উৎসবের ‘ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার’ বিভাগে থাকা ‘জাগুয়ার ম্যান’ ছবির দৃশ্য।
কেন ভারতীয় সিনেমা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতামূলক বিভাগে সাফল্য পাচ্ছে না? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বছর খানেক আগে জন্ম ‘আর্টহাউজ ফিল্ম ফাউন্ডেশন’-এর। ক্রমে ক্রমে সেই প্রশ্ন পর্যবসিত হয়েছে ‘কেন ভারতীয় ছবির স্বীকৃতির জন্য ইউরোপের চলচ্চিত্র উৎসবের দরকার হবে’? এই ভাবনায়। বরং ভারতেই এমন একটা উৎসব করলে কেমন হয়? কেমন হয় যদি সেখান থেকেই ভারতের সিনেমা নির্মাতারা নিজেদের পায়ের তলায় শক্ত জমি পেয়ে যান?
এই সব সাত-পাঁচ ভাবনা থেকেই ২০১৭ সালে শুরু হয়েছিল ‘আর্টহাউজ এশিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’। অন্যতম আয়োজক শপথ দাস। এ বার পঞ্চম বছরে পা দেওয়া এই চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হচ্ছে ২১ ফেব্রুয়ারি, চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। বসুশ্রী সিনেমা হলে ৭ দিন ধরে চলবে উৎসব। প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা তার সঙ্গে থাকবে আলোচনাচক্র ‘আর্টহাউজ সংলাপ’।
কী থাকছে এ বারের উৎসবে? শপথ জানালেন, উৎসব শুরু হবে মেক্সিকোর ছবি ‘লোস লোবেস’ দিয়ে। আর শেষ হবে ভারতীয় ছবি ‘নাসির’-এ এসে। ‘‘৪টে ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হবে এই উৎসবে। ৬টি এশিয়া প্রিমিয়ার, ৭টি ইন্ডিয়া প্রিমিয়ার। আর সব ছবিরই কলকাতা প্রিমিয়ার। এর আগে এই ছবিগুলোর কোনওটাই কলকাতায় দেখানো হয়নি’’, বললেন শপথ। ৪টি ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের মধ্যে রয়েছে ভিনিসিয়াস রেস পরিচালিত ব্রাজিলের ছবি ‘জাগুয়ার ম্যান’, ১টি আফগানিস্তান-বাংলাদেশের ছবি, ২টো ভারতীয় ছবি।
আর্টহাউজ এশিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পরিচালক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায়। নিজেকে ‘এই উৎসবের বন্ধু’ বলে পরিচয় দেওয়া বৌদ্ধায়ন কেন শপথের এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হলেন? প্রশ্নের উত্তরে পরিচালক বলেন, ‘‘একটাই কারণ। দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্র পরিমণ্ডলে শপথ যা করছে, তা প্রায় অবিশ্বাস্য। শুধু সিনেমা দেখানোই নয়, দক্ষিণ এশিয়ার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের শেখার একটা মাধ্যম তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে এই উৎসবের মধ্যে দিয়ে।’’ একই কথা আর এক ‘উৎসবের বন্ধু’ মোনালিসা মুখোপাধ্যায়েরও। তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘লিটল ল্যাম্ব ফিল্মস’ এ বারের উৎসবের অন্যতম উদ্যোক্তা। মোনালিসার কথায়, ‘‘এই উৎসবটা ভবিষ্যতে অনেকের কাছেই আদর্শ হয়ে উঠতে পারে। শুধুমাত্র সিনেমার প্রতি ভালবাসা থেকে এর সূচনা করেছিল শপথ। তাই এ বছর যখন কোভিডের কারণে উৎসব হওয়া নিয়ে একটা সংশয় হয়েছিল, আমার মনে হয়, শপথের পাশে থাকা উচিত।’’
তবে শুধু সিনেমা দেখানো নয়, এই উৎসবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে প্রতিদিনের আলোচনাচক্রগুলিও। এমনটাই ভাবছেন শপথ। স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি থেকে সিনেমায় মহিলাদের অস্তিত্ব— নানা বিষয় বাছা হয়েছে আলোচনার জন্য। ২৫ ফেব্রুয়ারি আলোচনা হবে ‘অভিনয় কি রক্তে থাকে, নাকি শিখতে হয়’— এমন একটা বিষয় নিয়ে। থাকবেন সুদীপ্তা চক্রবর্তী, ঋত্বিক চক্রবর্তী, দামিনী বসু এবং অতনু ঘোষ। সঞ্চালকের ভূমিকায় কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়।
এই ধরনের উৎসবের সবচেয়ে বড় গুরুত্ব হল, সিনেমা নির্বাচনে গুণমানকে প্রাধান্য দেওয়া। এমনটাই বলছেন মোনালিসা। বৌদ্ধায়ন বলছেন, ‘‘এমন উৎসব থেকে কোনও আর্থিক লাভ নেই। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে এই সমাজ থেকে অনেক কিছু পেয়েছি। সেটার কিছুটা ফিরিয়েও দিতে হয়। এ রকম একটা উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার উদ্দেশ্য হল, সেই ‘দেওয়া’টা।’’
এই উৎসবে যাঁরা ছবি দেখতে চান, তাঁরা ‘আর্টহাউজ এশিয়া ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল’-এর নেটমাধ্যম বা অনলাইন টিকিট কেনার ওয়াবসাইট থেকে সংগ্রহ করতে পারেন পাস। রয়েছে দিনের পাসের ব্যবস্থা, আবার গোটা উৎসবের পাসও।