Celebrity Interview

‘কোনও ভাঙনই সুখের নয়! মানুষ একা থাকতে পারে না’, তৃতীয় বিয়ে নিয়ে আর কী বললেন শাকিব খান?

‘দেশের সঙ্কটে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করবে, আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক’, ব্যক্তিগত জীবন থেকে বাংলাদেশের পালাবদল সব নিয়ে আড্ডায় শাকিব খান।

Advertisement
সম্পিতা দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২৪ ১১:০৪
Bangladeshi Actor Shakib Khan Exclusive interview

শাকিব খান। —ফাইল ছবি।

বাংলাদেশে তিনি বড় পর্দার ‘কিং’, দর্শক তেমনই আখ্যা দিয়েছেন। ‘তুফান’ মুক্তি পাওয়ার পর সে দেশের পটভূমিই বদলে গেল। ২৩ দিনের গণ আন্দোলন, তার পর এক নয়া বাংলাদেশের অভ্যুত্থান। এমন পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর কেমন আছেন শাকিব খান? অপু-বুবলী থেকে তৃতীয় বিয়ের গুঞ্জন— সব নিয়ে অকপট অভিনেতা।

Advertisement

প্রশ্ন: বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন কেমন আছেন?

শাকিব: খুব ভাল আছি। আমার কোনও অসুবিধে নেই। আমি একজন অরাজনৈতিক মানুষ। সব সময় দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে।

প্রশ্ন: শাকিবের আর এক নাম বাংলাদেশে ‘কিং খান’, ভারতে শাহরুখ খানকে এই নামে ডাকা হয়। আপনি তাঁর সঙ্গে নিজের কোনও মিল খুঁজে পান?

শাকিব: শাহরুখ খান একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মহাতারকা। এশিয়া মহাদেশের তারকাদের কাছে উনি অনুপ্রেরণার আর এক নাম। আমি মনে করি, শুধু ভারত নয়, সমগ্র মহাদেশের গর্ব তিনি। তাঁর সঙ্গে তুলনার প্রশ্নই ওঠে না, আমি চিন্তাও করিনি কখনও এমন। তবে মানুষ একটু হলেও তাঁর মতো করে আমাকে ভালবাসেন; বোধহয় এই মিলটুকু খুঁজে পাই। এটাই ভাল লাগার জায়গা।

প্রশ্ন: আপনার আসন্ন ছবি ‘দরদ’-এ সোনাল চৌহনের সঙ্গে কাজ করলেন, হিন্দি ছবির নায়িকা। ওঁর সঙ্গে কাজ করার সময় ভাষাগত কোনও সমস্যা হয়েছে?

শাকিব: বাংলা-হিন্দি অনেক শব্দের মিল রয়েছে। তাই পারস্পরিক বোঝাবুঝিতে একদমই বেগ পেতে হয়নি। তা ছাড়া আজকের পৃথিবীতে ভাষা কোনও প্রতিবন্ধকতাই নয়।

প্রশ্ন: সোনালকে নায়িকা হিসেবে কত নম্বর দেবেন, তাঁর কোন গুণটা ভাল লেগেছে?

শাকিব: সোনাল ভীষণ সহযোগিতা করেছেন। চেষ্টা করেছেন ভেঙেচুরে নতুন ভাবে নিজেকে উপস্থাপন করার। শুটিংয়ের সময় ওঁর যে মনোযোগ দেখেছি, আমার খুব ভাল লেগেছে, খুব খুশি কাজ করে। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ এবং ভারত বিশ্বের যেখানে ‘দরদ’ ছবিটি দেখানো হবে, দর্শকের ওঁর কাজ ভাল লাগবে।

প্রশ্ন: ‘তুফান’ বাংলাদেশে প্রায় রেকর্ড গড়েছে, কিন্তু কলকাতায় সেই ম্যাজিক করতে পারল না, কারণ কী মনে হয়?

শাকিব: কলকাতায় বাণিজ্যিক ছবির বাজার খুবই মন্দা। যতটুকু গিয়ে দেখলাম, খোঁজখবর নিলাম ওখানকার বড়বড় তারকারই কত চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু অনেক বছর ধরে কলকাতার মূলধারার বাণিজ্যিক ছবির বাজার ভাল নয়। ‘তুফান’-এর সাফল্য কিন্তু শুধু বাংলাদেশে সীমাবদ্ধ না, সারা বিশ্বে সাফল্য পেয়েছে। ছবির এই সাফল্য গত বছর ‘প্রিয়তমা’র হাত ধরে শুরু হয়েছে। পৃথিবীর বড় শহরগুলিতে পর পর মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি যেমন ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’, ‘তুফান’— সব ক’টাই সফল হয়েছে। আমি লক্ষ করছি, সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ছবির বাজার তৈরি হয়ে গেছে। স্টকহোম, ডাবলিন, প্যারিস, মিডল ইস্ট, নর্থ আমেরিকা ছাড়াও বহু শহরের প্রেক্ষাগৃহে হলিউডের ছবিগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এবং সাফল্য পাচ্ছে। যেটা আগে ভাবনার বাইরে ছিল। কিন্তু আমি এই স্বপ্নটাই দীর্ঘ দিন ধরে দেখে আসছি যা এখন সত্যি হয়েছে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের সিনেমা থেকে গান দুই দেশের একটা সহজ চলাচল ছিল, সেই সময় এমন পালাবদল। ফেসবুকে ভারতবিদ্বেষী মন্তব্য, কী মনে হয়, এ ভাবে কি সিনেমার শিল্পের উন্নতি সম্ভব?

শাকিব: বাংলাদেশের ইলিশ মাছ তো ঠিকই যাচ্ছে। আমাদের ক্রিকেটাররা খেলতে যাচ্ছেন, বিভিন্ন কূটনৈতিক আলোচনাও হচ্ছে। প্রতিবেশী হিসেবে আমাদের পরস্পরের মিলেমিশে থাকা উচিত। তেমনটাই তো দেখছি। কিছু মানুষ এখান থেকে এক কথা বললে, ওখান থেকেও কিছু মানুষ বাংলাদেশ নিয়ে কুমন্তব্য করছেন! মানুষের আবেগের জায়গা থেকে মতামতের একটা বিভেদ থাকতে পারে। আর সম্পর্ক থাকলে ভাঙাগড়া থাকেই। কিছু দিন পর আবার ঠিক হয়ে যায়। এ সব নিয়ে আমি একদমই ভাবিত নই। সমস্যা থাকলে দুই দেশের নীতি নির্ধারকেরা তার সমাধান খুঁজে বার করবেন। আমি মনে করি, এশিয়ান হিসেবে আমাদের মিলেমিশে থাকা উচিত।

প্রশ্ন: এত বড় একটা পালাবদল, অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়েছে, সিনেমাহল ভাঙচুর হয়েছে, বড় তারকা হিসেবে আপনি কী ভাবে দেখছেন এই পরিস্থিতি?

শাকিব: এমন একটা ঘটনার পর সব কিছু স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে সময় লাগে। আমাদের এখানকার একজন শিল্পীর ছবি যখন পশ্চিমবঙ্গে মুক্তি পেল, তখনই ওখানকার একটি আন্দোলনের ফলে মুখ থুবড়ে পড়ল সেটা। সব জায়গায় কমবেশি ওলটপালট থাকে। দেশের সঙ্কটে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করবে, আন্দোলন করবে এটাই স্বাভাবিক।

সাধারণ মানুষই অনেক কিছু ভাঙে। আবার তারাই গড়ে! নতুন কিছু এলে নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়। তাই সব কিছু আবার যে ভাবে গড়ে উঠছে, আমি আশা করছি সবাই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে কাজে মনোযোগী হয়েছেন। আমি আশা করছি, আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি আগের চেয়ে আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।

প্রশ্ন: আপনার দেশের একটা বড় অংশের দর্শক পালাবদলের সময় আপনার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান, অনেকে বলছেন আপনি নাকি দেশেই ছিলেন না?

শাকিব: আমার সমাজমাধ্যমের পাতাটা দেখলেই বোঝা যাবে বাংলাদেশে গন্ডগোলের আগেই দুবাই সরকার থেকে আমাকে গোল্ডেন ভিসা ও রেসিডেন্সি দেয়ার আমন্ত্রণ জানায়। আগে থেকে পরিকল্পনা ছিল দুবাইয়ের কাজ সেরে ছুটি কাটানোর জন্য দু’সপ্তাহ যুক্তরাষ্ট্রে থাকব। ওখানে আমার একটা বাসস্থানও রয়েছে। দুবাই গিয়ে প্রথম জানতে পারি দেশের এমন অবস্থা। তৎক্ষণাৎ আমি আমার সমাজমাধ্যমে দেশ ও মানুষের পক্ষে থাকার কথা জানিয়েছিলাম। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় একধিক বার মানুষের পক্ষে সমর্থন দিয়ে পোস্ট দিয়েছি। আগেও বলেছি, আমি অরাজনৈতিক মানুষ। সব সময় দেশ ও মানুষের পক্ষে এবং তাদের জন্য আমি সব সময় কাজ করে যাচ্ছি।

প্রশ্ন: দুই ছেলে তো আপনার দেশে আছে, ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কী পরিকল্পনা আছে?

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শাকিব: ওরা এখনও অনেক ছোট। বুঝতে শেখেনি। ওরা স্কুলে যাচ্ছে, লেখাপড়া করছে। বাবা হিসেবে আমি ওদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চাই। আমি চাই ওরা আমার চেয়েও অনেক বড় হোক। ওদের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেয়ার জন্য যা যা করতে হয় বাবা হিসেবে আমি করে যাব।

প্রশ্ন: বার বার আপনার ব্যক্তিগত জীবন, আর ভাল ভাবে বললে বিয়ে নিয়ে নানা কাটাছেঁড়া হয়েছে, মানুষ শাকিবকে কতটা আঘাত দেয় এ সব?

শাকিব: আঘাত তো দিয়েছেই। কোনও ভাঙনই তো সুখের নয়। যতটুকু হয়েছে, হয়তো সেটুকুই হওয়ার ছিল। 'লাইফ ইজ় আ জার্নি'। এই যাত্রায় অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, পরিচয় হয়। আমার জীবনে দু’জন (অপু-বুবলী) মানুষ অতীত, এটা আগেও বলেছি। অতীত হিসেবে তাঁরা থাকুক। এ সব নিয়ে আমার আক্ষেপ-ভ্রুক্ষেপ কিছুই নেই। যা হয়েছে হয়তো ভালর জন্য হয়েছে। আমার দুই সন্তান, বাবা-মা, বোন ও তার পরিবার, কিছু কাছের আপন মানুষ, আমার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং দেশ-বিদেশের কোটি কোটি ভালবাসার মানুষ রয়েছে, যাঁরা আমাকে অঢেল ভালবাসা দেন; তাঁদের সবাইকে নিয়ে আমি খুব ভাল আছি।

প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে শাকিব খান নাকি ফের বিয়ে করবেন, তা-ও আবার সম্বন্ধ করে, পাত্রী নাকি চিকিৎসক! সত্যিই কি কখনও ফের সংসারী হবেন?

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

শাকিব: মানুষ একা থাকতে পারে না। পরিবার এবং সমাজ নিয়ে বেঁচে থাকে। দেখা যাক, কোনও তাড়াহুড়ো নেই যে নির্দিষ্ট কোনও বছরের মধ্যে বিয়ে করতে হবে। যদি তেমন কিছু হয় পারিবারিক ভাবে হবে এবং সেটা বিয়ের পর্যায়ে যাবে। আমার বাবা-মার যেহেতু বয়স হয়েছে সন্তান হিসেবে তাঁরা আমাকে সংসারী দেখতে চান।

প্রশ্ন: বড় তারকা হওয়ার বিড়ম্বনা কিছু আছে?

শাকিব: অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি যেটা দেখি ভিত্তিহীন খবর। উদ্ভট সব জিনিস লেখা হয়। যার কোনও সত্যতা নেই, যা কখনও ঘটেনি সেগুলো অনেকে রং মিশিয়ে লিখে দেয়। এখন ভিউ নিয়ে শুধু প্রতিযোগিতা। সেই কারণে এ সব হয়ে থাকে। এগুলো মাঝেমাঝে বিরক্তিকর লাগে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় মানুষ কাছে আসার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন, ঘিরে ধরেন। অস্বস্তি হয় কখনও কখনও। তবে জানি, এটা আসলে ভালবাসার কারণে হয়। এই ভালবাসার কারণেই তো আমি।

প্রশ্ন: ‘বরবাদ’ আপনার পরবর্তী সিনেমা। কবে থেকে শুটিং শুরু করবেন?

শাকিব: অক্টোবর মাসেই মুম্বইয়ে শুরু হচ্ছে ‘বরবাদ’-এর শুটিং। আগামী বছর সঠিক সময় দেখে মুক্তি পাবে। ‘বরবাদ’ অতীতের সব রেকর্ড ভাঙবে এই প্রত্যাশা নিয়ে শুরু করছি। ইতিমধ্যেই পজিটিভ ভাইব্‌স পাচ্ছি।

প্রশ্ন: শুনছি ‘তুফান ২’ নাকি আসতে চলছে?

শাকিব: প্রযোজনা সংস্থার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে এ বছর তেমন কোনও সম্ভবনা নেই। ২০২৫-এ ‘তুফান ২’ আসছে না। তার আগে আমরা আলফা আই, চরকি, এসভিএফ মিলে অন্য একটি কাজ করতে পারি। চিত্রনাট্য খুব ভাল লেগেছে। আমি বরাবরই বুদ্ধিদীপ্ত ও নতুন গল্প খুঁজি যেখানে নতুন করে নিজেকে তুলে ধরতে পারব। এতে নিজের মধ্যে নতুন চ্যালেঞ্জ আনা যায়।

আরও পড়ুন
Advertisement