এখন অপারশক্তি খুরানাকে সকলে বিনোদ দাস বা মদন কুমার নামেই চেনেন। ছবি: অ্যামাজ়ন প্রাইম ভিডিয়োজ়
‘দঙ্গল’-এর ওমকার সিংহ ফোগত, ‘বদ্রীনাথ কি দুলহনিয়া’র ভূষণ কিংবা ‘স্ত্রী’-এর বিট্টুকে দর্শক ভোলেননি এখনও। যতই হিরোর বন্ধুর ভূমিকা হোক না কেন, সকলের মনে জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন অপারশক্তি খুরানা। তবে এখন সেই পরিচয় অতীত। ইদানীং তাঁকে দর্শক চেনেন বিনোদ দাস বা মদন কুমার হিসাবে। বিক্রমাদিত্য মোটওয়ানের ওয়েব সিরিজ় ‘জুবিলি’-তে তিনি অভিনয় করেছেন অশোক কুমারের আদলে তৈরি এই চরিত্রে। মুখ্য ভূমিকায় অপারশক্তিকে কোনও দিন কেউ দেখবেন, তা পরিচালকও এক সময় ভাবতে পারেননি। সে কথা তিনি নিজেই জানিয়েছিলেন আনন্দবাজার অনলাইনকে। কিন্তু সিরিজ় মুক্তির পর থেকেই বদলে গিয়েছে অপারশক্তির জীবন। কমেডি চরিত্রের পাশাপাশি তিনি যে মাপা অভিনয়েও এতটা দক্ষ, তা অনেকেই এর আগে আশা করেননি। সম্প্রতি কলকাতায় এসে আনন্দবাজার অনলাইনের অনলাইনের সঙ্গে আ়ড্ডা দিলেন অপারশক্তি।
প্রশ্ন: ‘জুবিলি’র পর জীবন কি হঠাৎ বদলে গেল?
অপারশক্তি: সত্যি বলছি, এত প্রশংসা পাওয়ার একদমই অভ্যাস নেই আমার! ইন্ডাস্ট্রির সব সিনিয়র, পরিবারের লোকজন, বন্ধুবান্ধব এমন সব কথা বলছেন, যেগুলো কোনও দিন ভাবিনি যে শুনতে পাব। অনেকে তো বহু বছর অভিনয় করেও এত প্রশংসা পান না। সেখানে আমি অল্প সময়ের মধ্যেই পেয়ে গেলাম। রোজ সকালে উঠে আমি প্রার্থনা করি যেন মাথা না ঘুরে যায় আমার। সেটা হলেই যে মুশকিল। আশা করি, ভবিষ্যতেও আমি ঠান্ডা মাথায় ঠিক সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারব।
প্রশ্ন: আপনার কাছে ‘ঠিক সিদ্ধান্ত’ কোনগুলো? হিরোর বন্ধুর চরিত্রে ‘না’ বলা?
অপারশক্তি: না, না কী বলছেন! এমন কাজ করতে চাই যাতে অভিনেতা হিসাবে আমার ব্যাপ্তি হয়। ভাল পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। ঠিক সিদ্ধান্ত বলতে আমার কাছে এই। ‘জুবিলি’র পর অনেক প্রস্তাব আসছে। হয়তো আমার ভাগ্য ভাল যে, পরিচালক-প্রযোজকরা এখন আর হিরোর বন্ধুর মতো চরিত্র নিয়ে আসছেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও বলব, কোনও দিন যদি কোনও গল্প ভাল লেগে যায়, আমি কিন্তু দেখব না, আমার চরিত্রটা বড় না ছোট। কেরিয়ারের শুরুতেও সে ভাবে কখনও ভাবিনি, এখনও ভাবব না।
প্রশ্ন: মদন কুমারের চরিত্রটা বেশ ‘লার্জার দ্যান লাইফ’। অথচ আপনি খুবই মাপা অভিনয় করেছেন। সেটা কি পরিচালকের নির্দেশেই?
অপারশক্তি: একদমই। আমি আসলে খুবই লাউড। চণ্ডীগড়ের পঞ্জাবি ছেলেরা যেমন হয়। তাই পরিমিত ব্যাপারটাই আমার ধাতে নেই। জোরে হাসি, আনন্দে নাচি, ঘরের ভিতরেও চকমকি চশমা পরতে ভালবাসি (হাসি)। কিন্তু বিক্রমাদিত্য বলেই দিয়েছিল, এখানে মাপা অভিনয় করতে হবে। তবে এটুকু বলতে পারি যে, আমার ব্যক্তিত্ব যেমনই হোক, অভিনেতা হিসাবে আমি বরাবরই মাপা অভিনয় করেছি। আমার কেরিয়ারের ক্ষেত্রেও বুঝেশুনে ধীরে ধীরে পা ফেলেছি। হয়তো তাই এখন এই জায়গাটায় পৌঁছতে পেরেছি।
প্রশ্ন: আপনার আর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নাচের দৃশ্যটা সিরিজ়ে ভীষণ প্রশংসা পেয়েছে। কত বার মহড়া দিয়েছিলেন?
অপারশক্তি: খুবই গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য ছিল, অথচ ওটাই বোধহয় একমাত্র দৃশ্য যেখানে আমরা কোনও মহড়াই দিইনি। হঠাৎই বুম্বাদা আর আমি নায়ক-নায়িকা হয়ে নেচে নেচে দেখালাম, কী ভাবে প্লেব্যাক কাজ করবে। বুম্বাদা আসলে এতটাই সহজ করে দেয় যে কোনও দৃশ্য যে, কোনও অসুবিধাই হয় না।
প্রশ্ন: আপনার তো প্রচুর দৃশ্য প্রসেনজিতের সঙ্গেই?
অপারশক্তি: এক জন অভিনেতা যিনি সাড়ে তিনশোরও বেশি ছবি করে ফেলেছেন, তিনি যে সেটে এমন পরিবেশ তৈরি করতে পারেন আমার ধারণারই বাইরে ছিল। কখনও আমাদের বুঝতে দেননি যে উনি কতটা সিনিয়র। নয়তো ওঁর মতো বড় স্টারের অন্য রকম চিন্তাভাবনা থাকতেই পারত। উনি অনেক বড় মনের মানুষ বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। এবং সেই জন্যেই গোটা ইউনিট এত সহজে কাজ করতে পেরেছে।
প্রশ্ন: ‘জুবিলি’ করার আগে আপনি প্রসেনজিতের কোনও ছবি দেখেছিলন?
অপারশক্তি: ওঁর আগের কাজের সম্পর্কে আমি সে ভাবে ওয়াকিবহাল নই। কিন্তু ‘জুবিলি’ শুরু হওয়ার আগে আমি ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ দেখেছিলাম। উফ! স্যার কী অভিনয় করেছিলেন! দুর্দান্ত ছবি। তবে সত্যি কথা বলতে কী, আমি ব্যক্তিগত জীবনে যে প্রচুর ভাল ছবি সে ভাবে দেখি, তা নয়। সিনেমার চেয়ে আমি গান শুনতে বেশি পছন্দ করি।
প্রশ্ন: আপনি নিজে কোন ধরনের ছবি দেখতে বেশি ভালবাসেন?
অপারশক্তি: আমি নিজে যেহেতু এক সময় খেলাধুলো করেছি, তাই স্পোর্টস ফিল্ম দেখতে খুব ভালবাসি। এমনকি, আমি নিজে সেটে আসার সময়ও মানসিকতাটা খেলোয়াড়দের মতোই থাকে। আমার কাছে অভিনয়টাও একটি ক্রিকেট ম্যাচের মতো। সকলে নিজের পজ়িশনে দাঁড়াবে, এবং সঠিক সময় ক্যাচ লুফতে হবে। এখানে ক্যাচ মানে সংলাপ। কেউ যদি জোর করে ক্যাচ নিতে যায়, মানে খুব বেশি অন্যদের থামিয়ে সংলাপ বলতে যায়, তা হলে ক্যাচ মিস হবে। এবং ফিল্মটাও আমরা ম্যাচের মতো হেরে যাব। আমি টিমওয়ার্কে বিশ্বাস করি। এবং এই একই মানসিকতায় জীবনের সব ক্ষেত্র দেখি। সংসার চালাতেও যেমন টিমওয়ার্কের প্রয়োজন পড়ে।
প্রশ্ন: প্রত্যেক অভিনেতারই নিজস্ব একটা উইশলিস্ট থাকে। ‘জুবিলি’র পর কি সেটা অর্জন করা একটু সহজ হয়ে গেল?
অপারশক্তি: আমি একদম বর্তমানে বাঁচতে পছন্দ করি। এতটাই যে, আজ কারও সঙ্গে ঝগ়ড়া হলে, কাল সেটা ভুলে যাব। আমার অভিনেতা হিসাবে কোনওই উইশলিস্ট নেই। জীবনেও নেই। এর পর কোন কোন প্রজেক্টে সাইন করব, সে সব নিয়ে ভাবছি না এই মুহূর্তে। এখন ভাবছি, রাতের খাবারে গোলবাড়ির কষা মাংস খাব।
প্রশ্ন: আপনি তো শহরের খাওয়ার ঠিকানা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করে এসেছেন...।
অপারশক্তি: এই নিয়ে আমি আট নম্বর বার কলকাতায় আসছি। এর আগে আমি কেকেআর-এর জন্য ভিডিয়ো কনটেন্ট বানাতাম। তখন আইপিএল-এ অনেক বার এসেছি। খাওয়াদাওয়া নিয়ে আমার সব সময়ই উৎসাহ বেশি। আর জীবনের সব ক্ষেত্রে আমি হোমওয়ার্ক করে রাখি।
প্রশ্ন: অভিনয়ের ক্ষেত্রেও?
অপারশক্তি: খুব বেশি হোমওয়ার্ক করে অভিনয় করায় আমি বিশ্বাসী নই। বেশি হোমওয়ার্ক করে এলে আমার মনে হয়, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবটা চলে যায়। নিজের মতো চরিত্রটা নিয়ে বেশি ভেবে নিলে আবার পরিচালকের কোনও ইনপুট নেওয়া যায় না। যে কোনও দৃশ্যে কয়েকটা টেকের পর পরিচালক নিশ্চয়ই নতুন কিছু সংযোজন করতে চাইবেন। আমি যদি তার আগের রাতে ১০০ বার মহড়া দিয়ে ফেলি, তা হলে তো আবার পরিচালকের নির্দেশ চাইলেও মানতে কষ্ট হবে।
প্রশ্ন: যদি কোনও দিন ‘পাঠান’-এর মতো অ্যাকশন ছবি করতে হয়, তা হলে নিশ্চয়ই বেশি হোমওয়ার্ক করবেন?
অপারশক্তি: (হাসি) ‘পাঠান’ করা আমার স্বপ্ন নয়। আমি কোনও দিনই নিজেকে ওই রকম একটা ছবিতে দেখি না। তবে হ্যাঁ, যদি কোনও দিন করতে হয়, তার জন্য তো অন্য মাত্রার হোমওয়ার্ক লাগবেই বটে।