Celebrity Interview

‘হুব্বা’ তৈরি করেছি বলে যে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, তা মনে করি না: ব্রাত্য

মুক্তি পাচ্ছে ব্রাত্য বসু পরিচালিত ছবি ‘হুব্বা’। ছবি মুক্তির আগে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি পরিচালক।

Advertisement
অভিনন্দন দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:০৬
A candid chat with actor director Bratya Basu before the release of his upcoming film Hubba

ব্রাত্য বসু। —ফাইল চিত্র।

তাঁর ব্যস্ততা কমার কোনও লক্ষণ নেই। তা বলে ‘ক্লান্তি’ শব্দটি মনে হয় ব্রাত্য বসুর অভিধানে নেই। শিল্পীসত্তা এবং রাজনীতি সামলাচ্ছেন সমান তালে। তাঁর পরিচালিত ছবির প্রচারের জন্যও হাতে সময় কম। একের পর এক সাক্ষাৎকার দিয়ে চলেছেন। কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা রেখে ইতিবাচক কাজ করতে চান। বিশ্বাস করেন এমন কাজে, যা সমাজে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। সম্প্রতি এক সন্ধ্যায় খোলা মনে আনন্দবাজার অনলাইনের প্রশ্নের উত্তর দিলেন ব্রাত্য।

Advertisement

প্রশ্ন: বছরের একদম শুরু থেকেই আপনি ব্যস্ত। কেমন আছেন?

ব্রাত্য: আমি এতটাই কাজের চাপে থাকি যে সব সময় বুঝতে পারি না যে, ভাল আছি না কি খারাপ। কী বলা উচিত সেটাই ভেবে পাই না। তবে কাজের মধ্যে থাকাটাই পছন্দ করি। কারণ, কাজের মধ্যে থাকলেই মানসিক দিক থেকে অনেক বেশি ফুরফুরে থাকা যায়।

প্রশ্ন: ‘হুব্বা’-র ট্রেলার প্রকাশের পর বাংলাদেশ থেকেও দারুণ প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে। সেটা কি ছবিতে মোশারম করিমের উপস্থিতির জন্য?

ব্রাত্য: ইউটিউবে ১২ লক্ষেরও বেশি মানুষ ছবির ট্রেলার দেখেছেন। এটা তো খুবই ভাল। মোশারফ করিম অবশ্যই সেখানে বড় ফ্যাক্টর। কারণ, উনি বাংলাদেশের এক জন বৈগ্রহিক অভিনেতা। ট্রেলার নিয়ে যে উদ্দীপনা রয়েছে, তার মধ্যে এ পার বাংলার ১০ শতাংশ মানুষও ছবিটা যদি দেখেন, তা হলে তো ছবি সফল।

প্রশ্ন: আপনার পরিচালিত শেষ ছবি ‘ডিকশনারি’ ছিল পারিবারিক গল্প। সেখান থেকে গ্যাংস্টারের বায়োপিক তৈরি করলেন। এই স্বাদবদলের কারণ কী?

ব্রাত্য: আমার প্রথম ছবি ‘রাস্তা’তেও তো এ রকম প্রান্তিক মানুষের গল্প বলেছিলাম। পরের ছবি ‘তিস্তা’য় নারী-পুরুষের সম্পর্কের কথা বলেছি। আসলে পরিচালক হিসেবে ছবির ক্ষেত্রে আমি বিভিন্ন রকমের বিষয় পছন্দ করি। দর্শক হিসেবে দেখতেও ভালবাসি। আমার রামগোপাল বর্মার ‘সত্য’ও ভাল লাগে, আবার ভিকি কৌশলের ‘মসান’ও ভাল লাগে। জাতপাতের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ‘কোর্ট’ যেমন ভাল লাগে, তেমনই ‘আব তক ছপ্পন’ও ভাল লাগে।

প্রশ্ন: এক সময় হুগলির ‘ত্রাস’ ছিলেন শ্যামল দাস ওরফে হুব্বা শ্যামল। আপনি হঠাৎ তার জীবন নিয়ে ছবির তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন কেন?

ব্রাত্য: আমি হুব্বাকে কখনও দেখিনি। ২০০৫ সালে ও যখন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে, তখন আমি প্রথম ওর নাম শুনি। পরবর্তী সময়ে সুপ্রতিম সরকারের ‘আবার গোয়েন্দাপীঠ’ বইতে হুব্বা শ্যামলের কথা পড়ে ওকে নিয়ে ছবি তৈরির ইচ্ছেটা জাগে। ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে সুপ্রতিম আমাকে অনেকটাই সাহায্য করেছে।

A candid chat with actor director Bratya Basu before the release of his upcoming film Hubba

শুটিংয়ের ফাঁকে মোশারফ করিমের সঙ্গে ব্রাত্য বসু। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: আপনি রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। গ্যাংস্টারের জীবন নিয়ে ছবি করলে আপনার ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে বলে মনে হয়নি?

ব্রাত্য: আসলে এখন সময় যতটা নেগেটিভ, মানুষ হিসেবে আমি ততটা নেগেটিভ নই। তাই কী হতে পারে, সেই নেতিবাচক ভাবনা নিয়ে আমি এগোই না। যা কাজ করি সেটা ইতিবাচক দিক থেকে করি এবং সমাজেও তার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া আশা করি। কিন্তু সমাজে তো ইচিবাচক এবং নেতিবাচক, এই দু’ধরনের মানসিকতার মানুষই রয়েছে। তাই আমি এটা নিয়ে খুব একটা ভাবতে রাজি নই। কেউ কিছু বললে বলবে। সেটা তাদের চিন্তা।

প্রশ্ন: ‘ডিকশনারি’র সময় মোশারফ করিমের সঙ্গে সম্পর্কের কারণেই কি ‘হুব্বা’য় ওঁকে নামভূমিকায় নির্বাচন করেছিলেন?

ব্রাত্য: ওই ছবিটা করার সময়েই ‘হুব্বা’ করার সিদ্ধান্ত নিই এবং মোশারফই আমার প্রথম পছন্দ ছিলেন। আমাকে এ রকমও অনেকে বলছেন যে, চরিত্রটায় আমি নিজে কেন অভিনয় করলাম না।

প্রশ্ন: কেন করলেন না?

ব্রাত্য: (হেসে) যখন পরিচালনা করি, তখন তার মধ্যেই ডুবে থাকি। আবার অভিনেতা হিসেবে ফ্লোরে ঢুকি ঠান্ডা মাথায়। সত্যি বলতে, আমি দু’দিক ব্যালান্স করতে পারি না। অভিনয়ের সঙ্গেই নাটক তা-ও নির্দেশনা করা যায়। সিনেমায় এখনও সেই কৌশলটা রপ্ত করে উঠতে পারিনি। হয়তো ভবিষ্যতে কোনও দিন করতে পারব (হাসি)।

প্রশ্ন: আপনার দলের তারকা ব্যক্তিত্বদের অনেকের কাছেই কিন্তু আপনি একটা ‘মিরাক্‌ল’। একই সঙ্গে শিল্পীসত্তা এবং রাজনীতি সামলাচ্ছেন। শুনেছি, আপনি নাকি তিন ঘণ্টা ঘুমোন?

ব্রাত্য: (হেসে) এখন একটু বেশি ঘুমোচ্ছি। কারণ, বয়স তো বাড়ছে। আমার প্রশ্ন, আদৌ কি ব্যালান্স করতে পারি? তাই যে দিন ব্যালান্স করতে পারব, সে দিন এই প্রশ্নের উত্তর দেব।

প্রশ্ন: ‘হুব্বা’ তো বাংলাদেশেও মুক্তি পাওয়ার কথা।

ব্রাত্য: প্রযোজকেরা তো সেটাই বলেছেন। আমিও আশাবাদী। দুই বাংলার দর্শক ছবিটা দেখলে তার থেকে ভাল আর কিছু হতে পারে না।

প্রশ্ন: কাজের ব্যস্ততায় বাংলা ছবি দেখার সময় পান?

ব্রাত্য: দেখি। সম্প্রতি ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী পরিচালিত ‘ছোটলোক’ ওয়েব সিরিজ়টা দেখেছি। খুবই ভাল লেগেছে। সিরিজ় হলেও পুরো সিনেমার মতো। দেখার পর এক জন বাঙালি হিসেবে আমি গর্বিত।

প্রশ্ন: আপনি তো রাজ্যের শাসকদলের সদস্য। আপনার মতে দলে ‘হুব্বা’র মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিটি কে? কারও নাম নিতে চাইবেন?

ব্রাত্য: না। দেখুন, আমার মতে যাবতীয় কেওস বা ক্যাকোফনি সংবাদমাধ্যম ঘটাচ্ছে। তাদের মধ্যে আলোচনা চলে কে বেশি বা কে কম। আমি সেই তুলনামূলক আলোচনা করতে রাজি নই।

প্রশ্ন: আপনি অনেকটা সময় নিয়ে ছবি তৈরি করেন। এর পর কি আরও ঘন ঘন পরিচালক ব্রাত্য বসুকে পাওয়া যাবে?

ব্রাত্য: আমি এর পর নাটক করতে পারি। আবার ইচ্ছে হলে একটা উপন্যাস লিখতে পারি। ছবিতে অভিনয়ও করতে পারি। ‘ডিকশনারি’ করেছিলাম শেষ ছবি মুক্তির ১০ বছর পরে। শুধুই ছবি পরিচলনা করব, এ রকম কোনও চিন্তাভাবনা আমার নেই। ভাল-মন্দের মিশেলে বিভিন্ন রকমের কাজ করে যেতে চাই।

প্রশ্ন: ‘হুব্বা’র মুক্তিও তো অনেকটা দেরি করে হচ্ছে

ব্রাত্য: এই ছবিটা গত বছর অগস্টে তৈরি হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আমি পুজোর আগে রিলিজ় করতে চাইনি। তার পর বছরের শেষে আবার শাহরুখ খান এবং সলমন খানের ছবি ছিল। ফলে ছবিটা আরও কিছুটা দেরি করে রিলিজ় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আমার ছবিতে বড় তারকা নেই। তাই প্রযোজকের সিদ্ধান্তকে আমি মর্যাদা দিয়েছি।

প্রশ্ন: নতুন ছবির কোনও ভাবনা?

ব্রাত্য: একটা ছবির চিত্রনাট্য লিখছি। কিন্তু সেটা নিয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করার মতো জায়গায় আমি নেই।

প্রশ্ন: ভোটের দামামা বেজে গিয়েছে। পরিস্থিতি আপনি কী ভাবে দেখছেন?

ব্রাত্য: হ্যাঁ। ভোটের প্রচারে ব্যস্ত হয়ে যাব। তাই প্রযোজককেও বলেছিলাম ‘হুব্বা’ যাতে জানুয়ারিতে মুক্তি পায়। কারণ, এর পর আমি আর সময় দিতে পারব না। ভোটের প্রচারের ফাঁকে নতুন ছবির চিত্রনাট্য লিখব।

Advertisement
আরও পড়ুন