ডায়মন্ড হারবারের হাসপাতালে দীপক হালদার। —নিজস্ব চিত্র।
প্রচারে বেরিয়ে আক্রান্ত হলেন ডায়মন্ড হারবারের বিজেপি প্রার্থী দীপক হালদার। অভিযোগ, তৃণমূলআশ্রিত এক দল দুষ্কৃতী মোটরবাইকে করে এসে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে তাঁর উপর হামলা চালায়। শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার হরিদেবপুরে ওই হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ বিজেপি-র। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে একে বিজেপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জের বলে দাবি তৃণমূলের। হামলার পর গুরুতর জখম দীপক-সহ বিজেপি-র ৬ জন। এই ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন দলের কর্মী-সমর্থকেরা। পাশাপাশি, বিষয়টি নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়েছে বিজেপি। এই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে কমিশন।
বিজেপি-র দাবি, দীপককে মারধরের পাশাপাশি তাঁর সঙ্গে থাকা ৬ জন বিজেপি কর্মীকেও বেধড়ক মারধর করে বাইকবাহিনী। পারুলিয়া উপকূল থানার এলাকায় ওই হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। এর পর গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁদের ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দীপক বলেন, ‘‘দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে বুঝতে পেরেই তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাকে এবং দলের কর্মীদের মারধর করল। ওরা ভয় পেয়েছে। তাই এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। ভোটের দিন মানুষ এর জবাব দেবে। ডায়মন্ড হারবারে গুন্ডারাজ বন্ধ হবে।’’ যদিও দীপকের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল।
শুক্রবার মারধরের ঘটনার প্রতিবাদে জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। অবরোধের সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় তাঁদের।
স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালে দলীয় কর্মী-সমর্থকদেরকে সঙ্গে নিয়ে প্রচারে বার হন দীপক। হরিদেবপুর এলাকায় প্রচার চালানোর সময় মোটরবাইক নিয়ে বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতী চলে আসে। অভিযোগ, এর পর আচমকাই দীপকের উপর বাঁশ ও লাঠি দিয়ে হামলা চালায় তারা। দীপকের নিরাপত্তারক্ষীদের উপরও ইট ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। দীপকের পাশাপাশি বেধড়ক মারধর করা হয় বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মীকে। তবে সবথেকে বেশি আঘাত পান দীপক। তাঁর মাথা, পিঠ এবং বুকে গুরুতর আঘাত লেগেছে বলে দাবি বিজেপি-র।
শুক্রবার ঘটনার খবর পেয়েই বিশাল পুলিশ বাহিনী চলে আসে ঘটনা স্থলে। দীপক-সহ আক্রান্ত ৬ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বিজেপি-র অভিযোগ, তৃণমূলআশ্রিত গুন্ডারাই এই হামলা চালিয়েছে। বিজেপি-র টাউন মন্ডলের সভাপতি সুরজিত হালদারের অভিযোগ, ‘‘ভোটের সময় এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করতে আমাদের প্রার্থী ও কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। পিসি-ভাইপোর শিষ্যরা ডায়মন্ড হারবারে দিনের পর দিন গণতন্ত্রের গলা টিপে খুন করছে। এলাকার বাসিন্দারা সব জানেন।’’
তবে বিজেপি-র অভিযোগ খারিজ করে পাল্টা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। ডায়মন্ড হারবারের ব্লক তৃণমূল সভাপতি অরুময় গায়েনের দাবি, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোন যোগ নেই। বিজেপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই ঘটনা ঘটেছে। এখন দোষ ঢাকতে তৃণমূলের নামে কুৎসা রটিয়ে প্রচারের আলোয় আসার চেষ্টা করছে বিজেপি প্রার্থী।’’
ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে কমিশনে নালিশ জানিয়েছে বিজেপি। শুক্রবার দীপক হালদারের উপর হামলার প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে ১১৭ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। বিক্ষোভের জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে জাতীয় সড়ক। ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। অবরোধকারীদের জাতীয় সড়কের উপর থেকে সরে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন ডায়মন্ড হারবার থানার আইসি সুজন রায়। সে সময় আইসি-র সঙ্গে বচসা। জড়িয়ে পড়েন বিজেপি কর্মীরা। আইসি-র সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয়। এমনকি তাঁকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরই অবরোধকারীদের সরাতে লাঠিচার্জ করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান এবং পুলিশ কর্মীরা। লাঠির আঘাতেও ৪ কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে দাবি বিজেপি-র। আইসি-কে হেনস্থার অভিযোগে ৫ বিজেপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনার জেরে রীতিমত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ডায়মন্ড হারবার।