জগন্নাথ নাটকের এক দৃশ্যে সুজন মুখোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
৪৬ বছর বয়সে যৌবন ফিরে পেয়েছে ‘জগন্নাথ’। আবার সে পাড়ি দেবে দিল্লি। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ, ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী ‘ভারত রং মহোৎসব’-এ তার বিশেষ আমন্ত্রণ। চেতনা নাট্যগোষ্ঠীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রযোজনা ‘জগন্নাথ’ নাটক দিয়েই উদ্বোধন হবে এ বারের নাট্যোৎসবের।
সেই উপলক্ষে বাংলার নাট্যদলকে সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার চেয়ারম্যান পরেশ রাওয়াল। যে মঞ্চে নাটক প্রদর্শন করার স্বপ্নে সর্বভারতীয় দলগুলির প্রতিযোগিতা চলে, সেখানে উদ্বোধনী নাটক হতে পেরে কেমন লাগছে স্রষ্টা অরুণ মুখোপাধ্যায়ের? জানতে চেয়েছিল আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি স্বভাবসিদ্ধ রসিক এবং সংক্ষিপ্ত উত্তরে বললেন, ‘‘ভালই তো লাগবে। কিন্তু যখন খবরটা প্রথম পেয়েছিলাম, সব আনন্দ করে নিয়েছি। সে তো এক বছর আগের কথা!’’
বিষয়টি স্পষ্ট করলেন জগন্নাথ স্বয়ং। আগে এই বৈগ্রহিক চরিত্রে অভিনয় করতেন অরুণ নিজেই। হৃদয়ে যুবক হলেও ৮৫ বছর বয়সে এসে তিনি এখন আর মঞ্চে দাপিয়ে বেড়াতে পারেন না। পরিবর্তে গত ১০ বছর ধরে ‘জগন্নাথ’কে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁর ছোট ছেলে সুজন মুখোপাধ্যায় (নীল)। ‘জগন্নাথ’ বলতে নতুন প্রজন্মের থিয়েটারপ্রেমীদের চোখে তাই নীলেরই ছবি ভাসে। আনন্দবাজার অনলাইনকে হালের ‘জগন্নাথ’ বললেন, ‘‘অতিমারির বাড়বাড়ন্ত দেখে গত বছর ‘ভারত রং মহোৎসব’ বন্ধ রাখা হয়। ২০২১ সালেই ‘জগন্নাথ’ উদ্বোধনী নাটক হওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছিল। চেয়ারম্যান পরেশ রাওয়াল আহ্বান জানিয়েছিলেন নিজে। চেয়েছিলেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ‘জগন্নাথ’ অভিনীত হোক। কিন্তু সে বছর নাট্যোৎসব না হওয়ায় এ বছর অবশেষে আমরা যাচ্ছি।’’
নীল আরও জানান, ২০১৫ সালের পর এই নাটকের শো আর হয়নি। নতুন নাটক নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু সম্প্রতি ‘চেতনা’র ৫০ বছর উপলক্ষে আবার ফিরে দেখা ‘জগন্নাথ’কে। দুটি শো হয়ে গেল। যাতে মহড়ার কাজ হল বলে মনে করছেন অভিনেতা। প্রায় ২০ বছর পর ‘জগন্নাথ’কে কলকাতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার উচ্ছ্বাস বুকে নিয়ে নীল বললেন, ‘‘চেতনার পঞ্চাশ বছরে দু’বার মঞ্চস্থ হল এই যুগান্তকারী নাটক, এটা ভেবে ভাল লাগছে।’’
বহির্বিশ্বের আহ্বানে সাড়া দেওয়ার ঘটনা যদিও জগন্নাথের জীবনে প্রথম নয়। ‘চেতনা’র দুই বিখ্যাত প্রযোজনা, ‘মারীচ সংবাদ’ এবং ‘জগন্নাথ’ গত কয়েক দশকে দেশ-বিদেশের বহু মঞ্চে বহু বার সম্মানিত হয়েছে। তবে কালের নিয়মে ‘জগন্নাথ’ স্তব্ধ হয়ে যেতে যেতেও হারিয়ে যায়নি। কী সেই জাদু, যা প্রবহমান কাল ধরে দৃশ্যগুলোকে অমর করে রাখে?
অরুণ মৃদু হেসে বললেন, ‘‘ওই তো, না দেখলে মিস! এ তো আর রেকর্ড করে রাখা যায় না। মানুষের মনেই বেঁচে থাকে। জগন্নাথও রয়েছে হয়তো তার নিজের গুণেই। নতুন নাটক আসবে না, তা বললে তো আর হয় না। আমিও তো চাই আগেরগুলো বন্ধ হোক, কিন্তু আশ্চর্য ভাবে কিছু কিছু নাটক অনেক দিন বাঁচে। দেখি, এখনও এই নাটকের প্রাসঙ্গিকতা আছে। মানুষের মৌলিক ভাবনাচিন্তার বিষয় নিয়ে যে নাটক করা হয়, সে নাটক থেকে যায়। ‘জগন্নাথ’ তেমনই এক নাটক।’’