বিদ্যা বালন। ছবি: সংগৃহীত।
বিদ্যা বালনের পরবর্তী ছবি ‘দো অউর দো পেয়ার’ মুক্তি পাচ্ছে ১৯ এপ্রিল। সেখানে তাঁর উল্টো দিকে নায়ক প্রতীক গান্ধী। বিদ্যার কোন ধরনের ছবিতে অভিনয় করতে ভাল লাগে? অবসর সময়ই বা কী করতে ভালবাসেন বিদ্যা? তাঁর মুখ থেকেই উত্তর শুনল আনন্দবাজার অনলাইন।
প্রশ্ন: মনে হয় কি আজ পর্যন্ত যে যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন তা আপনার অভিনয় ক্ষমতাকে তুলে ধরেছে?
বিদ্যা: সৌভাগ্যবশত আমার কোনও দিন এমন চিন্তা মাথাতেও আসেনি। যে রকম চরিত্রে অভিনয় করেছি, সব সময় চেষ্টা করেছি সেই চরিত্রের মধ্যে দিয়ে নিজের ব্যক্তিত্বের অজানা দিক ফুটিয়ে তুলতে। কাজের জীবনে আমার প্রতিভা অনুযায়ী আমাকে কাজ দেওয়া হয়নি, এ রকম অভিজ্ঞতা আমার কোনও দিন হয়নি।
প্রশ্ন: রোম্যান্টিক ধারার ছবিতে অনেক দিন পরে, কোনও বিশেষ কারণ?
বিদ্যা: আমি প্রায় ১০ বছর বাদে রোম্যান্টিক ধারার ছবিতে ফিরলাম। দর্শক হিসেবে আমার নিজেরও মারপিট আর হিংসাত্মক ধারার ছবি দেখে দেখে একঘেয়েমি এসে গিয়েছিল। তাই আমি চাইছিলাম একটা হালকা রোম্যান্টিক কমেডি ছবি করতে। কিছু দিন আমি এমনই একটু হালকা ধরনের ছবি করতে চাই।
প্রশ্ন: বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে আপনার কী অভিমত?
বিদ্যা: আমি এটা মানি যে বিয়ের বাইরেও প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হতে পারে। (হেসে) আমি যদি এই বিষয়টাকে একটা খাবারের সঙ্গে তুলনা করি, তা হলে বলব, রোজ রোজ ডাল-ভাত খেয়ে আমাদের একটা একঘেয়েমি চলে আসে। তাই আমরা হাক্কা নুডল্সের দিকে ঝুঁকি। কিন্তু একটা সময় আসে, যখন আমরা খাঁটি ডাল-ভাতের মর্ম বুঝি। আর আমাদের ছবিতে শুধু বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক দেখানো হয়নি। এর বাইরের বিষয়ও আছে। নিজেদের প্রেমিক-প্রেমিকাকেও আসলে আমরা প্রতারণা করি।
প্রশ্ন: এই ছবিতে আপনি প্রথম বার এক জন তামিল ব্রাহ্মণ পরিবারের মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন, কী বলবেন?
বিদ্যা: আমি ভীষণ খুশি। আমি একজন পলঘট আয়ারের ভূমিকায় অভিনয় করছি। আমি নিজে এক জন পলঘট আয়ার। উটি শহরে বড় হওয়া, প্রচণ্ড একগুঁয়ে একটি মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। এমনই একটি মেয়ে, যে নিজের স্বামীকে (চরিত্রাভিনেতা প্রতীক গান্ধী) খুব ভালবাসে, কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়, সে বিবাহিত সম্পর্কের বাইরে গিয়ে ভালবাসা খোঁজে। এ ভাবেই তো বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
প্রশ্ন: আপনি সেই সব দম্পতিকে কোনও পরামর্শ দিতে চান, যাঁরা বিয়ের বাইরে ভালবাসা খুঁজছেন ?
বিদ্যা: যদি সেই পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই তৈরি হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে আমি কিছু বলব না। তাঁদের উচিত মনোবিদের কাছে যাওয়া।
প্রশ্ন: কোনও দম্পতি যাতে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে না পড়ে, তার জন্য কী পরামর্শ দেবেন?
বিদ্যা: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, স্বামী-স্ত্রীর উচিত বেশি করে একে-অপরের সঙ্গে সময় কাটানো। আমি আর সিদ্ধার্থ (রায় কপূর) একে-অপরকে অনেকটা করে সময় দিই। আর শুধু একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়া নয়, খুব ছোট ছোট জিনিস, যেমন শহরে নতুন রেঁস্তরা খুললে, আমরা সেখানে চলে যাই। মোদ্দা কথা, চেষ্টা করি একে-অপরের জীবনে কী হচ্ছে সেটা নিয়ে আলোচনা করার। তর্ক হোক ক্ষতি নেই, কিন্তু দু’জনে মিলে একটা সমাধানে আসতে চেষ্টা করি। আর আমি বরাবর খুব সৎ, আমার যেটা মনে হয় সেটা আমি সোজাসুজি বলে দিই।
প্রশ্ন: এই প্রসঙ্গ এল বলে মনে হল, রণবীর সিংহ যখন নিজের নগ্ন ফোটোশুট করিয়েছিলেন, বি-টাউন থেকে একমাত্র আপনি মন্তব্য করেছিলেন যে, আপনার সেটা দেখে ভাল লেগেছিল। এই বিষয়ে কী বলবেন?
বিদ্যা: এখনও একই কথা বলব। আপনি যে কোনও প্রাপ্তবয়স্কদের পাঠ্য পত্রিকা দেখুন, ‘প্লেবয়’ বা ‘ডেবোনেয়র’,আমরা সব সময় মহিলাদের নগ্ন ছবি দেখি। সেটা কোনও পুরুষ বা সমকামীর ভাল লাগতে পারে, কিন্তু আমাদের মতো যাঁরা, কী করবেন তাঁরা? আমাদেরও শখ থাকতে পারে, ইচ্ছা থাকতে পারে। তাই যা বলেছিলাম, এখনও তাই বলব। আমার ভাল লেগেছিল। নগ্ন মহিলাদের আমরা অনেক বাহবা দিয়েছি। এখনও হামেশাই দিয়ে থাকি। এ বার মনে হয় সময় এসে গিয়েছে নগ্ন পুরুষদেরও বাহবা পাওয়ার।
প্রশ্ন: এই ছবির প্রচারে আপনি অনেক নতুন নতুন শব্দ শিখেছেন, নতুন প্রজন্ম নিয়ে কী বলবেন?
বিদ্যা: একটা কথা প্রথমেই বলব যে আমি খুব খুশি, কারণ আমি এই সময়ে একা নই। এখন তো একটা নতুন শব্দ শুনি, ‘সিচুয়েশনশিপ’। এখন আমরা সম্পর্কগুলোকে কী ভাবে ব্যবহার করি! যেন অনলাইন খাবার অর্ডার করছি। যদি আপনার খাবার অর্ডার করা খাবার আপনার পছন্দ না হয়, তা হলে অন্য একটা খাবার চলে আসে। এখনকার প্রজন্ম খুব বিভ্রান্ত থাকে, প্রতিশ্রুতি দিতে ভয় পায়। আর তাই সম্পর্কগুলি টেকে না।
প্রশ্ন: সন্ধিল রামামূর্তি আর প্রতীক গান্ধী– এঁদের দু’জনের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা…
বিদ্যা: সন্ধিল ভীষণ ভাল দেখতে আর খুব কম কথা বলে। সেটে সব মহিলা ওকেই দেখতে থাকত, আর প্রতীকের তাতে খুব খারাপ লাগত। মাঝেমাঝেই প্রতীক বলত, ‘‘ওকে এখন কেউ দেখবে না (হেসে)।’’ সন্ধিল এখনও শিখছে হিন্দি ছবিতে কী ভাবে কাজ হয়। আর অন্য দিকে প্রতীক সম্বন্ধে আমি ভাবতাম ‘স্ক্যাম’-এর হর্ষদ মেহতার থেকে আমাদের ছবির অনির (ছবিতে প্রতীকের চরিত্রের নাম) চরিত্র কতটা আলাদা। যে ভাবে প্রতীক এই চরিত্রে অভিনয় করেছে, সেটা খুব বড় কৃতিত্ব।