাধ্যমে সম্ভবত এই প্রথম ফেডারেশনের শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানালেন কোনও কলাকুশলী!