অরিন্দমের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন অভিযোগকারিণী। গ্রাফিক : শৌভিক দেবনাথ।
গত কয়েক দিন ধরে উত্তাল টলিপাড়া। অরিন্দম শীলের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন এক অভিনেত্রী। প্রথমে রাজ্য মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হন। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে কড়া পদক্ষেপ করে ডিরেক্টর্স গিল্ড। অনির্দিষ্ট কালের জন্য সাসপেন্ড (নিলম্বিত) করা হয় অরিন্দমকে। এ বার পরিচালকের বিরুদ্ধে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থানায় এফআইআর দায়ের করলেন অভিনেত্রী। যদিও ইতিমধ্যেই দুঃখপ্রকাশ করেছেন, ক্ষমাও চেয়েছেন পরিচালক। পাশাপাশি, ঘটনাটি যে নিতান্ত ‘অনিচ্ছাকৃত’ তা-ও দাবি করেছেন তিনি। সে দিনের শুটিং ফ্লোরে ঠিক কী ঘটেছিল? প্রথম বার আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে মুখ খুললেন অভিযোগকারী অভিনেত্রী।
অভিনেত্রীর দাবি, সে দিন ফ্লোরে একটি ঘনিষ্ঠ দৃশ্য বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন পরিচালক। সেই অজুহাতে তাঁকে নিজের কোলে বসান, তার পর চুম্বন করেন গালে। এটি চলতি বছরের এপ্রিল মাসের ঘটনা। এর পর ২০ জুন তিনি মহিলা কমিশনের দ্বারস্থ হন। গত ১২ অগস্ট মহিলা কমিশনের তরফে তলব করা হয় পরিচালককে।
যদিও আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত। তাঁর দাবি, সে দিনের ঘটনার একাধিক সাক্ষী রয়েছেন। তিনি অভিনেত্রীর সঙ্গে ইচ্ছাকৃত ভাবে কিছুই করেননি। দৃশ্য বোঝাতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত ভাবে স্পর্শ হয়ে যায়। এ জন্য তিনি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, মহিলা কমিশন তাঁকে ক্ষমাপ্রার্থনা করে একটি চিঠি লিখতে বলে। কিন্তু, সেখানে তাঁর লেখা ‘অনিচ্ছাকৃত’ শব্দটি মুছে দিতে বলে। ডিরেক্টর্স গিল্ড-এর বিরুদ্ধে অরিন্দমের অভিযোগ, তাঁকে কিছু না জানিয়ে, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই নির্দেশ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগকারী অভিনেত্রী বলেন, “যে দৃশ্যের কথা উনি বলছেন, সেই দৃশ্য থেকেই চুম্বন বাদ হয়ে যায়। সুতরাং দৃশ্য বোঝাতে গিয়ে চুম্বনের কী প্রয়োজন, সেটাই বুঝতে পারিনি। আর যতই পরিচালক আবেগতাড়িত হয়ে দৃশ্য বোঝানোর চেষ্টা করুন না কেন, তাঁর ঠোঁট কোনও অভিনেত্রীর গাল স্পর্শ করতে পারে না। পরিচালক বার বার বলছেন, যা হয়েছে ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভাবে হয়েছে। আমার প্রশ্ন ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভাবে কোনও মানুষ কি কাউকে চুম্বন করতে পারেন?”
তবে, এই ঘটনার পরও অভিনেত্রী কেন শুটিং চালিয়ে গিয়েছিলেন সে দিন, কেন ওই মুহূর্তেই বলেননি ‘অস্বস্তি হচ্ছে’, অথবা, শুটিং শেষ হওয়ার পরও কেন তিনি অভিযোগ জানালেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিচালক অরিন্দম শীল।
জবাবে অভিনেত্রী বলেন, “আমি সে দিন কোনও তামাশা করিনি, চিৎকার করিনি। তাই শুটিং ফ্লোরের কোনও কোনও সদস্য মানতে চাইছেন না, ‘অপমানজনক’ কোনও ঘটনা আদৌ ঘটেছিল। এমনকি, ফ্লোরে উপস্থিত অনেকের কোনও ধরনের অস্বস্তিকর কিছু ঘটেছে বলেও মনে হয়নি। ভদ্রতা দেখিয়ে শুটিংটা শেষ করেছিলাম, তাই সকলের মনে হয়েছিল এটাই স্বভাবিক। তাঁদের মানসিকতা নিয়েও আমার প্রশ্ন রয়েছে।’’
অভিনেত্রীর কথায়, “আমি একবার বোঝানোর চেষ্টাও করেছিলাম, অস্বস্তি হচ্ছে। সে সময় পরিচালক উল্টে আমাকে নিয়ে মশকরা করেন। একজন শিক্ষিত মানুষের কাছে এটা আশা করিনি।’’
তিনি বললেন, “ওঁকে চিনি
বছর তিনেক। আগেও একবার আমাকে কাস্ট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে না বলতে হয়েছিল
আমাকে। যতটা সম্ভব পেশাগত সম্পর্কই বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলাম। তার মানে কি উনি যা
ইচ্ছে তা-ই করতে পারেন? আবার এ সব করে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘তোর ভাল লাগেনি?’” অভিনেত্রী আরও বললেন, “পশ-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রথমে নিয়োগকর্তাকে ঘটনা জানাতে হয়। তাই ঘটনার পরে সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগকর্তাকে মৌখিক ভাবে ও ফোনে মেসেজ করে পুরো বিষয়টি জানাই।’’
এই ধরনের ঘটনা প্রকাশ্যে আনতে কতটা সাহসের প্রয়োজন হয়? নেপথ্যে কি কাজ হারানোর ভয়ও থাকে? অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘হ্যাঁ, কাজ হারানোর তো ভয় থাকেই। এর পর হয়তো অনেকেই ভাবতে পারেন, এই অভিনেত্রীকে শুটিংয়ে নেওয়া যাবে না। সেই আশঙ্কা যে করিনি, তেমনটা নয়। তবে এই সাহসটুকু আমরা দেখাতে পারি না বলেই অপরাধীরা দিব্য হেসেখেলে ঘুরে বেড়ায়।”
অভিনেত্রীর দাবি, বহু বছর ধরেই অরিন্দমের এই স্বভাব সম্পর্কে অবগত ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতারা। বিভিন্ন সময় অভিনেত্রীর তিনি নাকি হেনস্থা করেছেন। তবে অভিনেত্রী এও জানান সামনে এসে অভিযোগ করার সাহস সকলের থাকে না। অভিনেত্রীর কথায়, ‘‘ আমাদের সমাজে সকলে এগিয়ে এসে অভিযোগটা জানাতে পারেন না। অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়। তাই সাহস পায় না। আমিও পারতাম না। কিন্তু এবার উনি ঘর ভর্তি লোকের সামনে যা করেছেন। তাতে ওনাকে ছেড়ে দিলে সমাজের প্রতি অবিচার করা হবে।’’ শেষে পরিচালকের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, ক্ষমতা থাকলেই যা খুশি তাই করা যায় না। প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন মহিলাদের এভাবে ভয় দেখানো যায় না বলেই মত সেই অভিনেত্রীর।
(সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী যৌন হেনস্থা বা শ্লীলতাহানির ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণীর নাম বা পরিচয় প্রকাশ্যে আনা হয় না)