(বাঁ দিকে) সৌমেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু অধিকারী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই এবং বিদায়ী ‘তৃণমূল’ সাংসদ শিশির অধিকারীর কনিষ্ঠ পুত্র সৌমেন্দু অধিকারী। শনিবার দিল্লি থেকে সারা দেশে বিজেপির যে ১৯৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে, তাতে বাংলার ২০টি আসনের প্রার্থিতালিকাও ঘোষিত হয়েছে। এই ২০ জনের মধ্যে নাম রয়েছেন সৌমেন্দুরও। কাঁথি লোকসভা আসনে এ বার অধিকারী পরিবারের জন্য অন্য লড়াই। ‘অধিকার’ রক্ষার লড়াই-ই শুধু নয়, সম্মান এবং মর্যাদা রক্ষার লড়াইও। এবং এই লড়াই বিশেষ ভাবে শুভেন্দুর লড়াই। ভাইকে জিতিয়ে আনা কি তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ? আনন্দবাজার অনলাইনকে শুভেন্দুর জবাব, ‘‘সৌমেন্দু আমার ভাই বলে টিকিট পায়নি।’’ একই সঙ্গে জানান, সব বিজেপি প্রার্থীকে জেতাতেই তিনি ভোটের ময়দানে আছেন এবং থাকবেন।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রাজনীতিতে অধিকারী পরিবারের প্রভাব সর্বজনবিদিত। ২০০৯ সালে নতুন করে কাঁথি লোকসভা গঠিত হওয়ার পর তৃণমূলের প্রতীকে সাংসদ হন শিশির। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত এই আসনে বরাবরই জোড়াফুল ফুটেছে। শিশিরই সাংসদ। এবং ২০০৪ সালের পর এই প্রথম লোকসভা ভোটে অধিকারী পরিবারকে ছাড়াই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় তৃণমূল ভোটে লড়াই করবে। উল্টো দিকেও তা-ই। ২০০৪ সালের পর এই প্রথম কোনও লোকসভা ভোট, যেখানে অধিকারী পরিবারকে লড়তে হচ্ছে তৃণমূলের বাইরে থেকে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে। এবং শিশিরের হাত থেকে জেলায় নিজেদের সংগঠনকে কার্যত নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যাটন এখন শুভেন্দুর হাতে।
তাই প্রার্থী সৌমেন্দু হলেও, কাঁথি আসনে লড়াই হবে তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে শুভেন্দুরই। এমনটাই মত বাংলার রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলেরই। তবে শুভেন্দু বলছেন, ‘‘প্রথম তালিকার সমস্ত প্রার্থীকে জেতানোর মরিয়া চেষ্টা করব। সকলের জন্য আমার শুভেচ্ছা আর লড়াই থাকবে। প্রার্থনা করব, সকলেই যেন জিতে আসেন। আর সৌম্যেন্দু আমার ভাই বলে তো টিকিট পায়নি! বিজেপির সমর্থকেরা ওকে চায় বলে পেয়েছে। সেই জন্যই নেতৃত্ব ওর উপর আস্থা রেখেছেন। ও তো জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদকও।’’
সৌমেন্দুও বলেন, ‘‘আমি কার্যকর্তা হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছি। তবে এত বড় দায়িত্ব পাব জানতাম না। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরা আমার নাম ঘোষণা করেছেন। দলীয় স্তরে আমরা এমন কোনও জল্পনা শুনিনি। আমি খবর পেয়েই দলীয় পার্টি অফিসে চলে এসেছি। বাড়িতে বাবাকে ফোন করে জানাতে পারিনি।’’ তাঁর মতে, ‘‘আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদীজির হাত শক্ত করতে বদ্ধপরিকর। সেই কারণে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি ও তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। এর জন্য কাঁথি লোকসভার সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রেই ভাল ফল করতে পারব আশা রাখছি।’’
সৌমেন্দুর আশা, “এ বার বিজেপি থেকে যিনিই প্রার্থী হন না কেন, বাবা তাঁর জন্য প্রচার করতে যাবেন বলেছিলেন। আমি প্রার্থী হয়েছি। তাই বাবার পূর্ণ সমর্থন পাব আশা রাখছি।’’
ছোট ছেলের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে পিতা শিশির বলেন, ‘‘ছোটছেলেকে বিজেপি প্রার্থী করে যে সম্মান দিয়েছে, তার জন্য আমি খুশি। আমি নিজের পঞ্চায়েত ভোট থেকে লড়াই করতে করতে পুরসভা, বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে লড়াই করে জিতেছি। সেই সব আসনে পরে আমার ছেলেরাও প্রার্থী হয়ে জিতে এসেছে। এটা আমাদের কাছে কোনও নতুন বিষয় নয়।’’ সাংসদ হিসেবে এখনও তিনি এখনও তৃণমূলেই রয়ে গিয়েছেন। সেই প্রসঙ্গে কাঁথির বিদায়ী সাংসদ আরও বলেন, ‘‘আমি তো তৃণমূল সাংসদ নই। বিতর্কিত তৃণমূল সাংসদ। আমার বিরুদ্ধে তো তৃণমূল স্পিকারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে। আমি যে তৃণমূলকে চিনতাম। এখন সেই দল আর নেই। ছেলে যখন বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছে তখন আমরা এককাট্টা হয়ে অধিকারী পরিবার তাঁর জন্য জয় চাইব।’’
একই সুর শোনা গিয়েছেন সৌমেন্দুর সাংসদ-দাদা দিব্যেন্দুর কণ্ঠে। তিনি বলেন, ‘‘আমি নিজেও ভাইকে ভোট দেব। আর ভাইয়ের জন্যও ভোট চাইব।’’ প্রসঙ্গত, শিশির একসময় দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি নিজে এগরা কেন্দ্রে সরে গিয়ে মেজো ছেলে শুভেন্দুর জন্য দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা আসনটি ছেড়ে দিয়েছিলেন। আর এ বার বয়সজনিত কারণে তিনি আর ভোটে দাঁড়াবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেই স্থানে বিজেপির প্রতীকে প্রার্থী হচ্ছেন সৌমেন্দু। দিব্যেন্দু বর্তমানে তমলুকের ‘তৃণমূল’ সাংসদ। এই আসনের প্রার্থীর নাম প্রথম দফায় ঘোষণা করেনি বিজেপি।