গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নির্বাচনী বন্ড নিয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই)-র আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এর আগে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ২০১৯-এর ১২ এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য ৬ মার্চের মধ্যে তুলে দিতে হবে এসবিআই-কে। কিন্তু তথ্যপ্রকাশের জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে শীর্ষ আদালতে আর্জি জানায় এসবিআই। সোমবার দেশের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ জানাল, এক দিনের মধ্যে, অর্থাৎ মঙ্গলবারই নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত
সমস্ত তথ্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে তুলে দিতে হবে এসবিআই-কে। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনকে একটি নির্দেশ দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আগামী শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকেল ৫টার মধ্যে তাদের সরকারি ওয়েবসাইটে বন্ড-তথ্য প্রকাশ করতে হবে।
সোমবার শুনানির শুরুতেই শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়ে এসবিআই। রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাঙ্কের উদ্দেশে সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন ছিল, “গত ২৬ দিন ধরে আপনারা কী করছিলেন? আপনাদের আবেদনে এই নিয়ে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।” প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ড ব্যবস্থাকে ‘অসাংবিধানিক’ এবং ‘ক্ষতিকারক’ বলে আখ্যা দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। আদালত এসবিআইকে নির্দেশ দিয়েছিল, অবিলম্বে যেন ওই বন্ড দেওয়া বন্ধ করে তারা। এর পাশাপাশি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোন রাজনৈতিক দল কত অনুদান পেয়েছে, কারা তাদের অনুদান দিয়েছে, তা প্রকাশ্যে আনার নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
আগেই জানা গিয়েছিল, নির্বাচনী বন্ডের তথ্যপ্রকাশ নিয়ে সোমবার দু’টি আর্জি শুনবে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। বন্ড সংক্রান্ত তথ্যপ্রকাশের জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে শীর্ষ আদালতে আর্জি জানিয়েছিল এসবিআই। সোমবার এসবিআই-এর সেই আর্জি শোনে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ।
তা ছাড়াও এসবিআই-এর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আর্জি জানিয়ে আরও একটি আর্জি জমা পড়েছিল সুপ্রিম কোর্টের কাছে। সেটিও শোনে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। প্রধান বিচারপতি ছাড়াও সাংবিধানিক বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি বিআর গাভাই, বিচারপতি জেবি পরদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্র।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট জানায়, মঙ্গলবারের মধ্যে যদি নির্বাচনী বন্ডের তথ্য এসবিআই প্রকাশ না করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আদালতের নির্দেশ ‘ইচ্ছাকৃত অমান্য’ করার অভিযোগ আদালত অবমাননার মামলা হবে। এ ছাড়াও আদালতের নির্দেশ মানার পর এসবিআই-এর চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টরকে একটি হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিরোধী শিবিরের আশা ছিল, গত ছ’বছরে বিজেপি কোন কর্পোরেট সংস্থার থেকে কত টাকা পেয়েছে, এতে তা প্রকাশ্যে আসবে। কিন্তু তথ্যপ্রকাশের জন্য এসবিআই জুন মাস পর্যন্ত সময় চাওয়ায় ভোটের আগে সেই তথ্য প্রকাশ্যে আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল। আদালতের নির্দেশের পর সেই সংশয়ের অবসান হল বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩-এর মধ্যে ছ’বছরে রাজনৈতিক দলগুলি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদা পেয়েছিল। এর মধ্যে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৬৫৬৪ কোটি টাকা। কংগ্রেস পেয়েছিল ১১৩৫ কোটি টাকা। তৃণমূল ১০৯৬ কোটি টাকা পেয়েছিল। প্রসঙ্গত, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় পরিচয় এবং অর্থের অঙ্ক গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনী বন্ডে। সেই ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিল এসবিআই। কথা ছিল, কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, স্টেট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অর্থের অঙ্কের বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দেবেন। সেই অর্থ ভাঙিয়ে নেবে রাজনৈতিক দলগুলি। মূলত কালো টাকার লেনদেন রুখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল মোদী সরকার।