Celebrity Interview

বাংলা ছবিতে এখন নায়ক হতে চাইলে অনাথ শিশুর মতো নিজেকেই পরিকল্পনা করে নিতে হবে: বিক্রম

মুক্তি পেল বিক্রম চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছবি ‘সূর্য’। ছবিমুক্তির আগে আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের উত্তর দিলেন অভিনেতা।

Advertisement
অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২৪ ১৭:৫৭
Image of Vikram Chatterjee

বিক্রম চট্টোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।

ছোট পর্দার নায়ক থেকে বাংলা ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্র। বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের সফরটা খুব সহজ ছিল না। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে বদলেছেন। বিশ্বাস করেন পরিশ্রমে। সম্প্রতি আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে আড্ডা দিলেন অভিনেতা।

Advertisement

প্রশ্ন: ‘পারিয়া’র পর জীবন কতটা বদলেছে?

বিক্রম: (হেসে) জীবন বদলায়নি। তবে ছবিটার পর প্রচুর মানুষের ভালবাসা পেয়েছি। যতটা আশা করেছিলাম, তার থেকেও বেশি। ছবিটা সম্প্রতি ওটিটিতে আসার পর আরও এক বার দর্শকের প্রতিক্রিয়া পাচ্ছি। ভাল লাগছে।

প্রশ্ন: অভিনেতা হিসেবে দায়িত্ব কি আরও বেড়ে গেল?

বিক্রম: আমার মনে হয়, অভিনেতা হিসেবে দায়িত্ব আরও পরে বাড়ে। এই মুহূর্তে আমার দায়িত্ব, আরও ভাল কাজ করতে থাকা। অভিনেতা হিসেবে তাই বাড়তি কোনও চাপ এই মুহূর্তে অনুভব করছি না।

প্রশ্ন: ছবিটা আগে মালয়ালম (‘চার্লি’), মরাঠি (‘দেবা’) এবং তামিল (‘মারা’) ভাষায় তৈরি হয়েছে। রিমেক ছবি করতে রাজি হলেন কেন?

বিক্রম: মূল ছবিটা ২০১৫ সালে মুক্তি পায়। ছবির প্রযোজক বাঙালি। বিভিন্ন ভাষার পর তিনি তাঁর নিজের ভাষায় গল্পটা বলতে চেয়েছেন। এটা তো ভাল উদ্যোগ। আমরা শুধু গল্পের নির্যাসটুকু নিয়েছি। পরিচালক (শিলাদিত্য মৌলিক) সেখানে আরও অনেক কিছু বদলেছেন। বিশেষত, গল্পে বাঙালি সংস্কৃতির প্রেক্ষাপট এবং মূল্যবোধকে বুনেছেন।

প্রশ্ন: দুলকার সলমন এবং আর মাধবন অভিনীত চরিত্রে এ বার আপনি...

বিক্রম: দুলকারের অভিনয় আমার ভাল লাগে। ম্যাডি (মাধবন) স্যরের আমি ভক্ত। মালয়ালম ও তামিল ছবির তাঁরা সুপারস্টার। কারণ, তাঁদের ভাষার ছবিকে সকলে শ্রদ্ধা করেন। সেই শ্রদ্ধা বা মূল্যায়ন অনেক সময় আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে করা হয় না। আবার অনেক সময় দর্শকও করেন না।

প্রশ্ন: কারণ কী?

বিক্রম: দোষটা তো আমাদের। ইন্ডাস্ট্রির ব্যর্থতা। এক সময়ে আমরা দিনের পর দিন বাণিজ্যিক ছবির নামে অন্য ভাষার ছবির রিমেক ছবি তৈরি করতাম। ফলে দর্শকেরও একটা বিতৃষ্ণা তৈরি হয়। তাই ভুলের মাসুল দিতে হচ্ছে। আবার অন্য দিক থেকে দেখলে, গত পাঁচ-সাত বছরে বাংলায় রিমেকের সংখ্যা অনেক কম। মৌলিক গল্পেই সিংহভাগ ছবি তৈরি হচ্ছে। এক সময়ে বাংলা ছবিকে দেশের অন্যান্য আঞ্চলিক ইন্ডাস্ট্রি শ্রদ্ধা করত। আমার বিশ্বাস, নিয়মিত ভাল কাজ করতে থাকলে একদিন আমরাও সেই সম্মান অর্জন করতে পারব।

image of Vikram and Madhumita

‘সূর্য’ ছবির একটি দৃশ্যে বিক্রম ও মধুমিতা। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: মধুমিতার সঙ্গে আপনার এটা দ্বিতীয় ছবি। ওর মধ্যে কী কী পরিবর্তন লক্ষ করলেন?

বিক্রম: দুটো ছবিই আমরা প্রায় এক বছরের ব্যবধানে শুট করি। এর মধ্যে তো মানুষ সেই ভাবে বদলে যায় না (হাসি)। ও খুবই ভাল অভিনেত্রী। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক কিছু মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে হয়। সেখানে শুধু মধুমিতা নয়, দর্শনার (দর্শনা বণিক) কথাও বলতে চাই। বাকিরাও প্রত্যেকেই ভাল কাজ করেছেন।

প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ১৫ বছর রয়েছেন। এত দিন পর কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে আপনাকে ভাবা হচ্ছে। সফরকে ফিরে দেখলে কী মনে হয়?

বিক্রম: আমার সফর সবে শুরু হয়েছে। আমাকে যে মুখ্য চরিত্রে নির্বাচন করা যায়, সেটা মানুষকে বোঝাতে আমার ১১ বছর সময় লেগেছে। আমাকে নায়ক করার দায়িত্ব তো প্রযোজক বা পরিচালকের নয়! কারণ, এটা আমার কেরিয়ার। তাই নিশ্চয়ই আমার পারফরম্যান্স বা অন্য কোথাও খামতি ছিল। তার থেকেও বড় কথা, বহু বছর আমি লোকের কাছে হাত পেতে কাজ চাইতে পারিনি। এটা আমার দোষ। পরে বুঝলাম, আমার ছবি দর্শকের পছন্দ হতেই পারে। কিন্তু তার সঙ্গে কাজ পাওয়ার সম্পর্ক হয়তো নেই। বুঝতে পারলাম, আমাকেই গিয়ে কাজ চাইতে হবে।

প্রশ্ন: তার পর কবে সুফল পেলেন?

বিক্রম: ২০১০ থেকে টানা ধারাবাহিকে অভিনয় করেছি। ছোট পর্দার মুখ্যচরিত্র করতে গিয়ে ছবির মুখ্যচরিত্রের জন্য যে সময়টা দিতে হয়, সেটা ছিল না। আমার কোনও আত্মীয় ইন্ডাস্ট্রিতে নেই। ছবির প্রি-প্রোডাকশন, ওয়ার্কশপ, শুটিং বা পরে প্রচার— এই বিষয়গুলোয় গাইড করার মতো কেউ ছিল না। ২০১৯ থেকে আমি বলতে শুরু করি, যে ছবি করতে চাই। আমাকে সুযোগ দেওয়া হোক। নায়ক হিসেবে পর্দায় উপস্থিত হতে গেলে আমার কী কী দায়িত্ব থাকা উচিত, সেটা বোঝার চেষ্টা করেছি। দু’বছর সময় লেগেছিল।

প্রশ্ন: নিজেকে পরিবর্তনের কথা বললেন। কী ভাবে সেটা সম্ভব হল?

বিক্রম: আগে ভাবতাম, আমি তো অভিনেতা। ফ্লোরে গিয়ে এফর্ট দিলেই হবে। নিজেকে চাকরিজীবীদের মতো ভাবতাম। ১০টা থেকে ৫টা কাজ করব। তার পর বাড়ি এসে ঘুমোব! নিজের ব্যবসা হলে যে ভাবে ভাবা উচিত, এখন আমি সেই ভাবেই ভাবি।

প্রশ্ন: উপকার পাচ্ছেন?

বিক্রম: (হেসে) সেটা আর নিজের মুখে বলতে চাই না। অনেকের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছি। কাজ পাচ্ছি। তবে আমাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

প্রশ্ন: বর্তমান ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক হিসেবে টিকে থাকা কতটা কঠিন?

বিক্রম: খুবই চ্যালেঞ্জিং। আগে কোনও বড় প্রযোজক সারা রাজ্য থেকে প্রতিভা খুঁজে বার করতেন। তাঁদের সঙ্গে কয়েক বছরের চুক্তি করতেন। সেই সময়ের মধ্যে ওই অভিনেতাদের কেরিয়ারটাও গুছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। অভিনেতা কী দিয়ে শুরু করবেন, পরের ছবিটা কেমন হওয়া উচিত— সবটাই গাইড করতেন। প্রযোজক ছিলেন অনেকটা অভিভাবকের মতো। আমার মতো এখন যাঁরা কেরিয়ার শুরু করছেন, তাঁদের কোনও অভিভাবক নেই। অভিভাবক ছাড়া কোনও অনাথ শিশুকে যতটা কষ্ট করে নিজের জীবন গোছাতে হয়, আজকের ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক হিসেবে শুরু করতে হলে দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তাঁকেও বুঝতে হবে যে, তাঁর কিন্তু কোনও অভিভাবক নেই!

image of Vikram Chatterjee

ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: টলিপাড়ায় কি সাহায্যের পরিবর্তে বিপদে ফেলার মানুষের সংখ্যা বেশি?

বিক্রম: সেটা পৃথিবীর সব ইন্ডাস্ট্রিতেই রয়েছে। সে দিন দেখলাম, কার্তিক আরিয়ান একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ইন্ডাস্ট্রিতে বন্ধু বলে কিছু হয় না। কিন্তু, আমাদের ইন্ডাস্ট্রির পরিস্থিতি সে রকম নয়। কিছু মানুষ রয়েছেন, যাঁরা এখনও আমার প্রচুর উপকার করেন। তাঁর চান, যাতে আমি আরও ভাল কাজ পাই। আবার কিছু মানুষ থাকবেন, যাঁরা সেটা চাইবেন না। স্বাভাবিক বিষয়। আমার কাজ পরিশ্রম করা। আর আমি সেটা করতেই থাকব।

প্রশ্ন: আপনি কি ধারাবাহিকে আর ফিরবেন না?

বিক্রম: ছোট পর্দার নির্মাতা এবং দর্শকের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। কারণ তাঁরাই আমার মেরুদণ্ড শক্ত করেছেন। তিন বছর ছবি করার জন্য অপেক্ষা করার সাহস জুগিয়েছেন। কিন্তু এই মুহূর্তে ছবির প্রতি আমার যে দায়িত্ব রয়েছে, তার পর ধারাবাহিকের জন্য মাসে ২৩-২৪ দিন সময় বার করতে পারব না। আবার ধারাবাহিক করলে ছবিতে সময় দিতে পারব না। আমার মনে হয়, সেটা করলে আমি দুই ক্ষেত্রের দর্শকের সঙ্গেই প্রতারণা করব। সেটা চাই না।

প্রশ্ন: এর পর কী কী কাজ?

বিক্রম: ‘দুর্গাপুর জংশন’-এর ডাবিং হয়ে গিয়েছে। ‘পারিয়া ২’-এর প্রস্তুতি শুরু করব। তার জন্য নিজেকে আরও বদলাতে হবে। ছ’মাস সময় লাগবে।

আরও পড়ুন
Advertisement