Dev

ঘাটালের স্বার্থে, দিদি আর অভিষেকের কথায় আস্থা রেখেই ঘাটাল থেকে আবার ভোট লড়তে নামছেন দেব

তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই আবার ঘাটাল থেকে ভোটে দাঁড়ানোর কথা ভেবেছেন বলে জানালেন দেব।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২২:৫৮
‘প্রধান’ ছবির সাফল্য অনুষ্ঠানে দেব।

‘প্রধান’ ছবির সাফল্য অনুষ্ঠানে দেব। —নিজস্ব চিত্র।

আসন্ন লোকসভা ভোটে তাঁর ঘাটাল থেকে প্রার্থী হওয়া নিয়ে যাবতীয় জল্পনার অবসান। তৃণমূল সাংসদ দেব নিজেই জানিয়ে দিলেন, লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে তিনিই লড়বেন। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পরেই আবার ঘাটাল থেকে ভোটে দাঁড়ানোর কথা ভেবেছেন বলে জানালেন দেব। তাঁর কথায়, ‘‘ঘাটাল থেকে আমি হয়তো ভোটে দাঁড়াব।’’ পাশাপাশি দেব জানান, তিনি এখনই এ নিয়ে বিশেষ কিছু বলতে চান না। তৃণমূলনেত্রীই যথা সময়ে তা ঘোষণা করবেন আনুষ্ঠানিক ভাবে।

Advertisement

রবিবার ‘প্রধান’ ছবির সাফল্য অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন দেব। সেখানে তিনি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি ভোটে দাঁড়াতে চাইনি। কিন্তু গতকাল (শনিবার) দিদি (তৃণমূলনেত্রী মমতা) ও অভিষেকের সঙ্গে কথা বলেছি। ওঁরা ঘাটাল নিয়ে এমন একটা প্রস্তাব দিলেন যেটা আমি বিশ্বাস করলাম। তাই এ বার হয়তো আমি ঘাটাল থেকে ভোটে দাঁড়াব।’’ তারকা-সাংসদের সংযোজন, “১০ বছর কেন্দ্রীয় সরকারকে বিশ্বাস করে কিচ্ছু পাইনি। এ বার আমি রাজ্য সরকারকে বিশ্বাস করতে চাই। দিদি ও অভিষেক আমাকে যে কথা দিয়েছেন, আশা করছি ২০২৪ সালে জিতে আমরা ঘাটালের মানুষের জন্য করতে পারব। জীবনে কাউকে তো বিশ্বাস করতে হবে।”

গত কিছু দিন ধরেই দলের হয়ে ভোটে না লড়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন দেব। দিন কয়েক আগে ঘাটালের তিনটি প্রশাসনিক পদ— ঘাটাল কলেজ, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ও বীরসিংহ উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফাও দেন সাংসদ। তার পরেই সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে দেব লিখেছিলেন, ‘‘সংসদে আমার শেষ দিন।” এতেই অনেকের মনে হয়েছিল, ঘাটাল থেকে আসন্ন লোকসভায় দেব যে আর দাঁড়াতে চাইছেন না, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। যদিও সরাসরি এ ব্যাপারে কখনওই কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানাননি দেব। অন্য দিকে, দলনেত্রী বরাবরই বুঝিয়ে এসেছেন, তিনি দেবকে দলের সাংসদ হিসাবে দেখতে আগ্রহী। সম্প্রতি একটি বৈঠকে দেবকে ‘দলের সম্পদ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কিন্তু তার পর থেকে ঘটনাপ্রবাহ যে দিকে এগোচ্ছিল, তাতে জল্পনা তৈরি হয় যে, আসন্ন লোকসভা ভোটে আর প্রার্থী হতে চাইছেন না অভিনেতা-সাংসদ। সেই আবহেই শনিবার মমতা ও অভিষেকের সঙ্গে দেখা করেন দেব। কিন্তু বৈঠকে ঠিক কী আলোচনা হয়েছে, কী স্থির হয়েছে, সে ব্যাপারে কেউই প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি। জোড়া বৈঠক সেরে দেব শুধু বলেছিলেন, “আমি ছাড়তে চাইলেও রাজনীতি আমাকে ছাড়বে না!” এর পরেই রবিবার প্রকাশ্যে মুখ খুললেন সাংসদ। জানালেন, সব কিছু ঠিক থাকলে ঘাটাল থেকে আবার তিনিই প্রার্থী হতে চলেছেন।

দেবকে নিয়ে যাবতীয় জল্পনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগে ঘাটালের তিন সরকারি পদ থেকে সাংসদের ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত। তখন থেকেই জেলায় দলের একাংশের মত, মূলত ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর দলুইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে আর ভোটে দাঁড়াতে চাইছেন না দেব। তার মধ্যেই গত বুধবার একটি অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসে। সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি। সেই অডিয়ো ক্লিপে দেবের বিরুদ্ধে কাটমানি চাওয়ার অভিযোগ ওঠে। দাবি, অডিয়ো ক্লিপে শঙ্করের কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে। শঙ্কর অবশ্য তা অস্বীকার করেছেন। দেবও এ ব্যাপারে বলেছিলেন, ‘‘দিদিই উত্তর দেবেন।’’ এর পরে শনিবার দেবের সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বৈঠক হয়। ঘটনাচক্রে, রবিবারই শঙ্করকে ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরানো হয়েছে। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডেবরার প্রাক্তন বিধায়ক রাধাকান্ত মাইতিকে। পদ যাওয়ার পর শঙ্কর বলেন, ‘‘দল ভাল মনে করেই রাধাকান্ত মাইতিকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এখানে বলার কিছু নেই।’’ প্রাক্তন বিধায়কের বক্তব্য, তাঁর সঙ্গে দেবের কোনও গোলমাল নেই। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সাংগঠনিক পদে রদবদলের কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি শঙ্কর। ঘটনাচক্রে, গত নভেম্বর মাসেই ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। শঙ্করেকে সরানো নিয়ে দেব বলেন, “দলের সাংগঠনিক ব্যাপারে আমি কোনও দিন নাক গলাইনি। ঘাটালের কোনও মানুষ বলতে পারবেন না যে আমি কাউকে কোনও পদ পাইয়ে দেওয়ার জন্য শীর্ষনেতৃত্বের কাছে আবেদন করেছি। দলের সাংগঠনিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনও ইচ্ছে আমার নেই। এই বিষয়ে দলের শীর্ষনেতৃত্ব আমার থেকে অনেক ভাল বোঝেন। তাঁরাই বিবেচনা করে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেন।”

তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, শঙ্করের সঙ্গে বিবাদের কারণে দেব যে রাজনীতি নিয়ে খানিক ‘বীতশ্রদ্ধ’ হয়ে ছিলেন অনেক দিন ধরে, তা নেতৃত্বের অজানা ছিল না। সম্প্রতি ঘাটাল উৎসব ও শিশু মেলার কমিটি গঠন নিয়ে ওই বিতর্ক চরমে পৌঁছয়। তা-ও শীর্ষ নেতৃত্বের কানে পৌঁছেছিল। এ সবের মধ্যেই গত জানুয়ারি মাসে কালীঘাটে দলনেত্রী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেই তিনি ইঙ্গিত দেন, এ বারের লোকসভা ভোটে ঘাটাল থেকে দেবকেই প্রার্থী করতে চান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলায় স্বাভাবিক ভাবেই দেব-বিরোধী নেতারাই বৈঠকে খানিকটা চাপে পড়েছিলেন। দেবের পাশে দাঁড়িয়ে জেলা নেতৃত্বের প্রতি মমতার এমন রুষ্ট হওয়ার ঘটনাতেই লোকসভা ভোটে তাঁর প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছিলেন উপস্থিত নেতারা। তার পরেও তিনটি সরকারি পদ থেকে দেবের ইস্তফা এবং পরে অডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ্যে আসার ঘটনায় নেতৃত্ব যে খুব একটা খুশি নন, তা-ই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল শঙ্করকে দলীয় পদ থেকে সরানোর ঘটনায়। এ বার দেবও প্রকাশ্যে লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ার কথা জানিয়ে দিলেন।

আরও পড়ুন
Advertisement