শৌনক সেনের ‘অল দ্যাট ব্রিদস’ কি পারবে শেষ লড়াই লড়তে? ছবি: সংগৃহীত।
অস্কারে আবার বাঙালি! বঙ্গতনয় শৌনক সেনের তথ্যচিত্র ‘অল দ্যাট ব্রিদস’ মনোনীত হয়েছে অস্কার পুরস্কারের মঞ্চে লড়াইয়ের জন্য। এর আগে বাঙালির অস্কারপ্রাপ্তি বলতে সত্যজিৎ রায়ের সারা জীবনের সম্মান। তাতে অবশ্য প্রতিযোগিতার কোনও অবকাশ ছিল না। সত্যজিতের আজীবনের কাজের স্বীকৃতির জন্য তাঁকে ওই পুরস্কার দিয়েছিল অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার্স।
অসুস্থ থাকায় সত্যজিৎ ওই পুরস্কার নিতে লস অ্যাঞ্জেলস যেতে পারেননি। হাসপাতালের রোগশয্যায় শুয়ে তিনি গ্রহণ করেছিলেন মুঠোয় ধরেছিলেন অস্কারের ট্রফি। অসুস্থ অবস্থাতেই দিয়েছিলেন অস্কার প্রাপ্তির ভাষণ।
তবে ২০২১ সালেও বঙ্গসন্তান সুস্মিত ঘোষের তৈরি তথ্যচিত্র ‘রাইটিং উইথ ফায়ার’-ও সেরা তথ্যচিত্রের লড়াইয়ে মনোনীত হয়েছিল। তবে শেষ বিচারে সেটি বিবেচিত হয়নি পুরস্কারের জন্য।
অস্কারের মঞ্চে বাঙালির উপস্থিতি বলতে এখনও পর্যন্ত এই দু’টিই। তা ছাড়া এত বছর বিশ্ব সিনেমার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্মানের মঞ্চে বাঙালির উপস্থিতি ছিল না। তবে ভারতীয় ছবি অস্কারে মনোনীত হয়েছে। আমির খানের ‘লগান’ গিয়েছিল অস্কারে। কিন্তু প্রতিযোগিতায় টিকতে পারেনি। আবার ড্যানি বয়েলের অস্কারজয়ী ছবি ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’-এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন এ আর রহমান, অনিল কপূরের মতো ভারতীয়। কিন্তু শৌনক একে ভারতীয়। তায় বাঙালি। শেষ বিচারে তাঁর তথ্যচিত্র পুরস্কার পাবে কি না, তা বিচারকদের বিবেচ্য। কিন্তু অস্কারে মনোনয়ন পাওয়ার কৃতিত্বও বিশেষ কম নয়। যদিও তাঁর ছবির ভাগ্য সুস্মিতের তথ্যচিত্রের মতোই হবে কি না, তা সময় বলবে।
দিল্লির প্রত্যন্ত গ্রাম ওয়াজিরাবাদে একটি পরিত্যক্ত বেসমেন্টে থাকেন দুই ভাইবোন। মহম্মদ সৌদ এবং নাদিম শাহজাদ। তাঁদের জীবন ঘিরেই এগোয় ছবির কাহিনি। তবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মহম্মদ এবং নাদিমের অদ্ভুত নেশা। আহত পাখি, বিশেষত কালো চিল উদ্ধার করে শুশ্রূষা করেন তাঁরা। তারই সূত্রে শৌনকের ছবির গল্প মোড় নেয় অন্য খাতে।
দিল্লিবাসী শৌনকের এটি দ্বিতীয় ছবি। ২০১৫ সালে ‘সিটিজ় অব স্লিপ’ নামে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেছিলেন জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী। কান-এর মঞ্চজয়ের আগে আরও কয়েকটি বিখ্যাত চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে এসেছিল শৌনকের ছবি। তার পরেই সেটি মনোনীত হল অস্কারে।
প্রসঙ্গত, কান চলচ্চিত্র উৎসবেও এই বাঙালি পড়ুয়ার তৈরি তথ্যচিত্র একমাত্র ভারতীয় ছবি হিসেবে ২০২২ সালের ‘ল’ওয়েল ডি’অর’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিল। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বাঙালি ছাত্র শৌনকের তৈরি ছবিকে ওই পুরস্কারের জন্য বিছে নিয়েছিল ফরাসি লেখকদের একটি গোষ্ঠী। ২০১৫ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবের সহযোগিতায় ফরাসি লেখকদের ওই গোষ্ঠী ‘ল’ওয়েল ডি’অর’ পুরস্কার দেওয়ার রীতি চালু করেছিল। যার আর এক নাম, ‘গোল্ডেন আই অ্যাওয়ার্ড’। সেই সম্মানই পেয়েছেন শৌনক। ৯০ মিনিটের তথ্যচিত্রটি দেখেছিলেন পোল্যান্ডের চিত্র পরিচালক অ্যাগনিয়েস্কা হল্যান্ড, মরক্কোর লেখক তথা নির্দেশক হিশাম ফালা। তাঁরা ছাড়াও বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন খ্যাতনামী সাহিত্যিক, অভিনেতা এবং সাংবাদিক।
শৌনকের ওই তথ্যচিত্রকেই কান-এ সেরা হিসাবে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে ‘ল’ওয়েল ডি’অর’-এর ওয়েবসাইটে এক বিচারক লিখেছিলেন, ‘এই পুরস্কার এমন এক ছবিকে দেওয়া হয়েছে যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে এই ধ্বংসাত্মক দুনিয়ায় প্রতিটি জীবনের মূল্য রয়েছে এবং প্রতিটি ছোট পদক্ষেপই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যামেরা হাতে তুলে নিয়েও আপনি একটি পাখির জীবন বাঁচাতে পারেন।’ আর্থিক মূল্যে এই পুরস্কারের সঙ্গে শৌনকের ঝুলিতে এসেছিল ৫,০০০ ইউরো। ভারতীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৪.১৬ লক্ষ টাকা।
পাশাপাশিই, স্বপ্নপূরণ করে ইতিহাস গড়ল ‘আরআরআর’। অস্কারের মঞ্চে সেরা গানের বিভাগে মনোয়ন অর্জন করল ছবির গান ‘নাটু নাটু’। সঙ্গীত পরিচালক এম এম কীরাবাণী পরিচালিত এই গান আগেই স্বীকৃতি পেয়েছে গোল্ডেন গ্লোব ও ক্রিটিক্স চয়েস অ্যাওয়ার্ডের মঞ্চে। এ বার লরেল মুকুটের সম্মান উঠল ‘আরআরআর’-এর মাথায়। অস্কারের মঞ্চে মনোনয়ন অর্জন করে প্রথম তেলুগু ছবি হিসাবে ইতিহাসের পাতা নাম তুলল এস এস রাজামৌলির ‘আরআরআর’।
সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রের বিভাগে মনোনীত হল ‘দ্য এলিফ্যান্ট হুইসপারার’। তথ্যচিত্রের পরিচালক, ভারতীয় চিত্রসাংবাদিক কার্তিকী গনসালভেস। অন্যদিকে, একটুর জন্য লড়াই থেকে ছিটকে গেল গুজরাতি ছবি ‘ছেলো শো’। পান নলিন পরিচালিত এই ছবিই ছিল অস্কারের মঞ্চে ভারতের অফিশিয়াল এন্ট্রি। সেরা বিদেশি ভাষার ছবির বিভাগে মনোনয়ন হাতছাড়া হল ‘ছেলো শো’-এর।