পায়ে বরফ বাঁধা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। আনা হচ্ছে কলকাতায়। —নিজস্ব চিত্র।
নন্দীগ্রামের রানিচকে একটি মন্দিরে হরিনাম সংকীর্তনে অংশ নিয়ে বেরনোর সময় পড়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বাঁ পায়ের সঙ্গে মাথা এবং কপালেও চোট লেগেছে। তাঁকে নন্দীগ্রাম থেকে ‘গ্রিন করিডর’ করে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে সড়কপথে। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ভিড়ের মধ্যে তাঁকে চার-পাঁচ জন ধাক্কা দেয়। ষড়ষন্ত্রেরও অভিযোগ তুলেছেন তিনি। গোটা ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। মমতা নিজেও অভিযোগ করেছেন, ঘটনার সময় কোনও পুলিশকর্মী বা জেলার পুলিশ সুপার কেউই ছিলেন না। বিজেপি এবং কংগ্রেস যদিও মমতার এই পড়ে যাওয়াকে ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করেছে।
বুধবার দুপুরে হলদিয়ায় মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে ফের নন্দীগ্রামে ফিরে আসেন মমতা। নন্দীগ্রামে রাত কাটানোর কথা ছিল তাঁর। বিকেলে তিনি যান রানিচকের গিরির বাজার এলাকায়। সেখানে একটি মন্দিরে তিনি হরিনাম সংকীর্তনের অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখান থেকে বেরনোর সময়ই পড়ে যান। মমতার দাবি, তাঁকে পিছন থেকে চার পাঁচ-জন ধাক্কা মারে। তাঁর কথায়, ‘‘ভিড়ের মধ্যে ৪-৫ জন বাইরে থেকে ঢুকে পড়েছিল। ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় আমাকে। ইচ্ছাকৃত ভাবে ধাক্কা মারা হয়। এর পিছনে ষড়যন্ত্র ছিল।’’ পড়ে গিয়ে পা ফুলে গিয়েছে বলেও জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘দেখো কিতনা ফুল গয়া।’’ পড়ে যাওয়ার পর মমতা আর হাঁটতে পারছিলেন না। তাঁকে পাঁজাকোলা করে গাড়িতে তোলা হয়। একটি দোকান থেকে বরফ নিয়ে দেওয়া হয় তাঁর বাঁ পায়ে। জড়িয়ে দেওয়া হয় কাপড়। মমতার দাবি, তাঁর বাঁ পা ফুলে গিয়েছে। কপাল ও মাথায় চোট লেগেছে। জ্বর জ্বর ভাবও রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। এমনকি তাঁর বুকে ব্যথা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মমতা।
রানিচক থেকে গাড়ি করে মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁর অস্থায়ী ঠিকানা রেয়াপাড়ার বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি গাড়ি থেকে নামতে পারছিলেন না। পায়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছে বলেও জানান। এর পরেই চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মুখ্যমন্ত্রীকে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে। মঙ্গলবার দুপুরে হেলিকপ্টারে নন্দীগ্রাম গিয়েছিলেন মমতা। কিন্তু আহত মমতাকে ‘গ্রিন করিডর’ করে কলকাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
#WATCH West Bengal CM Mamata Banerjee in Nandigram says she has suffered an injury in her leg after few people pushed her when she was near her car pic.twitter.com/D1l00MU7xw
— ANI (@ANI) March 10, 2021
মুখ্যমন্ত্রীর জন্য জেড ক্যাটাগরির নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। তাঁকে তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীরা সব সময় ঘিরে থাকেন। তা সত্ত্বেও কী ভাবে মমতার কাছাকাছি ভিড় পৌঁছে গেল এবং তাঁকে ধাক্কা দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরাও। এ রাজ্যে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে সাদা পোশাকে বহু পুলিশ থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর মতো নিরাপত্তা নিয়ে বেরোন। পদযাত্রার সময় ১০০ পুলিশ থাকে। স্কুটি চালানোর সময়ও তো কত পুলিশ ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আজ নিরাপত্তা ছিল না, এটা কি মানা যায়? আঘাত পেয়েছেন। অবশ্যই সহানুভূতি রয়েছে। কিন্তু ভোটের আগে এ নিয়ে তিনি রাজনীতি করছেন, মানুষের সহানুভূতি আদায় করছেন। সিবিআই তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’’
একই সুরে প্রশ্ন তুলেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশমন্ত্রী বলছেন, পুলিশ ছিল না। পুলিশ না থাকা অবস্থায় হামলা হল! এটা অসম্ভব। এটা নির্বাচনী গিমিক। একটা সমবেদনা তৈরি করা। আর বাংলার পুলিশমন্ত্রী যদি পুলিশ না পান, তা হলে বাংলার সাধারণ মানুষের কী হবে? তাহলে মমতা স্বীকার করুন যে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারে ভেঙে পড়েছে।’’
তৃণমূল যদিও এ সব প্রশ্নকে পাত্তা দিতে নারাজ। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘মমতা মানুষের সঙ্গে মেশেন। সেই সুযোগ নিয়ে তাঁকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পুলিশের অধীনে যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তা নেওয়া হয়নি। পুলিশ এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে। মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূলনেত্রীর ক্ষেত্রে যদি এমন হয় তা হলে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং ইঙ্গিতবাহী। যাঁরা নন্দীগ্রামে মমতার উপস্থিতি চান না এবং যাঁরা মমতার উপস্থিতিতে ভীত তাঁরাই এমন কাজ করবেন। চক্রান্ত করে না হলে এমন ঘটনা ঘটত না।’’