অনুপম খের যখন সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ছবি: ফেসবুক।
দেড় বছর ধরে এক জন মানুষের মধ্যে বসবাস সহজ কথা নয়। সেটা যখন করতে হয় কাউকে, তখন না-চাইতেই সেই ব্যক্তির আত্মার দোসর হয়ে ওঠেন তিনি। অনুপম খেরের দেওয়া হিসেব অনুযায়ী ২০১৭ সালের মাঝামাঝি থেকে তিনি ‘অন্তর’-এ সদ্যপ্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এই যাপনের প্রতিফলন ২০১৯-এ, ‘দ্য অ্যাক্সিডেন্টাল প্রাইম মিনিস্টার’ ছবিতে। ছবির নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ২০২৪-এ আরও একটি ‘অ্যাক্সিডেন্ট’ বর্ষীয়ান অভিনেতার জীবনে। তাঁর অভিনীত ‘চরিত্র’ দেহ রাখলেন, অথচ তিনি দেশের বাইরে!
দেশে থাকলে সশরীরে অবশ্যই তিনি উপস্থিত থাকতেন। শেষকৃত্যে যোগ দিতেন। কাজের কারণে প্রবাসে থাকায় তাঁর মন পড়ে প্রয়াত মনমোহন সিংহের কাছে। দূরত্ব কমাতে তিনি ভিডিয়োবার্তায় অতীতকে জীবন্ত করেছেন। বলেছেন, “দেড় বছর ধরে এক জনের ছায়া হয়ে থাকা সহজ কথা নয়। কিন্তু সেটা করতে পারলে সেই ব্যক্তির অনেকটাই জানা সম্ভব। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদক্ষেপ হয়তো বিতর্কিত। কিন্তু মানুষটা একেবারেই বিতর্কিত নন।”
অনেকেই বলতে পারেন। ধৈর্যবান শ্রোতা হতে পারেন ক’জন? মনমোহন সিংহকে কাছ থেকে বুঝতে গিয়ে এই গুণ নিজের মধ্যে রপ্ত করার চেষ্টা করেছেন বর্ষীয়ান অভিনেতা। আরও কিছু গুণ নিজের মনে বুনে নেওয়ার ইচ্ছে ছিল তাঁর। যেমন, ভদ্রতা, নম্রতা, নিচু স্বরে কথা...। অনুপমের যুক্তি, “যে দিন এই চরিত্রে অভিনয়ের ডাক পাই সে দিন থেকে একটাই কথা বার বার মনে হয়েছে, ওঁর চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে কোনও ভাবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে উপহাসের পাত্র করছি না তো? ওঁকে যাতে ঠিকঠাক তুলে ধরতে পারি তার জন্যও এই গুণগুলো আত্মস্থ করার প্রয়োজন ছিল।”
অনুপম এ-ও উপলব্ধি করেছেন, যাঁরা মিতভাষী বা ভদ্র, অন্যরা তাঁদের দুর্বল ভাবেন। তাঁরাই মনের দিক থেকে প্রকৃত শক্তিশালী, বুঝতে চান না। মনমোহন সিংহকে সামনে থেকে অনেকটা সময় দেখার পর এই সত্য বুঝতে পেরেছেন অভিনেতা। তাই তিনি ‘ভদ্র’ শব্দটিকে ঘুরেফিরে তাঁর দেওয়া ভিডিয়োবার্তায় উচ্চারণ করেছেন। আজকের দিনে যা সত্যিই বিরল।
অনুপম খুব মিস্ করবেন নীল পাগড়ি শোভিত, মৃদু হাসিমুখের ওই নিপাট ‘ভদ্রলোক’টিকে।