গোলন্দাজ, বিয়ে এবং রুক্মিণী নিয়ে অকপট দেব
প্রশ্ন: শোনা যাচ্ছে কোভিডের পরে সিনেমা হলে দর্শক ফেরালেন দেব?
দেব: এ বার পুজোয় ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসেছেন নগেন্দ্রপ্রসাদ অধিকারী। কেউ তাঁকে চিনত না। তাঁকে মানুষের ভাল লেগেছে। ‘গোলন্দাজ’ মুক্তি পাওয়ার পরে কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহ প্রতি শো-এ পূর্ণ। আগে যেমন হত। ভাল লাগছে দেখে।
প্রশ্ন: ‘চাঁদের পাহাড়’ বা ‘আমাজন অভিযান’-এ যেমন সাফল্য পেয়েছিলেন, এ বার কি তা-ই হল?
দেব: সত্যি বলতে তার চেয়ে বেশি পেয়েছি। এই অতিমারির মধ্যে লোকে বাংলা ছবি দেখতে এসেছে। রাস্তাঘাট এ বারের পুজোয় বেশ ফাঁকা। লোকাল ট্রেন বন্ধ। বাইরে থেকে যাঁরা ছবি দেখতে আসেন, তাঁরা তো আসতে পারেননি। এত কিছুর মধ্যে পঞ্চাশ শতাংশ নিয়ে প্রেক্ষাগৃহ ভরে গিয়েছে। এটা কি কম কথা? করোনার মধ্যে কেউ বড় ছবি প্রেক্ষাগৃহে নিয়ে আসার সাহস পাচ্ছিল না। এক সপ্তাহে ‘গোলন্দাজ’ ৫০ শতাংশ আসন সংখ্যা নিয়ে ২ কোটি টাকার উপরে ব্যবসা দিয়েছে। ৫০ শতাংশ আসন সংখ্যা নিয়ে যদি এই টাকা আসে, তা হলে একশো শতাংশ আসন হলে লভ্যাংশ কোথায় গিয়ে দাঁড়াত?
প্রশ্ন: করোনার মধ্যেই দক্ষিণ ভারতে ‘মাস্টার’ বলে একটি ছবি তো খুব জনপ্রিয় হয়েছে…
দেব: হ্যাঁ। এই সময়ে ‘মাস্টার’, একটি পঞ্জাবি ছবি আর ‘গোলন্দাজ’ চলেছে। এত বলিউড ছবিও তো এই সময়ে মুক্তি পেয়েছে। তা সত্ত্বেও ‘গোলন্দাজ’ এর মতো বাংলা ছবি মানুষ প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে দেখেছেন। এটা তো বিরাট পাওয়া। এ বার যারা বড় বাজেটের ছবি প্রেক্ষাগৃহে আনার সাহস পাচ্ছিলেন না, তাঁরাও ছবি মুক্তির কথা ভাববেন বলে আমার মনে হয়।প্রথমে তো কাউকে এই কাজটা করতেই হত। আর সেটা এসভিএফ-এর মতো প্রযোজনা সংস্থা করবে না তো আর কে করবে? আমি আনন্দবাজার অনলাইনের মাধ্যমে দর্শকদের আরও একটা কথা বলতে চাই।
প্রশ্ন: বলুন…
দেব: আমার আর ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাবা-মা কিন্তু মুক্তির দিন ‘গোলন্দাজ’ দেখেছেন। অনেক দিন তো পেরিয়েও গেল। আজ অবধি আমার বা ধ্রুবর বাবা-মায়ের কিন্তু করোনা হয়নি। এটা কোনও গর্বের বিষয় নয়। আমি উদাহরণ একটা কারণেই দিলাম। মানুষের যদি মনে হয় প্রেক্ষাগৃহে গেলেই করোনা হবে, তা কিন্তু নয়। এক জন মানুষ প্রেক্ষাগৃহ থেকেও তো অন্য কোথাও যাচ্ছেন। সেই মানুষ যদি শুধুই বলেন, প্রেক্ষাগৃহে গেলেই করোনা হবে, সেটা ঠিক নয়। তবে যে দর্শকেরা এর মধ্যে সাহসের পরিচয় দিয়ে দু কোটির ব্যবসা এনে দিয়েছেন, তাঁদের কুর্ণিশ। নিজে অভিনয় করেছি বলে বলছি না, এই ছবি সকলের দেখা উচিত। অনেকে আমায় বলেছেন ‘চাঁদের পাহাড়’-এর চেয়েও এই ছবি তাঁদের ভাল লেগেছে।‘গোলন্দাজ’ সবাই প্রেক্ষাগৃহে দেখুন। ছোটপর্দায় দেখার ছবি এটা নয়।
প্রশ্ন: এত দিন মানুষ প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখেননি। এ বার দেখছেন। বাংলা ছবিতে নতুন করে জোয়ার আসবে?
দেব: হ্যাঁ। ছোট থেকে বয়স্ক সব বয়সের মানুষ প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখে আনন্দ পাচ্ছেন। আমি নিশ্চিত, এ বার ‘টনিক’-এর মতো ছবিও তাঁরা প্রেক্ষাগৃহে এসে দেখবেন। ভাবুন তো কত প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কত মানুষ খেতে পাচ্ছিলেন না।
প্রশ্ন: ‘গোলন্দাজ’-এর সেরা অনুভূতি…
দেব: ১০ তারিখ ‘গোলন্দাজ’ মুক্তির আগের দিন আমার কাছে এক প্রেক্ষাগৃহের মালিকের ফোন এসেছিল। আমাকে তিনি বললেন, ‘দাদা পুজো আমার ভাল যাবে। ছেলেমেয়েদের নিয়ে এ বার পুজোর জামা কাপড় কিনতে যাচ্ছি। ‘গোলন্দাজ’-এর সব আসন ভর্তি।’ এর পরে শুনলাম ওই প্রেক্ষাগৃহে টানা গোলন্দাজ-এর আসন পূর্ণ ছিল। এর চেয়ে ভাল আর কী হতে পারে!
প্রশ্ন: আচ্ছা আরও তো ছবি এসেছে। জিতের ছবি, কোয়েল, অঙ্কুশ…
দেব: এই পুজোয় কতগুলো ছবি এল, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কত জন দর্শক এলেন, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: বাকি ছবি কেমন করল?
দেব: জানি না বলতে পারব না।আমার কাছে খবর নেই।
প্রশ্ন: সত্যি?
দেব: হ্যাঁ। আমি ‘গোলন্দাজ’ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।
প্রশ্ন: ইশা-দেবের রসায়ন দর্শকদের নজর কেড়েছে…
দেব: পরিচালক ধ্রুবর কৃতিত্ব। প্রথমে ভেবেছিলাম ইশা কেমন করবে কে জানে। আমাদের মানাবে কি না! ছবি সব চিন্তা ভেঙে দিয়েছে। এখন পরের ছবিগুলোর কথা ভাবছি…
প্রশ্ন: বড়দিনে তা হলে ‘টনিক’?
দেব: হ্যাঁ। আর এখন আমি কাছের মানুষের জন্য নিজেকে তৈরি করছি।
প্রশ্ন: কাছের মানুষ! বিয়ে করছেন কবে?
দেব: আমি তো ছবির কথা বললাম। ‘কাছের মানুষ’।
প্রশ্ন: না, আপনার কাছের মানুষের খবর জানতে চাই। রুক্মিণী তো মুম্বইতে…
দেব: রুক্মিণী আমার কাছের মানুষ কি না, রুক্মিণী মুম্বইতে কি না, এ সব বিষয় নয়। রুক্মিণী মুম্বইতে এত ভাল কাজ করল। ওটিটিতে ওর ‘সনক’ খুব জনপ্রিয় হয়েছে। আমাদের দু’জনের কাজের ক্ষেত্রে খুব ভাল সময় যাচ্ছে। রুক্মিণীর কাছে ‘সনক’ আছে, আমার কাছে ‘গোলন্দাজ’। একটা বাঙালি মেয়ে মুম্বইতে এত ভাল কাজ করেছে— খুব গর্ব হচ্ছে আমার। দেব এন্টারটেনমেন্ট ওকে প্রথম অভিনয়ে নিয়ে আসে। ওর সাফল্য দেখে ভাল লাগছে।
প্রশ্ন: এ বার বিয়েটা সেরে ফেলুন…
দেব: এখন তো বিয়ে হওয়ার চেয়ে ভাঙছে বেশি! এই সময় ভাল থাকা, সুস্থ সম্পর্ক থাকাই আসল। আমি আর রুক্মিণী ভাল আছি। বাইরে থেকে প্লিজ আপনারা চাপিয়ে দেবেন না বিয়েটা। বিয়ে করলেই কি ভাল থাকা যায়? তার চেয়ে দু’জনের প্রতি সম্মান থাকা বেশি জরুরি।