বলিউড অভিনেতা শারিব হাশমি। ছবি: সংগৃহীত।
ইন্ডাস্ট্রিতে লড়াই করে নিজের পায়ের নীচের জমি শক্ত করেছেন। ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ ওয়েব সিরিজ়ের পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। অভিনেতা শারিব হাশমি এ বার এক বাঙালি পরিচালকের হিন্দি ছবিতে অভিনয় করবেন। সম্প্রতি, মুম্বই থেকে ফোনে তাঁর কেরিয়ার এবং বাঙালি পরিচালকের সঙ্গে কাজ প্রসঙ্গে কথা বললেন শারিব।
বলিউডে তিনি ব্যস্ত অভিনেতা। সেখানে হঠাৎ বাঙালি পরিচালক অনীক চৌধুরীর ‘জেব্রা’ ছবিটি করতে রাজি হওয়ার নেপথ্য কারণ কী? শারিব বললেন, ‘‘আসলে অনীকের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই ছবিটার বিষয় পছন্দ হয়ে যায়।’’ এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টালিজেন্স) কী ভাবে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি করতে পারে, সেই প্রেক্ষাপটেই তৈরি হচ্ছে ছবি। শারিবের বিপরীতে রয়েছেন টলিউডের অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা সরকার। শারিব জানালেন, ছবিতে তাঁর চরিত্রটি একজন ফোটোগ্রাফারের।
এআই বিরোধী আন্দোলনে সম্প্রতি হলিউড কর্মবিরতির পথে হেঁটেছিল। এ দেশেও সেই উত্তাপ এসে পৌঁছেছে। বিষয়টা শারিবের মতো অভিনেতাকে চিন্তায় ফেলেছে। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক জায়গায় শুনছি, ডাবিং শিল্পী এবং চিত্রশিল্পীদের কাজ কমে যাচ্ছে। তার থেকেও বড় কথা, এই বিষয়টা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট আইন নেই।’’
শৈশব থেকেই বাংলা ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে অবগত শারিব। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের ছবি দেখে তিনি বড় হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে সেই তালিকায় জুড়েছে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত এবং ঋতুপর্ণ ঘোষের নাম। বললেন, ‘‘বিমল রায়ের মতো মহান বাঙালি পরিচালকরাই তো হিন্দি ছবির ইন্ডাস্ট্রিকে তৈরি করেছিলেন।’’ তবে একই সঙ্গে শারিব জানালেন, হালের বাংলা ছবি সে ভাবে দেখার সুযোগ পাননি। তাই বাংলায় এসে কাজ করতে চান।
৯০-এর দশকে সহকারী পরিচালক হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন শারিব। কিন্তু প্রথম ছবি ছিল ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই শারিব বললেন, ‘‘আমি তো কোনও দিন অভিনেতা হতেই চাইনি। আমি চিত্রনাট্য লিখতাম। তাই প্রথম দশ বছরে স্ট্রাগল কী, সেটা বুঝিনি।’’ পরে অবশ্য সেই বছরই ডিসেম্বরে চাকরি ছেড়ে পাকাপাকি ভাবে অভিনেতা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শারিব।
অভিনেতা হওয়ার পথে শারিবের লড়াইটা সহজ ছিল না। জানালেন, প্রথম তিন বছর তাঁকে খুবই কষ্ট করতে হয়েছে। বললেন, ‘‘তখন আমি বিবাহিত। সেই অবস্থায় পেশা পরিবর্তন করা খুবই ঝুঁকির কাজ ছিল। সবাই বিরোধিতা করলেও আমার স্ত্রী সঙ্গে ছিলেন।’’ একে একে আসে ‘জব তক হ্যায় জান’ বা ‘ফিল্মিস্তান’-এর মতো ছবির প্রস্তাব। তবে ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর জেকে তলপড়ে চরিত্রে অভিনয়ের পর আর তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। শারিব বললেন, ‘‘তার আগে কয়েক বছর ছোট ছোট ছবিতে কাজ করেছি। কিন্তু এই সিরিজ় আমাকে ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছে। এত ভালবাসা পাব, কোনও দিন কল্পনা করিনি।’’ এখন পুরনো দিনের প্রসঙ্গ উঠলে স্ত্রী কী বলেন? হাসতে হাসতে শারিব বললেন, ‘‘বলে, ও নাকি সঠিক ঘোড়ার উপর বাজি ধরেছিল।’’
এক সময় অভিনয়ের টানে অনিচ্ছা সত্ত্বেও একাধিক ছবিতে কাজ করতেন। শারিব মনে করেন, পরিশ্রমের কারণে আজকে তিনি ‘না’ বলতেও শিখেছেন। সম্প্রতি, ‘ফাইটার’ ছবির শুটিং শেষ করলেন। ছবিতে রয়েছেন হৃতিক রোশন এবং দীপিকা পাড়ুকোন। তাঁদের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কী রকম? উত্তরে কিন্তু শারিবের মুখে কলুপ। শুধু বললেন, ‘‘ক্যামিয়ো চরিত্র। তার থেকেও বড় কথা, ছবিটা আগামী বছর আমার জন্মদিনে (২৫ জানুয়ারি) মুক্তি পাচ্ছে। এর বেশি এখনই কিছু বলতে চাই না।’’
নতুন প্রজন্মের অভিনেতাদের শারিব কী টিপস্ দেবেন? উত্তরে বললেন, ‘‘টিকে থাকতে হবে। অনেকেই দু-এক বছর সময় নিয়ে মুম্বইতে স্ট্রাগল করতে আসেন। সুযোগ না পেলে ফিরে যান। আমি যখন হাল ছাড়তে চলেছি, সেই সময়েই ‘জব তক হ্যায় জান’ ছবির অডিশনের জন্য শানু শর্মার ফোন আসে। নিজের উপর বিশ্বাস হারালে চলবে না।’’ এখনও পর্যন্ত কোনও খারাপ অভিজ্ঞতার তুলনায় বলিউডে ভাল অভিজ্ঞতাই বেশি পেয়েছেন শারিব। কথা প্রসঙ্গেই অতীতে ফিরে গেলেন। জানালেন, তাঁর অনুপ্রেরণার কথা। এক বার এক বিজ্ঞাপনের অডিশনে তাঁর অভিনয় দেখে বাকিরা হাততালি দিয়েছিলেন। শারিবের কথায়, ‘‘সেখানে প্রত্যেকেই কিন্তু প্রতিযোগী। তার পরেও ওই প্রশংসা ভুলতে পারিনি। মজার বিষয়, শেষ পর্যন্ত কিন্তু ওই বিজ্ঞাপনে আমার পরিবর্তে অন্য কেউ সুযোগ পেয়েছিলেন।’’
সম্প্রতি, ‘মিশন মজনু’ এবং ‘আফওয়া’-র মতো ছবিতে শারিবের অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে ‘ডিপ্লোম্যাট’। শারিব জানালেন, ‘দ্য ফ্যামিলি ম্যান’-এর নতুন সিজ়নের শুটিং খুব দ্রুত শুরু হবে।