BJP

২০% পুরনো মুখ বদলে ফেলতে চাইছে বিজেপি

গত লোকসভায় ৩০৩টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। সূত্রের মতে, এ যাত্রায় অন্তত ২০ শতাংশ তথা ৬০-৬৫টি আসনে নতুন মুখ দেওয়ার কথা প্রাথমিক ভাবে চূড়ান্ত হয়েছে।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ০৮:২৪
PM Narendra Modi.

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। — ফাইল চিত্র।

টানা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দীর্ঘ আলোচনার পরেও বিজেপির প্রথম প্রার্থীতালিকা নিয়ে রহস্য অব্যাহত রইল। গতকাল প্রথমে নিজের বাসভবনে প্রায় দু’ঘণ্টা ও তারপরে দলের সদর কার্যালয়ে রাত এগারোটা থেকে বৈঠকে বসেন নরেন্দ্র মোদী। যা চলে প্রায় রাত তিনটে পর্যন্ত। তারপরেও লোকসভা ভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ আপাতত স্থগিত রাখলেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।

Advertisement

সূত্রের মতে, গত বার যাঁরা লোকসভায় জিতেছিলেন, এমন প্রায় কুড়ি শতাংশ পুরনো প্রার্থী বদলানোর বিষয়ে ভাবছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। সূত্রের মতে, আগামী রবিবার বা সোমবার নিজেদের ভাগ্য জানতে পারবেন টিকিটপ্রত্যাশীরা।

গত লোকসভায় ৩০৩টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। সূত্রের মতে, এ যাত্রায় অন্তত ২০ শতাংশ তথা ৬০-৬৫টি আসনে নতুন মুখ দেওয়ার কথা প্রাথমিক ভাবে চূড়ান্ত হয়েছে। সূত্রের মতে, সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে পুরনো মুখকে ছেঁটে ফেলে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দাঁড় করানোর কৌশল কাজে এসেছে। মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্য বিজেপির হার প্রথমে নিশ্চিত মনে হলেও শেষ পর্যন্ত জিতে গিয়েছে দল।

বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, লোকসভায় এই নতুন প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই রাজনীতিতে আনকোরা হতে পারেন। যাঁদের সঙ্গে রাজনীতির সরাসরি কোনও সম্পর্কই নেই। এমন তালিকায় রয়েছেন অভিনেতা অক্ষয় কুমার, কঙ্গনা রানাউত। চণ্ডীগড় কেন্দ্রে অসুস্থ কিরণ খেরের বদলে প্রাক্তন ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহকে দাঁড় করানোর কথা ভেবে রেখেছে দল। যদিও কৃষি বিক্ষোভ চলার কারণে আপাতত তাঁর বিজেপিতে যোগদান থমকে রয়েছে। এ ছাড়া প্রাক্তন কূটনীতিক তথা মন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীকে টিকিট না দেওয়ার দাবি রয়েছে দলের মধ্যে। পরিবর্তে প্রাক্তন কূটনীতিক হিসাবে আমেরিকায় নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তরণজিত সিংহ সান্ধু রয়েছেন টিকিটের দৌড়ে। আলোচনায় রয়েছেন প্রাক্তন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। কিন্তু তিনি দার্জিলিং কেন্দ্রের টিকিট পেয়ে বাজিমাৎ করতে পারেন কি না তা-ই এখন দেখার। সম্প্রতি ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরকে শ্রীনগর ভ্রমণে দেখা গিয়েছে। তাঁর ওই ভ্রমণ নিছক পর্যটনের উদ্দেশ্যে না কি এর পিছনে রাজনীতি, তা নিয়েও টিকিট বণ্টনের মরসুমে জল্পনা রয়েছে।।

এ ছাড়া যাঁদের অতীতে রাজ্যসভা কিংবা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় দেখা গিয়েছে, তেমন অনেককেও টিকিট দেওয়া হতে পারে। ওই তালিকায় রয়েছেন গুজরাতের ভাবনগর থেকে মনসুখ মাণ্ডবিয়া, ওড়িশার সম্বলপুর আসন থেকে ধর্মেন্দ্র প্রধান, বেঙ্গালুরু (সেন্ট্রাল) থেকে রাজীব চন্দ্রশেখরের নাম। ভূপেন্দ্র যাদবের নাম ভাবা হয়েছে হরিয়ানার ভিওয়ানি বা রাজস্থানের আলওয়ার থেকে। গুজরাতে মনসুখ ছাড়া দলের ওই রাজ্যের সভাপতি সি আর পাটিল (নবসারি), অমিত শাহ (গান্ধীনগর), পুরুষোত্তম রূপালা (রাজকোট)-এর নাম চূড়ান্ত হয়েছে। গান্ধীনগর ছাড়াও অমিত শাহের নাম ভাবা হচ্ছে পুরী কেন্দ্র থেকেও। মূলত ওড়িশায় আরও আসন ছিনিয়ে নিতেই কোনও হেভিওয়েট নেতাকে ওই কেন্দ্রে দাঁড় করাতে চাইছেন দলীয় নেতৃত্ব। রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজের পুত্র দুষ্মন্ত রাজেকে টিকিট দেওয়ার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে ঝালওয়াড় কেন্দ্রের।

গতকাল যে বৈঠকটি হয়, তাতে সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বড় রাজ্যগুলির মধ্যে গতকাল মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উপস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশের আসনগুলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, ওই রাজ্যে ৮০টির মধ্যে ৭৪টি আসনে লড়বে বিজেপি। দু’টি করে আসন দেওয়া হবে আপনা দল এবং আরএলডি-কে। একটি করে আসন ছাড়া হবে ওমপ্রকাশ রাজভড়ের দল ও সঞ্জয় সিংহের নিষাদ পার্টিকে।

সূত্রের মতে, রাজভড়ের দল বিজেপির চিহ্নে ভোটে লড়বে। উত্তরপ্রদেশে নরেন্দ্র মোদী (বারাণসী), স্মৃতি ইরানি (অমেঠী), এসপি বাঘেল (আগরা), রাজনাথ সিংহ (লখনউ)-এর মতো বড় নেতাদের আসন চূড়ান্ত করা হয়েছে। অম্বেডকর নগর থেকে নাম ভাবা হয়েছে বিএসপি থেকে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া রীতেশ পাণ্ডেকে। রীতেশের মতোই সদ্য সমাজবাদী পার্টি থেকে বিজেপিতে যোগ দেন বিধায়ক মনোজ পাণ্ডে। রায়বরেলী লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত উচাহার বিধানসভার বিধায়ক মনোজের নাম রায়বরেলীর প্রার্থী হিসাবে আলোচনাও হয়। প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা যদি শেষ পর্যন্ত মা সনিয়া গান্ধীর কেন্দ্রে দাঁড়ান, সে ক্ষেত্রে প্রিয়ঙ্কাকে মনোজ হারাতে পারবেন কি না—সেই সব দেখে নিয়েই ওই আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বলে জানিয়েছে দল। টিকিটের দৌড়ে রয়েছেন জাতীয় কুস্তি ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংহ। ওই নেতাকে তাঁর কেন্দ্র গোড্ডার পরিবর্তে আশেপাশের কোনও কেন্দ্র থেকে টিকিট দেওয়ার কথা ভাবছে দল।

গত লোকসভায় বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছিলেন মালেগাঁও বিস্ফোরণ কাণ্ডে অভিযুক্ত, ভোপালের সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর। তাঁর পরিবর্তে ওই আসন থেকে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহকে দাঁড় করাতে চাইছে দল। যদিও শিবরাজ ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর পারিবারিক এলাকা বিদিশা কেন্দ্র থেকে দাঁড়াতে ইচ্ছুক বলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন। মধ্যপ্রদেশে ভাল ফল করতে বিধানসভার পরে এ বার লোকসভায় কৈলাস বিজয়বর্গীয়, নরেন্দ্র সিংহ তোমরদেরও দাঁড় করানোর কথা ভাবছে দল।

সূত্রের মতে, গতকালের বৈঠকে গুজরাত, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, ত্রিপুরা, অসম-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্য, তেলঙ্গানা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। যে রাজ্যগুলিতে জোট শরিকদের হাত ধরে লড়াইয়ে নামছে বিজেপি, সেই রাজ্যগুলি নিয়ে দ্বিতীয় বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বিহারে জেডিইউ-কে ১২টি আসন, কর্নাটকে জেডিএস-কে তিনটি আসন ছাড়া হবে বলে ঠিক হয়েছে। মহারাষ্ট্রে একনাথ শিন্দের শিবসেনাকে কত আসন ছাড়া হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অন্ধপ্রদেশে চন্দ্রবাবুর নায়ডুর দলের সঙ্গে বিজেপির জোট একপ্রকার নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক ভাবে জোট ঘোষণা করবে দু’দল।

আরও পড়ুন
Advertisement