Rashid Khan Death

প্রয়াত উস্তাদ রাশিদ খান, মাত্র ৫৬ বছরেই থেমে গেল ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের এক বিরল, উদাত্ত কণ্ঠস্বর

জন্ম উত্তরপ্রদেশে। ১০-১১ বছর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন রাশিদ খান। দাদু নিসার হুসেনের কাছে গান শেখা শুরু। সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির স্কলারশিপ পান। থেকে গিয়েছিলেন কলকাতাতেই।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:১৯
Classical Singer Ustad Rashid Khan passes away

হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বেশ কয়েক দিন। সেখান থেকে আর ফেরানো গেল না রাশিদ খানকে। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম জনপ্রিয় শিল্পী উস্তাদ রাশিদ খান প্রয়াত। বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। গত ২২ নভেম্বর থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। গত কয়েক বছর ধরে শিল্পী প্রস্টেট ক্যানসারে ভুগছিলেন। চিকিৎসায় সাড়াও দিচ্ছিলেন। এর মধ্যে সম্প্রতি তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) হয়। সেখান থেকেই অবস্থার অবনতি শুরু। শিল্পীকে দক্ষিণ কলকাতার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। সেখানেই মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিটে প্রয়াত হলেন তিনি। রেখে গেলেন স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্রকে।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালে পৌঁছে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভিতরে গিয়ে শিল্পীর খোঁজ নিয়ে তিনি বেরিয়ে আসেন হাসপাতালের বাইরে। সঙ্গে ছিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, মন্ত্রী তথা সঙ্গীতশিল্পী ইন্দ্রনীল সেন। হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘চিকিৎসকদের যদি কিছু বলার থাকে বলুন, তার পর আমি বলব।’’

image of rashid khan

বুধবার শেষকৃত্য রাশিদ খানের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

এর পরেই রাশিদের চিকিৎসক বলেন, ‘‘মাথায় ব্লিডিং (রক্তক্ষরণ) নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এত দিন হাসপাতালে থাকার ফলে সংক্রমণ হয়েছিল। ওঁকে ভেন্টিলেশনে পাঠাতে হয়। ওঁকে ফিরিয়ে আনতে পারিনি। মঙ্গলবার বিকেল ৩টে ৪৫ মিনিটে তিনি মারা যান।’’ চিকিৎসকেরা রাশিদের মৃত্যুসংবাদ জানানোর পর মমতা বলেন, ‘‘রাশিদ আমার ভাইয়ের মতো। গঙ্গাসাগর থেকে জয়নগরে যাওয়ার পর ফোন এসেছিল। নবান্নে ফিরে খবর আসে, কিছু একটা হয়েছে। ছুটে আসি।’’ তিনি রাশিদের প্রসঙ্গে জানান, তিনি বিশ্ববিখ্যাত। ওঁর পরিচয় দিতে হবে না। বাংলাকে ভালবেসে বাংলায় থেকে গিয়েছেন। বিশ্বের সব প্রান্তে গিয়ে সঙ্গীতের প্রচার করেছেন। সেই রাশিদের গান শুনতে পারবেন না বলে ‘কষ্ট হচ্ছে’, জানিয়েছেন মমতা।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাসপাতালেই রাখা থাকবে মরদেহ। সেখান থেকে বেরিয়ে রাশিদের দেহ নিয়ে যাওয়া হবে পিসওয়ার্ল্ডে। রাতে দেহ থাকবে সেখানে। বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় রবীন্দ্র সদনে নিয়ে যাওয়া হবে দেহ। সেখানে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন তাঁর অগণিত ভক্ত। দুপুর ১টায় কলকাতা পুলিশের তরফে গান স্যালুট দেওয়া হবে। তার পর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে শিল্পীর দেহ। সেখানে নিয়ম-আচার পালনের পর দেহ নিয়ে যাওয়া হবে টালিগঞ্জ কবরস্থানে। সেখানেই হবে শেষকৃত্য।


১৯৬৮ সালের ১ জুলাই উত্তরপ্রদেশের বদায়ূঁতে জন্ম রাশিদের। তিনি রামপুর-সাসওয়ান ঘরানার শিল্পী। যে ঘরানার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইনায়েত হুসেন খাঁ-সাহিব। রাশিদ তালিম নিয়েছেন এই ঘরানারই আর এক দিকপাল উস্তাদ নিসার হুসেন খাঁ-সাহিবের কাছ থেকে। যিনি ছিলেন রাশিদের দাদু। রাশিদের মামা গোয়ালিয়র ঘরানার উস্তাদ গুলাম মুস্তাফা খাঁ-সাহিবের থেকেও তালিম নিয়েছেন রাশিদ। মূলত শাস্ত্রীয় সঙ্গীত গাইলেও ফিউশন বা বলিউড এবং টলিউডের ছবিতে বহু জনপ্রিয় গান গেয়েছেন শিল্পী।

image of rashid khan

দাদু নিসার হুসেনের কাছে গানে হাতেখড়ি হয়েছিল ছোট্ট রাশিদের। — ফাইল চিত্র।

১০-১১ বছর বয়সে কলকাতা চলে আসেন রাশিদ। সঙ্গীত রিসার্চ অ্যাকাডেমির স্কলারশিপ নিয়ে দাদু নিসার হুসেনের কাছে গান শেখা শুরু। তার পর থেকে গিয়েছেন কলকাতাতেই। সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার, পদ্মভূষণ সম্মান যেমন পেয়েছেন, তেমন বাংলা থেকেও পেয়েছেন বঙ্গবিভূষণ সম্মান।

Advertisement
আরও পড়ুন