ঋদ্ধিমা ঘোষ ও গৌরব চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।
এ বারের পুজো ভীষণ অন্য রকম। উদ্দীপনায় সংযম, উচ্ছ্বাসে লাগাম। চারটে দিন বাঁধনছাড়া হওয়ার যে অবকাশ, এ বারের পুজোয় তা অমিল। এ বারের পুজোয় মান এবং হুঁশ যাঁদের আছে, তাঁদের মনখারাপ। কারণ, এ বছর একটি মেয়ের বাড়ি ফেরা নেই! উৎসবে গা ভাসানো নেই। নিজের বাড়িতে যে আয়োজন করত, তা-ও বুঝি চিরতরে ঘুচল!
অথচ দেখুন, যাঁর পুজো তিনিও নারী। তাঁকে নিয়ে চার দিন সকলে সব দুঃখ ভুলে আনন্দে মাতেন। সেই শহরেই মেয়েদের নিরাপত্তা নেই! এ সব মনে হলে আপনা থেকেই মন বিষণ্ণ হয়ে যায়। এ বছর পুজোয় থাকব, উৎসবে নেই।
অনেকে পুজো হোক, সেটাও চাইছেন না। আমি পুজো হওয়ার পক্ষে। কারণ, পুজোর সঙ্গে অনেকের রুজিরুটি জড়িয়ে। সমাজের একেবারে তৃণমূলীয় স্তর থেকে যদি ধরি তা হলে বলব, বেলুনওয়ালা, ফুচকাওয়ালা থেকে শুরু করে ঢাকি বা রাস্তায় যাঁরা খাবারের দোকান দেন কিংবা মণ্ডপ তৈরির কাজ করেন। কুমোরটুলির ছোট শিল্পীরাও এই দলে। একই ভাবে ছোট বস্ত্র বিপণি বা বিক্রেতারাও ক্ষতির মুখ দেখবেন। পুজোয় উপার্জন না হলে এঁদের পরিবারের কেউ হয়তো নতুন জামা গায়ে তুলতে পারবেন না! আমরা অবশ্যই আন্দোলনে থাকব। কিন্তু আমরা কি কারও মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে পারি?
তাই ঠিক করেছি, এ বারের পুজো বাড়িতেই কাটাব। পরিবারের সকলের সঙ্গে। আমার দুই বাবা, মা, স্বামী গৌরব চক্রবর্তী আর আমাদের ছেলে ধীর। এ বছর ধীরের দ্বিতীয় পুজো। ভেবেছিলাম, ওকে নিয়ে একটু আধটু মণ্ডপে যাব, ঠাকুর দেখব। ঢাকের বাজনা শুনে ও কী করে, খুব দেখার ইচ্ছে। দেখা যাক, কতটা কী হয়। আর থাকবে ঘরোয়া খাওয়াদাওয়া। এমনিতেই আমরা খুব যে ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখি তা নয়। একদিন আমরা সকলে মিলে বাইরে খেতে যাই। এ বারেও সেই ইচ্ছে রয়েছে। একদিন আমার দেওর অর্জুন চক্রবর্তী, জা সৃজা ওদের মেয়েকে নিয়ে হয়তো আসবে। কেবল মায়ের জায়গা শূন্য। বাবা আপ্রাণ সেই ফাঁক ভরতে চেষ্টা করেন। কিন্তু কিছু শূন্যতা কখনও কি ভরাট হয়?