স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: বছরের শুরুতে ‘কী পারলাম, কী পারলাম না’-র হিসাব করার অভ্যাস আছে?
স্বস্তিকা: এখন সব বছরই আর পাঁচটা বছরের মতো। ছোটবেলায় খুব রেজ়োলিউশন নিতাম। নখ খাব না, ফাস্ট ফুড খাব না। এ বছর ভেবেছি, সিগারেট খাব না। তিন দিন পেরেছি, এক দিন পারিনি। পরের দিন আবার খুব সচেতন হয়ে নতুন করে চেষ্টা শুরু করলাম। শেষ দু’দিন খাইনি। আজ সকালে একটা খেয়ে ফেলেছি। এ ভাবেই যুদ্ধ করতে করতে পেরে যাব আশা করি।
প্রশ্ন: আর পেশাগত জীবনে?
স্বস্তিকা: হিন্দিতে প্রায় চারটে কাজ এ বছর মুক্তি পাওয়ার কথা। এগুলো সব আগে করেছি। কিন্তু আমাদের এখানে যত তাড়াতাড়ি শুট শেষ হয়ে একটা ছবি মুক্তি পায়, মুম্বইয়ে তা হয় না। কারণ, ওরা পোস্ট প্রোডাকশনে অনেকটা সময় নেয়। বাংলায় ‘নিখোঁজ’-এর দ্বিতীয় সিজ়ন আসবে। ‘টেক্কা’র শুট শুরু হয়েছে। অনেকগুলো ভাল কাজের কথা চলছে। বাংলাদেশে অনেক দিন ধরে কাজ করার ইচ্ছা। একটা কাজের কথা চলছিল সেই কোভিডের সময় থেকে। এ বার শেষমেশ হচ্ছে। এপ্রিলে যাব ঢাকা।
প্রশ্ন: বছরের শুরুতেই মুক্তি পেয়েছে আপনার ছবি ‘বিজয়ার পরে’। সারা বছরের জন্য এটা কতটা আশা জোগায়?
স্বস্তিকা: অনেকটাই। এই ছবিটা এ বার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে দেখানো হয়েছিল। ভাল প্রতিক্রিয়া পেয়েছিলাম। এখন ধীরে ধীরে মানুষ আবার হলে গিয়ে সিনেমা দেখছেন। জানি, ওটিটি-তেও দেখেন। তবে গতে কয়েক বছরে বাংলা সিনেমা বেশি গোয়েন্দাকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছে। পারিবারিক ছবি সে ভাবে হয়নি। এটা একদমই সেই রকম একটা ছবি। দর্শক যদি দেখেন, ভালই লাগবে।
প্রশ্ন: ছবির নামের সঙ্গে দুর্গাপুজো জুড়ে রয়েছে..।
স্বস্তিকা: আমাদের চারপাশে যদি দেখেন, এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে বেশির ভাগ সময় বাবা-মায়েরা একাই থাকেন। সন্তানরা বাইরে থাকে এবং তাদের ফেরার অপেক্ষায় থাকেন বাবা-মায়েরা। বাঙালিদের জন্য দুর্গাপুজোটা ঘরে ফেরার সময়। আর মা দুর্গারও বাপের বাড়ি ফেরার সময় এটা। দেবীর আরাধনা করলেও বাঙালির কাছে মা দুর্গার সঙ্গে সম্পর্কটা অনেক বেশি আন্তরিক। আমার চরিত্রের নাম এখানে মৃন্ময়ী। সে বাড়ি ফিরছে পুজোর সময়। পুজোর পাঁচ দিনের গল্প।
প্রশ্ন: আপনিও কি মেয়ে অন্বেষার ঘরের ফেরার অপেক্ষায় থাকেন এখন?
স্বস্তিকা: মুম্বইয়ের কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছিল মেয়ে। তখন আমি মূলত মুম্বইয়ে কাজের জন্য যেতাম ঠিকই। কিন্তু ওখানে কাজ করতে পারলে যে মেয়ের সঙ্গেও দেখা হবে, সেই টান ছিল। এখন অবশ্য ও মাস্টার্সের পড়াশোনা করতে ইউকে চলে গিয়েছে। ও যখন ফেরে, আমি চেষ্টা করি সেই সময় কলকাতা ফিরতে। ওর ফেরার সময় আমি যদি মুম্বইয়ে থাকি, ও ওখানে ফেরে। তার পর হয়তো ওখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে আমরা একসঙ্গে কলকাতা ফিরি। তাই ওর ঘরে ফেরার সময় অনুযায়ী আমি আমার কাজগুলো গুছিয়ে ফেলার চেষ্টা করি। একটা সময়ের পর তো বাবা-মায়েদের সন্তানদের জন্য অপেক্ষা করাটা জীবনের একটা অঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়। কারও বেশি বয়সে হয়, কারও কম বয়সে। আমার ক্ষেত্রে সেটা এখনই শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন কলকাতায় আছে। কিন্তু যত ওর যাওয়ার দিন এগিয়ে আসে মাথার মধ্যে একটা ঘড়ির কাঁটা চলতে থাকে। দেশের মধ্যে থাকলে তা-ও ঘণ্টা দুই-তিনের মধ্যে পৌঁছনো যায়। বিদেশ হলেই মনে হয়, কত দূরে চলে গেল!
প্রশ্ন: আপনার পর্দার মেয়ে, মানে ‘কলা’র তৃপ্তি দিমরি ‘অ্যানিম্যাল’-এর পর দেশজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন। কথা হয়েছে আপনাদের?
স্বস্তিকা: অনেক দিন দেখা হয়নি। এ বার মুম্বইয়ে গেলে দেখা করার কথা। ইনস্টাগ্রামে মাঝেমাঝে কথা হয়। খুবই ভাল মেয়ে। ও খুবই নর্ম্যাল। ‘অ্যানিম্যাল’ মুক্তি পাওয়ার আগে আমার আর অন্বিতার (দত্ত গুপ্তন, ‘কলা’র পরিচালক) সঙ্গে দেখা হয়েছিল। আমরা বলাবলি করছিলাম, ‘‘এত বড় একটা ছবি বেরোচ্ছে, এর পরও তুই একই রকম থাকবি তো? মাথাটা যেন ঘুরে না যায়।’’
প্রশ্ন: মুম্বই কি অন্বেষার টানেই যাওয়া? না কি ওখানে কাজ করার অন্য রকম অভিজ্ঞতাই আসল?
স্বস্তিকা: আলাদা করে হিন্দি আর বাংলায় অভিনয়ে কোনও পার্থক্য নেই। ওখানে পার্থক্যটা বাজেটের। এখানকার মতো খুব তাড়াহুড়োয় কাজ হয় না। তবে এখানে যে বাজেটের জন্যই তা়ড়াহুড়োয় কাজ হয়, তা নয়। পরিচালকের উপর অনেকটাই নির্ভর করে। ‘নিখোঁজ’ কিন্তু খুব তাড়াহুড়ো করে বানানো নয়। খুব যত্ন নিয়ে তৈরি কাজ। হয়তো সেই কারণেই এত দর্শকের পছন্দ হয়েছে। তবে হিন্দি কাজের ক্ষেত্রে আমার পরিশ্রম চার গুণ হয়। যতটা সাবলীল ভাবে নিজের মাতৃভাষা বলতে পারি, ততটা সহজে তো হিন্দি পারি না। সংলাপ ভুলে গেলে নিজে বানিয়ে বলে দেওয়ার মতো পারদর্শী এখনও আমি হইনি।
প্রশ্ন: ইনটেন্স চরিত্র না হলে কি এখন আর কাজ করেন না?
স্বস্তিকা: এমন কোনও কাজ করতে চাই না, যা দর্শক পপকর্ন খেতে খেতে দেখে ভুলে যাবেন। কোনও দিনই চাইনি। এখন চল্লিশের বেশি বয়স হয়ে গেল। এখন তো আরও চাই না। ছোট থেকে স্কুল-কলেজে পড়েছি, পৃথিবীতে সাতটাই গল্প রয়েছে। সেই সাতটার মধ্যেই ঘোরাফেরা করে বাকি সব গল্প। তাই কী ভাবে গল্পটা বলা হচ্ছে, সেটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। আর সেই গল্পে আমার চরিত্রটা কী করছে, সেটাও দেখি। পর্দায় কত ক্ষণ থাকলাম, তার উপর কিছু নির্ভর করে না। কিন্তু যত ক্ষণ থাকলাম, তত ক্ষণ কী করছি, সেটাই আসল। দর্শক যেন আমায় মনে রাখেন।
প্রশ্ন: অভিনয়ের জন্য দর্শক যেমন মনে রাখেন, আজকাল মানুষের স্মৃতিতে থাকার জন্য সমাজমাধ্যমেরও একটা বড় ভূমিকা থাকে। আপনার কেরিয়ারের শুরুতে সেটা ছিল না। সময়টা মিস্ করেন?
স্বস্তিকা: সেই সময়ের একটা আলাদা মূল্যবোধ ছিল। এখনকার সময়ের একটা আলাদা তাৎপর্য রয়েছে। সমাজমাধ্যমের জন্য তারকাদের প্রতি মানুষের ধারণা অনেকটা বদলে গিয়েছে। আগে সংবাদমাধ্যম আমাদের নিয়ে যা লিখত, মানুষ তা-ই বিশ্বাস করতেন। এখন তাঁদের একটা সুযোগ রয়েছে আমাদের বাস্তবটা জানার। আমার পর্দার বাইরে কেমন থাকি, সেটা বুঝতে পারেন। বা কোথাও আমায় নিয়ে কোনও ভুল খবর বেরোলে আমার সেই ধারণা শুধরে দেওয়ার একটা জায়গা রয়েছে। তবে এটা ঠিক যে, এমনও অনেক মানুষ রয়েছে, যাঁরা বাস্তবে যেমন, সমাজমাধ্যমে একদম তার বিপরীত একটা ছবি তুলে ধরেন। তেমন অনেককেই আমি চিনি। তবে আমি আমার কথা বলতে পারি, মানুষ নিশ্চয়ই আমার কাজের জন্য আমায় মনে রাখবেন। কিন্তু আমি মানুষ হিসাবে কেমন, সেটার জন্যেও যাতে আমায় মনে রাখেন, সেটাই চাইব। তা ছাড়া, সমাজমাধ্যমের জন্য অনেক ধরনের সাহায্য এখন পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: আপনি তো পথকুকুরদের নিয়ে সমাজমাধ্যমে খুব সক্রিয়।
স্বস্তিকা: আগে শুধুই কুকুর ছিল। এখন বেড়াল, গাধা, ঘোড়া, হাতি সব হয়ে গিয়েছে। দেশ জুড়ে নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পশুপাখি নিয়ে কাজ করে। সমাজমাধ্যম না থাকলে এদের সঙ্গে যোগাযোগ হত না। আমি আর আমার ম্যানেজার রোজ কত পশুপাখির জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করে দিই। সেটা দুর্গাপুর হোক বা আন্দামান— কলকাতায় বসে সমাজমাধ্যম ছাড়া এই সাহায্যটা পেতাম কী ভাবে!
প্রশ্ন: আর সমাজমাধ্যমের খারাপ দিকগুলো?
স্বস্তিকা: সেগুলো তো আছেই। জানি, দশটা লোকে দশটা বাজে কথা বলে। গুচ্ছের ট্রোল হয়, ভুল খবর বেরোয়। কিন্তু ট্রোল করুক, আমার কিছু যায়-আসে না। আগে দরকার মনে হলে জবাব দিতাম। এখন সেটাও কমিয়ে দিয়েছি। একটা ছবি হিট হলে খুব আনন্দ হয়। কিন্তু সেটা সাময়িক। আমায় ভাল থাকতে সাহায্য করে কিন্তু সমাজমাধ্যমের এই কাজগুলো। আমার ম্যানেজারকে বলা আছে, কাজের পাঁচটা ফোন মিস্ হলে কোনও ব্যাপার নয়। কিন্তু পশুপাখির দরকারি ফোনগুলো যেন অবশ্যই দেখা হয়। আমি বেশ কিছু কুকুরকে ভার্চুয়ালি দত্তক নিয়েছি। তাদের যাবতীয় খরচ মাসে মাসে আমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে যায়। সমাজমাধ্যমে আমি নিজেই আমার সব ডিএম চেক করি। দেখে নিই, কুকুর-বেড়াল নিয়ে কারও কোনও মেসেজ আছে কি না। উল্টোপাল্টা জিনিস হলে একদম পাত্তা দিই না।
প্রশ্ন: ট্রোলিং কখনও খুব সমস্যা তৈরি করেছে?
স্বস্তিকা: এগুলোকে আর সমস্যাই ভাবি না। এ বছর আমার ৪৩ হল। জীবনের অর্ধেকের বেশি বাঁচা হয়ে গিয়েছে। যেগুলো অপ্রয়োজনীয়, সেগুলো নিয়ে আর কেন ভাবব বলুন তো! বাবা-মা না থাকাটা সবচেয়ে ভয়ের জায়গা। বাবা-মায়ের বয়স হয়ে গেলে সব সময় মাথায় চলে, আমি কী করে একা থাকব, কী করে একা সংসার চালাব। আমার বাবা-মা দু’জনেই বয়সের এত আগে চলে গিয়েছেন যে, সেই ভয়গুলো আমি পেরিয়ে এসেছি। তাই কিছু নিয়েই আর মাথা ঘামাই না।
প্রশ্ন: মাথার উপর থেকে অভিভাবকেরা চলে গেলে অনেক ক্ষেত্রেই দিশাহীন লাগে। আপনার কোনও ক্রাইসিসে কার কাছে উপদেশ নেন?
স্বস্তিকা: নিজের একটা ইকো সিস্টেম তৈরি করে ফেলেছি। যারা আমায় নিয়ে সমাজমাধ্যমে আদিখ্যেতা করে না, আমিও করি না। কিন্তু যে কোনও বিপদে দাদার মতো কাউকে পেয়ে যাই। জানি, যে কোনও সময় তারা আমার ফোন তুলবে। সমস্যার একটা সুরাহা বেরোবে। ওই মানুষগুলোকে না ভগবানই আপনাকে জোগাড় করে দেবে। এ রকম দু-তিন জন আশপাশে থাকলেই তো হয়ে যায়। শরীর খারাপ হলে হাসপাতালে নিয়ে যাবে, আইনি জটিলতা হলে থানা-পুলিশ করতে পারবে— এই তো দরকার জীবনে। এমন মানুষ ঠিক জুটে যায়। আর আমি খুব ছোট থেকেই ধার্মিক। বাড়িতে পুজো-আচ্চার চল ছিল। আমি রোজ স্নান করে পুজো করি। কোথাও থেকে তো মানুষকে একটা জোর পেতে হবে। ঈশ্বরের প্রতি ভরসা-ভক্তি একটা জোর আনে।
প্রশ্ন: ইকো সিস্টেমের কথা বলছিলেন। ইন্ডাস্ট্রির একদম ভিতরের লোকদের চেয়ে আপনি এখন বোধহয় পরমা-অভিষেকদের (পোশাকশিল্পী) সঙ্গে বেশি স্বচ্ছন্দ?
স্বস্তিকা: ওই বন্ধুগুলোও কিন্তু জোগাড় হয়ে গিয়েছে। কেউ তো ভাবে না, চল্লিশ বছরের পর হঠাৎ দশটা বন্ধু একসঙ্গে জুটে যাবে! যাদের মধ্যে কূটকচালি নেই, যারা সত্যিই আমার কাজ দেখতে ইচ্ছুক, যাদের সঙ্গে আমি নিজের মতো থাকতে পারি, অনায়াসে বেড়াতে যেতে পারি। আমার বিশ্বাস, ভগবানই এদের জোগাড় করে দিয়েছে। এই তো গত মাসে ২৫-২৬ তারিখে আমি অভিষেক-সায়কদের সঙ্গে শান্তিনিকেতন ঘুরে এলাম। দিব্যি ট্রেনে করে গেলাম, টোটো করে ঘুরলাম, পৌষমেলা দেখলাম। আবার ট্রেনেই ফিরে এলাম। ওরাই সব ব্যবস্থা করে দিয়েছে। আমার চেয়ে এরা বয়সে অনেক ছোট বলে আমায় এসএম বলে ডাকে। ওরা যাচ্ছিল। বলল, ‘‘এসএম যাবে?’’ আমিও রাজি হয়ে গেলাম। আমার ম্যানেজারের সঙ্গেও আমার অন্য রকমের বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে। ওর একটা স্কুটি আছে। সেই স্কুটি করেই আমি অনেক সময় মিটিং বা শুটে চলে যাই।
প্রশ্ন: প্রাক্তনদের সঙ্গে আপনার সহজ বন্ধুত্ব নিয়েও লোকে অনেক সময় প্রশংসা করেন।
স্বস্তিকা: কূটকচালিও করে। শুধু সমাজমাধ্যম নয়, আমাদের চারপাশেও তো প্রচুর আত্মীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী— সব জায়গাতেই নানা রকম লোক থাকে। তবে তাদের আমরা জীবনে সেই জায়গাটা দিই না যে, মুখের উপর কিছু বলতে পারবে। সব আত্মীয়দের কি আপনার ভাল লাগে? জানি, পিছন ঘুরলেই চারটে বাজে কথা বলবে! আগে ফিসফিস করে বলত, এখন সমাজমাধ্যমে জোর গলায় বলে। এ সব নিয়ে আমি ব্যস্ত হই না। এই তো আমি নববর্ষের পার্টির পর সৃজিত (মুখোপাধ্যায়) আর পরমের (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) সঙ্গে একটা ছবি দিয়ে লিখেছিলাম, ‘প্রাক্তন বলে কিছুই হয় না’ (হাসি)। কারণ, আমরা তো বলি পাঁচ-ছয় বছর বিয়ে হলে স্বামী-স্ত্রীও ভাই-বোন হয়ে যায়। আর ১৫ বছরে প্রাক্তন কি প্রাক্তনই থেকে যাবে? একই জায়গায় কাজ করি সবাই। তাদের ভাল-মন্দের মধ্যে মিশে আছি আমিও। অনেক বছর হয়ে গেলে কোনও ব্যক্তির মন্দগুলো আর মনে থাকে না। পরম বা সৃজিত যেই হোক, তাদের কথা যখন ভাবি, আমার কিন্তু ভালগুলোই মনে পড়ে। খারাপ মনে রাখলে আমাদেরই ক্ষতি। তিক্ততা জিইয়ে রেখে কী লাভ! পরমের কথা ভাবলে, ওর সঙ্গে কাটানো ভাল সময়টাই মনে পড়ে। সেই জন্য হয়তো সে দিন বাড়ি ফেরার সময় ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে পারলাম যে, ভাল থাকিস। ও-ও বলল, বাড়িতে ডাকবে। পিয়াকে (চক্রবর্তী) আমি অনেক বছর ধরে চিনি। আমার খুব ভাল লাগে ওকে। পরমকে বললাম, ‘‘ডাকিস, তোর জন্য না হলেও পিয়ার জন্য যাব।’’ কারণ, পিয়ার স্বামী কে, সেটা আমার কাছে জরুরি নয়। আমি আসলে তেমন মানুষই নই যে, কাউকে জড়িয়ে ধরে ‘ভাল থাকিস’ বলতে পারব না। কারও ভাল চাইতে কেন পারব না বলুন তো? আর কারও সঙ্গেই তো আমার মুখ দেখাদেখি বন্ধ বা যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়নি। আমাদের পেশায় সেটা সম্ভবও নয়। কত জনের সঙ্গে তা হলে কাজ করব না বলুন? বাড়িতে বসে থাকতে হয় তা হলে।