(বাঁ দিকে) হুগলিতে প্রচারে তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
ভোটপ্রচারে বেরিয়ে সিঙ্গুরের দই খেয়ে মুগ্ধ তৃণমূলের তারকা প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। টক দই তাঁর এতটাই মুখে লেগেছে যে ব্যাগ ভর্তি করে কলকাতায় সেটা নিয়ে যেতে চান রচনা। আর এ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীকে কটাক্ষ ছুড়লেন হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূল আমলে সিঙ্গুরে শিল্পের দুরবস্থার কথাই ফুটে উঠেছে রচনার গলায়।
শনিবার সিঙ্গুরে প্রচারে বেরিয়ে ‘একতা ভোজে’ যোগ দিয়েছিলেন রচনা। বেড়াবেড়িতে মানিক বাগ নামে এক শ্রমিকের মাটির বাড়ির দাওয়ায় বসে খাওয়াদাওয়া সারেন হুগলির তৃণমূল প্রার্থী। মেনুতে ছিল ভাত, বড়িভাজা, পটলভাজা, শুক্তো, ডাল, বেগুনি, আলু পোস্ত, চাটনি আর টক দই। প্রত্যেকটি পদের প্রশংসা করেন ‘দিদি নম্বর ওয়ান’। তবে আলাদা করে দইয়ের কথা উল্লেখ করেন। তাঁর কথায়, ‘‘এত ভাল দই এখানকার! আমি তো ভাবছি, ব্যাগে করে দই নিয়ে যাব। এত ভাল দই তো কলকাতায় হয় না। ওখানে কী দই হয় কে জানে...’’ বলতে বলতে হেসে ফেলেন রচনা। তার পর আবার বলেন, ‘‘যত বার আসব তত বার দই নিয়ে যাব।’’ হুগলির দইয়ে মুগ্ধ রচনা শুরু করেন দুধের গুণাগুণ নিয়ে বলা। তিনি বলেন, ‘‘সিঙ্গুরের মাটি এবং ঘাস... বেচারামদা (রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না) এবং করবীদি (হরিপালের বিধায়ক) বলতে পারবেন। সিঙ্গুরে এত ঘাস এবং গাছপালায় ভর্তি। সেগুলো গরু খাচ্ছে। গরু তো শাকপাতা খেয়েই বড় হয়। আর সেগুলো খেয়ে হৃষ্টপুষ্ট হচ্ছে গরু। ফলে তার যে দুধটা বেরোচ্ছে তা এত ভাল যে দইটাও এত ভাল হচ্ছে।’’
এর আগে নির্বাচনী প্রচারে বেরিয়ে ধোঁয়া দেখে ‘আপ্লুত’ রচনা বলেছিলেন, হুগলিতে অনেক শিল্প হয়েছে এবং আরও হবে। তা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিরোধীরা। এ বার তাঁর মুখে সিঙ্গুরের দইয়ের প্রশংসা শুনে হুগলি লোকসভার বিজেপি প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘‘একদম সত্যি কথা বলেছেন উনি। আমি ওঁকে ধন্যবাদ জানাব।’’ লকেটের সংযোজন, ‘‘সিঙ্গুরে তো গরুই চরছে। ঘাসপাতাই হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্ষের বীজ ছড়িয়ে গিয়েছিলেন। সিঙ্গুরে তো কোনও শিল্প করেননি। সিঙ্গুরে চাষও হয়নি। তাই ঘাসই দেখা যাচ্ছে। উনি সঠিক কথাই বলেছেন।’’ এখানেই থামেননি লকেট। টলিউডের বন্ধুকে তিনি দই খাওয়াতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘জেতার পর আমি নিজের হাতে করে ওঁকে দই পাঠাব। শুধু উনি এটা বলুন, কেন সিঙ্গুরে ঘাস হল? কেন টাটার কারখানা হল না? কেন চাষিরা চাষ করতে পারল না?’’
যাঁর বাড়ির মাটির দাওয়ায় খাওয়া নিয়ে এই তরজা, সেই মানিক বাগের কথায়, ‘‘ঘরের চাল দিয়ে জল পড়ে। পঞ্চায়েতে আবেদন করেছি ঘরের জন্য। বলেছে, এলে পাবে।’’ রচনা তখন কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি খুব আনন্দ করে খেলাম। ভাল লাগল। মাটির বাড়ি খুব ঠান্ডা হয়। কিন্তু যাঁরা এখানে থাকেন, তাঁদের জন্য কষ্ট পেলাম। আবাস যোজনার টাকা যে বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার! দিনের পর দিন এঁরা কষ্ট করে থাকছেন। ওঁদের কথা শুনে খুব কষ্ট লাগছে। ওঁরা সব সময় ভয়ে থাকেন, কখন ঝড়জল আসবে, ভেঙে পড়বে বা টালি উড়ে যাবে। আমি যদি সংসদে যেতে পারি তা হলে আবাসের প্রসঙ্গ তুলব। যাতে কেন্দ্র টাকা দেয়।’’ অন্য দিকে, এ নিয়ে লকেটের কটাক্ষ, ‘‘ওঁর তো ভাল লেগেছে মাটির বাড়ি। এক বারও কি ভেবেছেন যে, যাঁরা মাটির বাড়িতে আছেন, তাঁরা কেন টাকা পাননি?’’ লকেটের অভিযোগ, পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের দুর্নীতির কারণে প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন গরিব মানুষেরা।