লীনা গঙ্গোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
এক দিকে আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ। অন্য দিকে, টলিপাড়ায় একের পর এক নারীনিগ্রহের ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে। রবিবার অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্র একজন দক্ষিণী পরিচালকের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করেছেন। ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও মহিলা অসম্মানিত হলে তাঁর কী করা উচিত? পরামর্শ দিলেন চিত্রপরিচালক তথা রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়।
টলিপাড়ায় নারী হেনস্থার ঘটনা নতুন নয়। অনেক ক্ষেত্রে মহিলারা এগিয়ে এসে অভিযোগ করতে ভয় পান। তবে বর্তমান সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে নারী ও পুরুষেরা প্রতিবাদী বলেই মনে করেন লীনা। তিনি বললেন, ‘‘কিন্তু মুখ বন্ধ করে থাকলে তো বিষয়গুলো জানা যাবে না! এগিয়ে এসে অভিযোগ না জানালে কোনও ফোরাম তাঁকে সাহায্য করতে পারবে না।’’
আবার হেনস্থার ক্ষেত্রে অন্য রকম অভিজ্ঞতারও সাক্ষী থেকেছেন লীনা। তিনি জানালেন, অনেক সময়েই অভিযোগ জানানোর পর নির্যাতিতা সেই অভিযোগ তুলে নিতে চান। লীনার কথায়, ‘‘ইন্ডাস্ট্রি এবং তার বাইরেও দেখেছি, কেউ বলেন, ‘আর এগোতে চাই না’। কেউ অপেক্ষা করতে বলেন। অনেকে আবার পরবর্তী শুনানিতে উপস্থিত হতে চান না।’’ এখানেই উঠে আসে ‘প্রভাব’ খাটানোর তত্ত্ব। লীনার মতে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারীসুরক্ষা আইনে অনেক পরিমার্জন করা হয়েছে। এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের অভিযোগকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েই দেখা হয়। তাই ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
কয়েক বছর আগে সমাজধ্যমে ‘হ্যাশট্যাগ মি টু’ আন্দোলন শুরু হয়। লীনা জানালেন, এই ধরনের ঘটনায় প্রকাশ্যে না জানিয়েও অভিযোগ করা যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সমাজমাধ্যমে জানালে তো জনমত তৈরি হয়। পক্ষে-বিপক্ষে মতামতের আদানপ্রদান শুরু হয়। কিন্তু এই ভাবে তো তিনি ন্যায়বিচার পাবেন না! তাই নির্দিষ্ট ফোরামে অভিযোগ দায়ের করা উচিত।’’
সম্প্রতি টলিপাড়ার এক পরিচালকের বিরুদ্ধে মহিলা কমিশনে অভিযোগ দায়ের করেছেন এক অভিনেত্রী। টলিপাড়ায় আর্টিস্ট ফোরাম বা ফেডারেশনে অভিযোগ জানালেও প্রয়োজনে মহিলা কমিশন হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে জানালেন লীনা। বললেন, ‘‘এ ছাড়াও মহিলা কমিশন চাইলে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেও কোনও ঘটনায় হস্তক্ষেপ করতে পারে। কোনও ঘটনায় পুলিশি তদন্ত ঠিক মতো না হলেও রিপোর্ট চাইতে পারে।’’ তবে,আদালতে বিচারাধীন কোনও মামলার ক্ষেত্রে মহিলার কমিশনের এক্তিয়ার নেই বলেই জানালেন লীনা।
লীনার মতে, মহিলারা অভিযোগ জানাতে চাইলে বিব্রত হওয়ার কোনও কারণ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘অসম্মান যিনি করছেন, দায় তো তাঁর। যিনি অসম্মানিত হচ্ছেন, তাঁর তো লজ্জা পাওয়া উচিত নয়!’’ মহিলারা লোকলজ্জার খাতিরে চুপ করে থাকলে অপরাধী আরও সাহসী হয়ে উঠবে বলেই মনে করেন লীনা।
লীনা জানালেন, টলিপাড়ায় মহিলাদের হেনস্থার ঘটনায় তাঁর কাছে অভিযোগ বছরে একটি বা দু'টি আসে। কিন্তু তাঁর যুক্তি, ‘‘আমি জানি না, অভিযোগ কম মানে অপরাধ কম হচ্ছে, না কি মহিলারা অভিযোগ জানাচ্ছেন না! তবে একটা ঘটনাও কাম্য নয়।’’
হেনস্থার ঘটনা মনের মধ্যে চেপে রাখলে কষ্ট আরও বাড়ে বলেই মনে করেন লীনা। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকেই বললেন, ‘‘ভিতরে একটা অস্বস্তি কাজ করে। দৈনন্দিন কাজে তার প্রভাব পড়ে। অনেক সময়ে এর ফলে আক্রান্তের ব্যক্তিত্ব পর্যন্ত বদলে যেতে পারে।’’ লীনার মতে, মহিলারা অভিযোগ করছেন বলেই মানুষ তা জানতে পারছেন। এক জনকে দেখে আরও অনেকে সাহস পাচ্ছেন। মহিলাদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, ‘‘যাঁরা এখনও বলতে পারেন না, তাঁরা বলুন।’’