মিঠুন চক্রবর্তী, অভিনেতা।
রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ব্রিগেড সমাবেশ। আর সেই সমাবেশেই নাকি উপস্থিত থাকতে পারেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। সমাবেশের অব্যবহিত আগে এমনই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। আর সেই জল্পনায় ঘৃতাহুতি দিয়ে চলেছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা। কেউ-ই বলছেন না মিঠুন ‘আসবেনই’। আবার সকলেই বলছেন, ‘আসতে পারেন’। শুধু মিঠুন নয়, মোদীর ব্রিগেডে আরও তারকা সমাবেশ হতে পারে বলেও ঘরোয়া আলাপচারিতায় কেউ কেউ মন্তব্য করছেন। এসব কি ঠিক? রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসুর জবাব, “এটা ঠিক যে, অনেককেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নির্দিষ্ট করে কারও নাম বলা ঠিক হবে না। কিন্তু এটা ঠিক যে রবিবার ব্রিগেডে অনেক চমক থাকবে।” তালিকায় আর কারা আছেন তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি সায়ন্তন। তবে মিঠুনকে নিয়ে জল্পনা সবচেয়ে বেশি। আর তার মূলে সঙ্ঘ পরিবারের প্রধান মোহন ভাগবতের সঙ্গে মিঠুনের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎ।
নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে বিজেপি বাঙালির চোখে ‘হিরো’ ইমেজ রয়েছে, এমন কাউকে সামনে আনতে পারে বলে অনেক দিন ধরেই জল্পনা চলছে। সেই জল্পনায় কখনও বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, কখনও অভিনেতা প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের নাম শোনা গিয়েছে। তবে এই দু’জনেই সেই সম্ভাবনা আপাতত নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তবে চেষ্টায় নাকি এখনও হাল ছাড়েনি বিজেপি। সাম্প্রতিক জল্পনায় সকলের উপরে থাকা মিঠুন কী করবেন, সে ব্যাপারে তাঁর পক্ষ থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। মিঠুন ‘হ্যাঁ’ যেমন বলেননি। ‘না’-ও বলেননি। প্রসঙ্গত, মাসখানেক আগে কলকাতায় একটি টিভি রিয়্যালিটি শোয়ের শ্যুটিংয়ে অংশ নিতে এসে মিঠুন তাঁর কয়েকজন সহকর্মীকে বিজেপি-র হয়ে প্রচারে নামার কথা বলেছিলেন বলে শোনা গিয়েছে। যদিও এর কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন কোথাও মেলেনি। কিন্তু একদা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মিঠুন যদি সত্যিই বিরোধী বিজেপি শিবিরের হয়ে বিধানসভা ভোটের প্রচারে নামেন, তা হলে তা বড় চমক হবে বৈকি! তেমন ঘটলে সক্রিয় রাজনীতিতে মিঠুনের ‘প্রত্যাবর্তন’ও দেখবে বাঙালি।
এখনও পর্যন্ত বিজেপি-র দাবি— বাংলায় মোদীকে ‘মুখ’ করেই হবে বিধানসভা নির্বাচনের লড়াই। সে কারণেই কোনও মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা হচ্ছে না। তা হলে সেই মোদীর সঙ্গে তারকা উপস্থিতির দরকার কী? এর উত্তরও কেউ সরাসরি দিতে চাইছেন না। তবে বিজেপি-র অন্দরের খবর, তৃণমূল ইতিমধ্যে ‘বাঙালি-অবাঙালি’ প্রসঙ্গ তুলে যে ভাবে বিজেপি-কে টানা আক্রমণ করে চলেছে, তার মোকাবিলা করতেই বাঙালির এক বা একাধিক জনপ্রিয় মুখকে প্রচারের অঙ্গ করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। তাঁরা যে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হবেন এমন নয়, বরং তাঁদের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’ (প্রভাবশালী) হিসেবে ব্যবহারের চিন্তা রয়েছে। তবে এই গোটা পরিকল্পনাই কেন্দ্রীয় নেতাদের। রাজ্য বিজেপি নেতাদের অনেকেই অন্যান্য বিবিধ বিষয়ের মতো এ ব্যাপারেও এখনও পর্যন্ত অন্ধকারে।
মিঠুন-সহ বিভিন্ন তারকার নাম নিয়ে যে জল্পনা চলছে, তা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। উল্টে এর পিছনে তিনি তৃণমূলের ‘পরিকল্পিত চক্রান্ত’ দেখছেন তিনি। শনিবার সকালে আনন্দবাজার ডিজিটালকে দিলীপ বলেন, ‘‘এ সব রটিয়ে পরিকল্পিত ভাবে বিজেপি-কে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিজেপি-তে কোনও ভাল মুখ নেই, এটা প্রমাণের জন্যই সংবাদমাধ্যমকে ব্যবহার করে এমন জল্পনা তৈরির চেষ্টা করছে তৃণমূল।’’ কিন্তু তাঁর দলেরও অনেকে তো এমন সম্ভাবনার কথা বলছেন! দিলীপের জবাব, ‘‘‘কে কী বলছেন জানি না। কিন্তু আমি বলছি, এই জল্পনার কোনও ভিত্তি নেই।’’
সর্বভারতীয় মুখ হয়ে ওঠা বাঙালি গৌরাঙ্গ চক্রবর্তীর ‘মিঠুন’ হয়ে যাওয়া নিয়ে বাঙালির গর্ব চিরকালীন। সেটাই কাজে লাগাতে চায় পদ্মশিবির। মিঠুনের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয় ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই। প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মুম্বইয়ের মাড আইল্যান্ডে মিঠুনের বাংলোয় যান সঙ্ঘপ্রধান ভাগবত। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেই সফরের পরেই গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে মিঠুনের সম্পর্ক নিয়ে জল্পনা নতুন করে উঠে আসে। মিঠুন যদিও তেমন কোনও সম্ভাবনার কথা খোলসা করেননি। সে দিন শুধু জানিয়েছিলেন, ভাগবতের সঙ্গে তাঁর ‘আধ্যাত্মিক যোগ’ রয়েছে। সঙ্ঘ-মিঠুন যোগ অবশ্য সেটাই প্রথম নয়। ২০১৯ সালে দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিন নাগপুরে সঙ্ঘের সদর দফতরে গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা হেডগেওয়ারের মূর্তিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনও করেছিলেন তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভা সাংসদ।
মিঠুনের ‘রাজনৈতিক যোগাযোগ’ অবশ্য তৃণমূল সাংসদ হওয়ার আগে। একটা সময় সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন মিঠুন। সুভাষ প্রয়াত হওয়ার পর তাঁর স্ত্রী রমলা চক্রবর্তচীর হয়ে ভোটের প্রচারেও দেখা গিয়েছে মিঠুনকে। তার পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে রাজ্যসভার সাংসদ করায় প্রকাশ্যেই ‘ছোটবোন’ মমতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছিলেন মিঠুন। তবে সারদা কেলেঙ্কারি মামলায় নাম জড়ানোর পরে নিজেকে রাজনীতি থেকে গুটিয়ে নেন এই সুপারস্টার। সারদার থেকে পাওয়া টাকা চিঠি লিখে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টররেটকে (ইডি)ফেরত দিয়ে দেন মিঠুন। ক্রমশ তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়তে থাকে মিঠুনের। ২০১৬ সালে রাজ্যসভার সাংসদপদ থেকে ইস্তফা দেন তিনি।
তার চার বছর পর মিঠুনকে নিয়ে আবার রাজনৈতিক জল্পনা শুরু হয়েছে। বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি-র সঙ্গে মিঠুনের ঘনিষ্ঠতার সেই জল্পনা নিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ খুলেছে তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘‘মিঠুন’দা ব্রিগেডে আসবেন কিনা জানি না। কিন্তু ওঁর মুখে শোনা একটা কথা আমার মনে পড়ছে। উনি বলেছিলেন, ‘আমাকে রাজ্যসভায় পাঠানোর জন্য আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব’।’’