পল্লবী শর্মা। ছবি: ফেসবুক।
যাঁরাই মেগা সিরিয়াল করেন তাঁরা জানেন, কতটা চাপ থাকে কাজের। আর যদি কেন্দ্রীয় চরিত্র হন, তা হলে সময় প্রায় থাকে না। হয়তো সপ্তাহে একটা দিন পাওয়া যায় তখন রান্না করব, না কি বাগানের যত্ন নেব, এই ভেবেই দিন কেটে যায়। কলকাতায় একা থাকি। তবে দাদা-বৌদি আছেন। কিন্তু, নিজের সঙ্গে সময় কাটাতেই বেশি ভাল লাগে। উৎসবের দিনগুলোতে বাবা-মাকে বড্ড মিস্ করি।
তবে আমি মনে করি, যে মানুষ জীবনে একা চলতে পারে, তার থেকে বেশি মনের জোর আর কারও নেই। আমরা অনেক সময়ই ভাবি, একা ঘুরতে পারব না, কিংবা একা একা কোথাও গিয়ে খেতে পারব না। কিন্তু যে একা এই সবগুলো করতে পারে, তার কোনও ভয় থাকে না। আমার জীবনে পিছুটান নেই। তাই কোনও ভয় নেই। খুব ছোট বয়সে বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলি। যেটা পৃথিবীতে সব থেকে সুরক্ষিত জায়গা, সেটাই ফাঁকা আমার জীবনে। তার পর থেকেই বুঝে যাই, আমাকে একা চলতে হবে। তাই আমি জীবনে যতটুকু পাচ্ছি, সেটাই উপরি পাওনা মনে হয়। আজ কাজ করছি, দর্শকের এত ভালবাসা পাচ্ছি, সেটা মনে হয় বাবা-মায়ের আশীর্বাদ আছে বলেই হচ্ছে। যদিও সময় বদলেছে এখন। উৎসবের ধরন পাল্টেছে। বর্তমানে সময়ে আমরা সকলেই কমবেশি অবসাদগ্রস্ত। সেই কারণেই হয়তো ছুতো খুঁজি আনন্দ উদ্যাপনের। তাই জন্যেই হয়তো ইদ থেকে পয়লা বৈশাখ কিংবা নিউ ইয়ার, সবেতেই আনন্দ খুঁজে বেড়াই।
তবে ছোটবেলার পয়লা বৈশাখের সঙ্গে বর্তমান সময়ের কোনও মিল নেই আমার জীবনে। কারণ ছোটবেলায় বাবার হাতে ধরে সোনার দোকানে যেতাম। মিষ্টির বাক্স সংগ্রহ করতাম। শুধু কী তাই! ওই দিনটাই কত আনন্দ হত! কত ধরনের খাবার খাওয়ার স্বাধীনতা পেতাম। একই দিন আইসক্রিম থেকে ফুচকা, সবই খেতাম। বকাঝকার থেকে ছাড় ছিল ওই দিনটাতে। তবে বাড়িতে লক্ষ্মী-গণেশ পুজো হত। অধীর অপেক্ষায় থাকতাম, নতুন জামা পরার ব্যাপারে।
তবে এখন আর পুরনো দিনের মতো কিছুই নেই। শুটিং থাকে আমার, তার একটা চাপ। তবে শুটিংয়ে এসে গোটা টিম মিলে নিজেদের মতো করে আনন্দ করি। দুপুরে দারুণ একটা খাওয়াদাওয়া হয়। পুরনো জামা নয়, ছোটবেলার মতো নতুন জামা পরেই এই দিনটায় শুটিংয়ে আসি। যদিও ছোটবেলার সারল্যটা মনে হয় হারিয়ে গিয়েছে। এখন তো আর মিষ্টির দোকানে গিয়ে মিষ্টির প্যাকেট নিতে পারব না। এখন একটা ‘ব্যাগেজ’ চলে এসেছে। আমি ‘পর্ণা’ কিংবা আমি ‘জবা’। মানুষ অন্য ভাবে আমার সঙ্গে ব্যবহার করে। পল্লবী হয়ে যে আন্তরিকতাটা পেতাম, সেটায় বড্ড চাকচিক্য জুড়ে গিয়েছে। আগে যেমন এই দিনগুলোতে লোকের বাড়িতে গেলে মিষ্টি দিত। এখন যেন ভেবেই নেয় যে, আমি অভিনেত্রী, ডায়েট করি তাই ‘সুগার ফ্রি মিষ্টি’ দিতে হবে। তবে ছোটবেলায় যত না বাবা-মাকে মিস্ করতাম, এখন যেন বয়স বাড়ার সঙ্গে তাঁদের মনে পড়াটাও বেড়ে গিয়েছে।
মিলেনিয়াল নয় জেন জ়ি প্রজন্মের অভিনেত্রী। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালির পোশাক পরার ধরন থেকে বাংলা ভাষায় কথা বলার মধ্যে অনেক বদল এসেছে। বর্তমান সময়ে আমরা এক দিকে বৈশাখ উদ্যাপনের কথা বলছি, একই সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথা বলতে লজ্জা পাচ্ছি। আমরা ভাবি, ইংরেজিতে কথা বললেই ভীষণ স্মার্ট লাগবে। বাংলায় কথা বলছে মানে সে ‘অশিক্ষিত’। আসলে এটা এই প্রজন্মের ভুল ধারণা। আমরা বাঙালি হয়ে নিজের ভাষাকে নিয়ে গর্ববোধ যদি না করি, তা হলে তো মুশকিল! শাড়ি পরব, কিন্তু তাতে থাকবে পাশ্চাত্যের ছোঁয়া! হয়তো ‘হট ড্রেস’ পরলেই ‘আধুনিকা’ লাগবে, এই ধারণাটা ভাঙতে হবে।
আসলে এখন আমাদের জীবন ও সংস্কৃতি, দুই-ই পাল্টে যাচ্ছে খুব দ্রুত। তবে আমার মধ্যে জেন জ়ি-র ওই ছাপটা নেই। কারণ, আমি মানুষটা সাদামাঠা। আসলে টাকাপয়সা, নাম-খ্যাতি সব থাকবে। আবার একটা সময় চলে যাবে। নিজেকে সর্বেসর্বা ভাবাটা বন্ধ করতে হবে মানুষকে।