Rituparna Sengupta birthday

শর্মিলা ঠাকুরের প্রিয় কই মাছ রাঁধার দায়িত্ব নিয়েই চমৎকার একটা শট দিয়ে ফেলল ঋতু

সকালে ‘পারমিতার একদিন’, রাতে ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, লুকিয়ে শুটিং সেরেছিল ঋতু। অভিনেত্রী ঋতুপর্ণাকে বোঝার জন্য এই তথ্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisement
সুমন ঘোষ
সুমন ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ১৪:১৯
Image of Rituparna Sengupta

৭ নভেম্বর ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের জন্মদিন। ছবি: সংগৃহীত।

ঋতুর সঙ্গে আমার প্রথম কবে আলাপ হয়েছিল আজ আর মনে নেই। ঋতু চিরকালীন। ফিরে ফিরে আসে। আর ফিরে আসা মানেই ঋতুর কাজ। ওর মতো কাজপাগল খুব কম মানুষ দেখেছি।

Advertisement

বেশ অনেক দিন আগে একটা ছবিতে ঋতুর সঙ্গে কাজ করার কথা হয়েছিল। ছবির প্রস্তাব নিয়ে আমিই গিয়েছিলাম ওর বাড়িতে। ওর বাবার সঙ্গে সে বার আলাপ হয়েছিল, কিন্তু কাজটা হয়নি। তার পর তেমন সুযোগ হয়নি ওকে নিয়ে ছবি করার। ঋতুর সঙ্গে আমার প্রথম কাজ আমার ‘বসু পরিবার’-ছবিতে। তত দিনে আমার ছ’-সাতটা ছবি বানানো হয়ে গিয়েছে।

অভিনেত্রী হিসাবে ঋতুর ব্যাপ্তি কতখানি তা বলতে গেলে একটা মজার গল্প বলতেই হয়। এখন হয়তো অনেকেই জানেন, কিন্তু দীর্ঘ দিন সেটা গোপন ছিল। তখন ‘পারমিতার একদিন’-এর শুটিং চলছে। সারা দিন ঋতু কাজ করছে অপর্ণা সেনের সঙ্গে। রাতে কোথায় যায়, কেউ জানে না। দীর্ঘ দিন পরিচালকও জানতে পারেননি। আসলে রাতে ঋতু ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’-এর শুটিং করেছিল। চুক্তিভঙ্গ হয়েছিল কি না জানি না। কিন্তু আজ এই তথ্যটা অভিনেত্রী ঋতুপর্ণাকে বোঝার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। দু’টি সম্পূর্ণ বিপরীত ধারার ছবিতে একই সঙ্গে অভিনয় এবং দু’টি ছবিই নিজ নিজ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সফল! তাই নতুন করে ঋতুর নিজেকে প্রমাণ করার কিছু নেই।

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, তরুণ মজুমদারের পাশাপাশি একই তালে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ছবি করেছেন বীরেশ চট্টোপাধ্যায়, স্বপন সাহার তৈরি করা নিতান্ত বাণিজ্যিক ছবিতে। দু’টি ক্ষেত্রেই ঋতু যে সফল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আজও কাজ করে চলেছে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো নতুন প্রজন্মের পরিচালকদের সঙ্গে। একই ভাবে। আসলে ঋতু খুব ভাল বুঝতে পারে কোন পরিচালক অভিনয়ের ক্ষেত্রে কী চান। ও নিজেও খুব ভাল মতো সেই দাবিটা পূরণ করে দিতে পারে। ‘পুরাতন’ করতে গিয়ে শর্মিলা ঠাকুর বার বার ঋতুর কর্মোদ্যমী মনোভাবের কথা বলতেন। শর্মিলার কই মাছ প্রিয়। সেটা বাড়ি থেকে ঠিক সময় রেঁধে আনা থেকে রূপটান ছাড়া ঝট করে চরিত্র হয়ে ওঠা… না দেখলে লিখে বোঝানো যাবে না। অভিনয়ে ওর জুড়ি মেলা ভার।

Image of Rituparna Sengupta and Suman Ghosh

পরিচালক সুমন ঘোষের সঙ্গে ‘বসু পরিবার’ ছবির শুটিংয়ে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। ছবি সংগৃহীত।

জন্মদিনে ঋতুকে আলাদা করে উপহার দেওয়ার কিছু নেই। ‘পুরাতন’ই আমার উপহার। শীঘ্রই মুক্তি পাবে। এটা একটা স্বপ্নের ছবি আমার কাছে, যেখানে শর্মিলা ঠাকুর কাজ করেছেন। এ ছবির কাজ করতে গিয়ে দেখেছি কী ভাবে ওঁর সঙ্গে ঋতুর একটা মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। শর্মিলা ঠাকুর বেছে কাজ করেন। যেমন- তেমন ছবিতে কাজ করার কথাই নয় তাঁর। ঋতুই আমাকে বলেছিল, শর্মিলা কাজ করতে চান বাংলা ছবিতে। ও আমাকে বলেছিল, এ রকম একটা গল্প নিয়ে চিত্রনাট্য তৈরি করতে।

আমরা টিটাগড় জুটমিলে শুটিং করছিলাম। প্রায় পিকনিকের মতো হয়ে গিয়েছিল পরিস্থিতি। শর্মিলা বাইরের খাবার খাবেন না। তাই বিশেষ ব্যবস্থা করতেই হত। ঋতু নিজের বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসত। আমার জন্যও খাবার আসত ঋতুর বাড়ি থেকেই। প্রতিদিন দুপুরেই বসত গল্পের আসর। সব দিকে নজর থাকত ঋতুর। আজকাল মনে করলেই অবাক লাগে, মাত্র বছরখানেক আগে লুক টেস্ট হয়েছিল। সব কেমন দ্রুত হয়ে গেল!

‘বসু পরিবার’-এর কথাও লিখতে ইচ্ছে করছে। তারকাখচিত ছবি— সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অপর্ণা সেন, লিলি চক্রবর্তী, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, যিশু। মহিষাদল রাজবাড়িতে শুটিং হচ্ছিল। ঋতু ওর গোটা পরিবার নিয়ে গিয়ে উপস্থিত, ওর মা, শাশুড়িমা, মেয়ে সকলে। অথচ কাজের ক্ষেত্রে কোথাও এতটুকু গাফিলতি দেখা যায়নি ওর। রাত দেড়টা-দু’টো পর্যন্ত শট দিয়ে গিয়েছে ঋতু। ওর মেয়ে সেটেই এক পাশে ঘুমিয়ে পড়ত। শ্বশুরবাড়ি, মা, পরিবার— এই যে সঙ্গে নিয়ে চলা, মিশিয়ে দেওয়া এগুলো ওর বিশেষ গুণ। ঋতুর পরিসর অনেক বড়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখেছি ও তারকা কম, মানুষ হয়ে থেকে গিয়েছে।

আজ ওর জন্মদিনে আমার শুভেচ্ছাবার্তায় শুধু একটা কথাই বলতে চাই, ঋতুর মধ্যে অসম্ভব ইতিবাচকতা রয়েছে, সেটা যেন সারা জীবন বজায় থাকে। এই ইতিবাচক ওর আশপাশের মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। ঋতুর মতো একজন নায়িকা যে প্রায় তিন দশক ধরে নিজের জায়গা ধরে রেখেছে, বিরল ভাবে ধরে রেখেছে, তার জীবনে যে উত্থান-পতন থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। সে সবের মধ্যেও এই ইতিবাচক মনোভাবই ওকে ঋতুপর্ণা করে তুলেছে।

ঋতু সব সময় নিজেকে ব্যস্ততায় ডুবিয়ে রাখে। হয়তো এটা ওকে করতেই হয়। তবু তার মধ্যে নিজের জন্য সময় বার করা জরুরি। কিছুটা সময় বার করে নিজের জন্যও রাখো ঋতু। কোথাও ঘুরে এসো। মোবাইল ফোনটা কিছু ক্ষণের জন্য নিজের থেকে দূরে রাখো।

(সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখিত।)

Advertisement
আরও পড়ুন