পাওলি দাম। ছবি: সংগৃহীত।
ফেলে আসা শৈশব মানুষকে অনেক কিছু মনে করিয়ে দেয়। ছোটবেলায় বাবার তুলে দেওয়া তাঁর একটি ছবি যেমন পাওলি দামের মনে ভিড় করিয়েছে একরাশ স্মৃতি। চোখে কাজল, মাথায় দু’টি ঝুঁটি এবং হাতে রজনীগন্ধা— শৈশবের অদেখা সেই ছবি অনুরাগীদের সঙ্গে সমাজমাধ্যমের পাতায় ভাগ করে নিয়েছেন পাওলি। কোন পরিস্থিতিতে ছবিটি তোলা হয়েছিল তারও হদিস দিয়েছেন অভিনেত্রী। শৈশব এবং বাবাকে নিয়ে ভিড় করে আসা স্মৃতির ঝাঁপি পাওলি খুললেন আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে।
উত্তর কলকাতায় বড় হয়েছেন পাওলি। সেই বাড়িতেই তাঁর ছবিটি তোলা হয়েছে। বাবার নাম অমল দাম। মা পাপিয়া দেবী।
সম্ভবত, পাওলি তখন বছর তিনেকের। অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘‘দেখুন কী সুন্দর ফুলের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে পোজ় দিচ্ছি। বুঝতেই পারিনি বাবা এত সুন্দর একটা ছবি তুলে দেবেন।’’
ছোটবেলার ছবি বিশেষ একটা সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেন না পাওলি। এই ছবিটি কী ভাবে খুঁজে পেলেন তিনি? আনন্দবাজার অনলাইনকে পাওলি বললেন, ‘‘পারিবারিক অ্যালবাম থেকে আমার ভাইয়ের সৌজন্যে। মাঝে বৌবাজার থেকে বাড়ি পরিবর্তন করার সময়ে পুরনো কিছু অ্যালবাম হাতে আসে। সেখানেই ছিল ছবিটা।’’
কথাপ্রসঙ্গেই পাওলি জানালেন, তাঁর বাবার শখ ছিল ফোটোগ্রাফি এবং ট্রেকিং। তাঁর নামের নেপথ্য রহস্যও নাকি বাবার শখের ফল। বললেন, ‘‘পাওলি নামে তো একটা পর্বতশৃঙ্গ রয়েছে। বাবা সেটা থেকেই আমার নাম রেখেছিলেন।’’
পুরনো ছবির অ্যালবাম ঘেঁটে বাবার কথাই বেশি মনে পড়ে পাওলির। জানালেন, ওয়াইল্ডলাইফ ছাড়া ফোটোগ্রাফির অন্যান্য শাখায় তাঁর ছিল অবাধ যাতায়াত। পাওলি বললেন, ‘‘বাবা ট্রেকিংয়ে গিয়ে পাহাড় থেকে বিভিন্ন ঝর্নার জল সংগ্রহ করতেন। প্রথম সারির একাধিক ভ্রমণ পত্রিকার প্রচ্ছদেও বাবার তোলা ছবি ছাপা হয়েছে।’’
কথাপ্রসঙ্গেই উদাহরণ দিলেন পাওলি। জানালেন, উত্তর কলকাতার ফিরিঙ্গি কালীবাড়িতে দেওয়ালে টাঙানো অমরনাথের পূর্ণ শিবলিঙ্গের ছবিটি তাঁর বাবারই তোলা। পাওলির কথায়, ‘‘খুবই দুষ্প্রাপ্য ছবি। এখন তো অমরনাথ তীর্থযাত্রা অনেকটাই বদলে গিয়েছে। অনেক বছর আগে বাবা ট্রেকিংয়ে গিয়ে ছবিটা তুলেছিলেন। ছবিটা দেখে মন্দির কর্তৃপক্ষই বাবার থেকে এক কপি ছবি চেয়ে নিয়েছিলেন।’’
ছবিতে শৈশবের ছবিতে অভিনেত্রীকে শান্তশিষ্ট মনে হচ্ছে। কিন্তু ছোটবেলায় কি দুষ্টুমি করতেন? প্রশ্ন করায় পাওলি বললেন, ‘‘প্রচণ্ড। এমনকি আমাকে এখন যেমন শান্ত মনে করেন অনেকে, ছোটবেলায় ঠিক তার বিপরীত ছিলাম।’’
পাওলির ঠাকুমা এবং মা, দু’জনেই ভাল গান গাইতেন। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘ঠাকুমার গানের তালে তালেই আমি নাচতাম। নাচের মুদ্রার ধারণা হয়তো খানিকটা জন্মগত।’’ শৈশবের এই ছোট ছোট মুহূর্তগুলিই যে পরবর্তী জীবনে তাঁকে অভিনেত্রী হিসেবে সাহায্য করেছে, সে কথাও অকপটে স্বীকার করে নিলেন পাওলি।
বাবা পেশাদার আলোকচিত্রী না হলেও পাওলি বিশ্বাস করেন, তিনি পেশাদার আলোকচিত্রীদের তুলনায় কোনও অংশে কম ছিলেন না। অ্যালবাম থেকে আগামী দিনে অনুরাগীদের জন্য নতুন কোনও চমক কি হাজির করবেন পাওলি?
অভিনেত্রী হেসে বললেন, ‘‘ব্যক্তিগত ছবি তো খুব বেশি প্রকাশ্যে আনতে চাই না। এই ছবিটা এতটাই সুন্দর যে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারিনি। দেখা যাক, যদি মনে হয় তখন না হয় ভাবা যাবে।’’ এই মুহূর্তে দুটো নতুন ওয়েব সিরিজ়ের শুটিংয়ে ব্যস্ত পাওলি। তার মাঝেই কখনও কখনও ফিরে দেখছেন ফেলে আসা অতীতকে।