‘চালচিত্র’ ছবির একটি দৃশ্যে শান্তনু মহেশ্বরীর লুক। ছবি: সংগৃহীত।
জন্ম কলকাতায়। মুম্বইয়ে নৃত্যশিল্পকে কেন্দ্র করে জাতীয় স্তরে পরিচিতি। অবশেষে বাংলার ছেলে শান্তনু মহেশ্বরী বাংলা ছবিতে অভিনয় করলেন। প্রতিম ডি’গুপ্তের ‘চালচিত্র’ ছবিতে তরুণ পুলিশ অফিসারের চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে। সম্প্রতি, ছবির শেষ মুহূর্তের কাজ সারতে শহরে এসেছিলেন শান্তনু। তার মাঝেই সময় দিলেন আনন্দবাজার অনলাইনকে। বললেন, ‘‘ইংরিজি ও হিন্দির পাশাপাশি ভাঙা বাংলায় কথা বলব। আশা করি, বুঝতে অসুবিধা হবে না।’’
কলকাতার ছেলে শান্তনু। কিন্তু বাংলা ছবিতে পা রাখতে এতটা সময় নিলেন কেন তিনি? হেসে বললেন, ‘‘কারণ, আমার কাছে কোনও প্রস্তাব আসেনি।’’ শান্তনু মনে করেন, তিনি অভিনয় জগতের মানুষ নন। তাই বলিউডের অন্দরে তাঁর বিশেষ একটা যোগাযোগ নেই। তুলনায় টলিউডের সঙ্গে সেই দূরত্ব আরও বেশি। শান্তনু জানেন, তিনি সাবলীল বাংলা বলতে পারেন না। বললেন, ‘‘আমার বাংলা ছবিতে কাজের ইচ্ছা দীর্ঘ দিনের। চিত্রনাট্য পেলে অভ্যাস করে বাংলা সংলাপও বলতে পারব। কিন্তু প্রথম সুযোগটা সব সময়েই মনের মধ্যে আলাদা জায়গা দখল করে থাকবে।’’
অল্প বাজেট, স্বল্প দিন— বাংলা ছবি তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রয়েছে শান্তনুর। তাই তাঁকে ছবিতে নিলে নির্মাতাদের সিদ্ধান্তও ভাবায় শান্তনুকে। প্রতিমের হিন্দি ওয়েব সিরিজ় ‘টুথ পরী’তে অভিনয় করার সময়েই বাংলায় কাজের ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেন শান্তনু। সেই মতো ‘চালচিত্র’ ছবির প্রস্তাব আসতে তাই আর দেরি করেননি তিনি। অভিনেতা জানালেন, মুম্বইয়ে সতীর্থেরাও তাঁর টলিউড অভিষেক নিয়ে উচ্ছ্বসিত। ছবির ঝলকও পছন্দ হয়েছে তাঁদের।
নাচের সূত্রেই শান্তনু এক সময় প্রচারের আলোয় চলে আসেন। এই ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি টোটার সঙ্গে পা মেলাতেও দেখা যাবে তাঁকে। ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কহানি’ ছবিতে টোটার নাচ শান্তনুর মন জয় করে নেয়। কিন্তু অভিনেতা বললেন, ‘‘টোটাস্যরও এই ছবিতে অনেক দিন পর নাচলেন। আমরা একসঙ্গে খুব ভাল একটা সময় কাটিয়েছি।’’
‘গঙ্গুবাঈ কাথিয়াওয়াড়ি’ ছবিতে আলিয়া ভট্টের বিপরীতে শান্তনুর অভিনয় দর্শকের নজর কাড়ে। তার পর থেকে তাঁর জীবন কতটা বদলেছে? শান্তনু জানালেন, ওই ছবির পর তিনি যে পরিচিতি পেয়েছেন, তা এক কথায় অকল্পনীয়। তাঁর কথায়, ‘‘এখানেই হয়তো মাধ্যম হিসেবে নৃত্যের থেকে সিনেমার শক্তি আরও কিছুটা বেশি। আগে বিষয়টাকে অবজ্ঞা করতাম। এখন গুরুত্ব বুঝতে পারি।’’
শান্তনু জানালেন, অভিনয়ে সাফল্য এলেও সেই স্রোতে তিনি গা ভাসাতে রাজি নন। হয়তো সেই জন্যই ‘গঙ্গুবাঈ...’-এর পর ‘অরো মে কঁহা দম থা’র জন্য দু’বছর সময় নিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমি সব সময়েই নতুন ধরনের চরিত্রের সন্ধানে থাকি। তাতে সময় লাগলে ক্ষতি নেই। আগামী দিনে জটিল থেকে জটিলতর চরিত্রে অভিনয়ের ইচ্ছে রয়েছে।’’ অবসরে নিজে চিত্রনাট্য লিখছেন শান্তনু। তবে সেই প্রজেক্ট বাস্তবায়িত হতে এখনও সময় লাগবে বলেই জানালেন তিনি।
উত্তর কলকাতার কুমোরটুলি পার্কে শৈশব কেটেছে শান্তনুর। কিন্তু কাজের চাপে এখন আর খুব বেশি কলকাতায় আসতে পারেন না শান্তনু। তবে চেষ্টা করেন কাজ বা কাজের বাইরেও বছরে অনন্ত দু’বার শহরে পা রাখার। চেষ্টা করেন এক বার অন্তত কালীঘাট মন্দিরে যেতে। শহরের মানুষ তাঁকে প্রকাশ্যে এখন চিনতে পারেন? হেসে বললেন, ‘‘অনেকেই সেলফি তুলতে চান। তবে আমি শহরে এলে সাধারণত গভীর রাতে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়াই।’’ কেউ চিনতে পারলে পথচারীদের কাছে ‘আমাদের ছেলে’ বিশেষণটি শুনতে পছন্দ করেন বলেই জানালেন শান্তনু।
বাংলা থেকে দূরে থাকলেও সময় পেলে ওটিটিতে বাংলা ছবি দেখেন শান্তনু। তবে সব ছবির নাম মনে রাখতে পারেন না। বললেন, ‘‘আমার বাবা বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন। বাংলা ভাল জানেন এবং বাংলা ছবির খোঁজখবরও রাখেন। বাবার থেকেও ভাল বাংলা ছবির পরামর্শ পাই। সেখানে প্রসেনজিৎ স্যর থেকে শুরু করে জিৎ— অনেকেই রয়েছেন।’’
মুম্বইয়ে সুযোগ পাওয়ার পরে, নিজের জায়গা ধরে রাখা সবচেয়ে কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। পনেরো বছরেরও বেশি সময় মুম্বইয়ে কাটিয়ে নতুনদের আলাদা করে কোনও পরামর্শ দিতে নারাজ শান্তনু। কারণ, তিনি পড়াশোনা সূত্রেই মুম্বই পাড়ি দেন। তার পর নাচের সুযোগ আসা এবং তা গ্রহণ করা— সব কিছুর নেপথ্যে একটা যোগসূত্র কাজ করে বলেই বিশ্বাস করেন শান্তনু। বললেন, ‘‘প্রত্যেকের সফর এবং লড়াইটা আলাদা। আমার জন্য যেটা ফলপ্রসূ হয়েছে, সেটা অন্য কারও ক্ষেত্রে কাজ না-ও করতে পারে।’’