দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষের কুরুচিকর মন্তব্যের অভিযোগ সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের কলকাতা দফতরে গিয়ে নালিশ ঠুকে এল তৃণমূলের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদল। রাজ্যের শাসকদলের তরফে এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ জানিয়ে বিদায়ী সাংসদ তথা এ বার বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দিলীপ ঘোষের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার আর্জি জানানো হয়েছে। কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানোর পর সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন প্রতিনিধিদলে থাকা রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যেরা।
ব্রাত্য দিলীপের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “মহিলা দেখলেই উনি যে ভাবে খারাপ কথা বলেন, আমরা এর তীব্র নিন্দা করছি।” বিজেপিকে ‘নারীবিরোধী দল’ বলে তোপ দেখে ব্রাত্য বলেন, “আসলে ওঁরা বাঙালি নারীদের আদ্যন্ত অপছন্দ করেন।” দিলীপ ঘোষের সাম্প্রতিক কুমন্তব্য বিষয়ে তিনি আরও বলেন, “উনি আগেও আমাদের মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেছেন। এটা শুধু মুখ্যমন্ত্রী নয়, বাংলার নারীশক্তির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর যে লড়াই, তার বিরুদ্ধে উনি (দিলীপ) জেহাদ ঘোষণা করছেন।”
বিজেপিকে আক্রমণ শানাতে গিয়ে আসানসোলের সাবেক পদ্মপ্রার্থীকে নিয়েও খোঁচা দেয় তৃণমূল। আসানসোল কেন্দ্রে প্রার্থী হিসাবে প্রথমে ভোজপুরি সিনেমার নায়ক-গায়ক পবন সিংহের নাম ঘোষণা করেছিল বিজেপি। কিন্তু তাঁর সিনেমায় এবং গানে বাঙালি নারীদের অসম্মান করার অভিযোগ তোলে তৃণমূল। বিতর্কের মধ্যেই ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে প্রার্থী হতে অস্বীকৃত হন পবন। এখনও এই কেন্দ্রে নতুন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি বিজেপি।
বুধবার ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে ছিলেন দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, শশী পাঁজা, জয়নগরের তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল-সহ মোট সাত জন মহিলা। তাঁদের সঙ্গেই এই দলে ছিলেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ নাদিমুল হক, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।
মঙ্গলবার দিলীপ মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘বিহার, ইউপি থেকে দিদি গোয়াতে গিয়ে বলেন গোয়ার মেয়ে। ত্রিপুরাতে গিয়ে বলেন ত্রিপুরার মেয়ে।’’ এর পরেই তিনি মমতার উদ্দেশে কুরুচিকর ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন বলে অভিযোগ। মমতাকে নিয়ে দিলীপের মন্তব্যের প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হয় তৃণমূল। তারই প্রেক্ষিতে রিপোর্ট চায় কমিশন। মঙ্গলবার এই ঘটনার নিন্দা করে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফ থেকেও শো-কজ় নোটিস ধরানো হল দিলীপকে। যত দ্রুত সম্ভব এ হেন আচরণের ব্যাখ্যাও চাওয়া হয় দলের তরফে।
এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘যা বলার নির্বাচন কমিশনকে বলব। প্রতি বারই ভোটের আগে তৃণমূল মহিলা কার্ড খেলে। এটা সাধারণ মানুষ ধরে ফেলেছে। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে যেখানে যা ইচ্ছা তাই মন্তব্য করেন। আমার প্রশ্ন করার অধিকার আছে। সবাই পারে না। আমি করেছি। যা জবাব দেওয়ার, তা নির্বাচন কমিশনকে দেব। একটা কাউকে তো ইস্যু করতে হবে। দিলীপ ঘোষকেই করেছে। কে নারীবিদ্বেষী, তা সন্দেশখালির মানুষ জানেন।’’ তৃণমূলের অবশ্য বক্তব্য, দিলীপ ঘোষ ‘নারীবিদ্বেষী’ বলেই, মহিলা কার্ডের প্রসঙ্গ তুলে সাফাই দিচ্ছেন।