Extradition

সাংসদ বাবা এবং মায়ের খুনিকে ক্ষমা করেন কন্যা! কেমন ছিল দেশের প্রথম প্রত্যর্পণ লড়াই?

ছ’বছরের কন্যা অবন্তিকা মাকেনের চোখের সামনে কংগ্রেস সাংসদ ললিত মাকেন, তাঁর স্ত্রী এবং দেহরক্ষীদের হত্যা করেছিলেন খলিস্তানি জঙ্গি কুকি গিল এবং তাঁর সঙ্গীরা।

Advertisement
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ১৩ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৫৪
০১ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

২৬/১১ মুম্বই হামলায় অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে আমেরিকা থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করানো হয়েছে। দিল্লিতে তাঁকে জেরা করছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)। পাক বংশোদ্ভূত হলেও রানা কানাডার নাগরিক। এত দিন তিনি আমেরিকার জেলে বন্দি ছিলেন। তাঁকে ভারতে ফেরানো এবং বিচারপ্রক্রিয়ার আওতায় আনার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে এনআইএ।

০২ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

অবশেষে রানার প্রত্যর্পণ সফল হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে নেমেছে রানার বিমান। বিমানবন্দরেই তাঁকে গ্রেফতার করে এনআইএ। মধ্যরাতে তাঁকে দিল্লির বিশেষ এনআইএ আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। বিচারক ১৮ দিনের জন্য রানার এনআইএ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন। শুক্রবার সকাল থেকে এনআইএ তাঁকে জেরা করা শুরু করেছে। আপাতত ১৮ দিনের জন্য রানার ঠিকানা দিল্লিতে এনআইএ-র সদর দফতরের নীচতলার একটি কুঠুরি। তাঁকে ২৪ ঘণ্টা সিসি ক্যামেরার নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

০৩ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

রানার প্রত্যর্পণ নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশ জুড়ে হইচই পড়েছে। তবে ভারতে প্রথম প্রত্যর্পণের লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯৮৮ সালে। সেই প্রত্যর্পণ হয়েছিল ২০০০ সালে, ভারত এবং আমেরিকার প্রত্যর্পণ চুক্তি স্বাক্ষরের তিন বছর পর। কোন অপরাধীকে সেই সময় আনা হয়েছিল ভারতে? কী অপরাধ ছিল তাঁর?

Advertisement
০৪ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

কথা হচ্ছে রঞ্জিত সিংহ গিল ওরফে কুকি গিলকে নিয়ে। ছ’বছরের কন্যা অবন্তিকা মাকেনের চোখের সামনে কংগ্রেস সাংসদ ললিত মাকেন, তাঁর স্ত্রী এবং দেহরক্ষীদের হত্যা করেছিলেন খলিস্তানি জঙ্গি কুকি এবং তাঁর সঙ্গীরা।

০৫ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

ললিত এবং তাঁর স্ত্রীকে খুন করার পর গা-ঢাকা দিয়েছিলেন কুকিরা। জাল নথি ব্যবহার করে আমেরিকা পালিয়ে যান তিনি। তাঁকে ফিরিয়ে আনার লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯৮৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। এটি ভারতের প্রথম প্রত্যর্পণ লড়াইও বটে। এর প্রায় ১২ বছর পর, ২০০০ সালে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয় কুকিকে।

Advertisement
০৬ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

উল্লেখ্য, ভারতের তরফে গিলের প্রত্যর্পণের লড়াই প্রথমে শুরু হলেও তিনি কিন্তু ভারতে প্রত্যর্পিত হওয়া প্রথম বন্দি নন। গিলের প্রত্যর্পণ মামলা চলাকালীন ১৯৯৫ সালে জার্মানি থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়েছিল দেবিন্দর পাল সিংহ ভুল্লরকে।

০৭ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

কুকি গিলকে ভারতে প্রত্যর্পণের জন্য ১২ বছর ধরে লড়াই চালিয়েছিল ভারত। কিন্তু ন’বছর ভারতীয় কারাগারে থাকার পরেই মুক্তি পেয়ে যান তিনি। তবে তার অন্যতম কারণ ছিল ২০০৪ সালের মে মাসে ললিত-কন্যা অবন্তিকা এবং কুকির সাক্ষাৎ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক সেই কাহিনি।

Advertisement
০৮ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

১৯৮৪ সাল। সেই সময় কুকি ২১ বছর বয়সি তরুণ। ছাত্র থাকাকালীনই অস্ত্র তুলে নিয়েছিলেন তিনি। খলিস্তানি জঙ্গিদের রমরমা, অপারেশন ব্লুস্টার এবং শিখ দাঙ্গার কারণে পঞ্জাব তখন উত্তাল।

০৯ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

১৯৮৪ সালের অক্টোবরে শিখ দেহরক্ষীদের হাতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর দেশ জুড়ে শিখদের উপর কোপ পড়ে। দিকে দিকে অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় অভিযোগ ওঠে, কয়েক জন কংগ্রেস নেতার উৎসাহে নাকি নৃশংস আক্রমণ এবং হিংসার মুখে পড়েছিলেন অনেক শিখ ধর্মাবলম্বী মানুষ। ললিতও সেই কংগ্রেসি নেতাদের এক জন ছিলেন বলে মনে করেছিলেন অনেকে।

১০ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

মনে করা হয়, দাঙ্গায় ৩,০০০-এরও বেশি শিখ নিহত হয়েছিলেন। শুধুমাত্র দিল্লিতেই নাকি ২,৭০০-এরও বেশি শিখ মারা গিয়েছিলেন। হাজার হাজার শিখ আহত হন। বাস্তুচ্যুতও হন অনেকে।

১১ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

এই অস্থির সময়ে কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার সুযোগ পেয়েও তা ছেড়ে দেন কুকি। হাতে অস্ত্র তুলে নিয়ে খলিস্তানি মতাদর্শ আপন করে নেন। কুকি ছিলেন কৃষিবিজ্ঞানী এবং পদ্মভূষণ পুরস্কারপ্রাপ্ত খেম সিংহ গিলের সন্তান।

১২ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

১৯৮৪ সালের স্বাধীনতা দিবসে প্রথম গ্রেফতার হন কুকি। পরে ছাড়াও পেয়ে যান। জেল থেকে বেরিয়ে হরজিন্দর সিংহ জ়িন্দা এবং সুখবিন্দর সিংহ সুখির সংস্পর্শে আসেন কুকি। তাঁরা তিন জনে ললিত এবং তাঁর এক দেহরক্ষীকে খুনের ছক কষা শুরু করেন।

১৩ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

অসুস্থ বাবাকে দিল্লি থেকে লুধিয়ানা ফিরিয়ে নিয়ে যেতে দিল্লি যান গিল। এর পর ১৯৮৫ সালের জুলাইয়ের এক বিকেলে একটি স্কুটারে চেপে দিল্লির কীর্তি নগরে মাকেনের বাড়িতে পৌঁছন গিল, জ়িন্দা এবং সুখি। তাঁদের সকলের সঙ্গেই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র।

১৪ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

ইন্দিরাপন্থী ললিত ছিলেন দিল্লির কংগ্রেস সাংসদ। তাঁর স্ত্রী গীতাঞ্জলি ছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের তৎকালীন রাজ্যপাল শঙ্করদয়াল শর্মার (পরে তিনি রাষ্ট্রপতিও হন) মেয়ে। ললিত-গীতাঞ্জলির বাড়িতে ঢুকে তাঁদের গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেন গিল, জ়িন্দা এবং সুখি। প্রায় ৩০ বার গুলি করা হয়েছিল ললিতকে। গুলিতে মৃত্যু হয় তাঁর এক দেহরক্ষীরও।

১৫ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

ললিত এবং গীতাঞ্জলির কন্যা অবন্তিকার তখন ৬ বছর বয়স। গুলির আওয়াজ শুনে বাড়ির ভিতর থেকে দৌড়ে আসে সে। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বাবা এবং মাকে।

১৬ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

এর পরেই মাকেন দম্পতির হত্যাকারীদের ধরতে খোঁজ খোঁজ রব পড়ে। ১৯৮৬ সালে ভারত থেকে আমেরিকায় পালিয়ে যান কুকি। তবে শীঘ্রই ধরা পড়েন। ১৯৮৬ সালের মে মাসে, ইন্টারপোলের গোয়েন্দারা তাঁকে নিউ জার্সির একটি পেট্রল স্টেশন থেকে গ্রেফতার করেন।

১৭ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

তত দিনে কুকি, সুখি এবং জ়িন্দার বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিস জারি করেছে ভারত। ১৯৮৮ সাল থেকে আমেরিকা থেকে কুকিকে ফেরত আনার চেষ্টা চালাতে থাকে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার।

১৮ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

প্রায় ১২ বছর আমেরিকার কারাগারে কাটানোর পর ২০০০ সালে কুকিকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়। তিহাড় জেলে রাখা হয় তাঁকে। কুকির বিরুদ্ধে টাডা এবং অস্ত্র আইনের অধীনে খুনের অভিযোগ আনা হয়েছিল।

১৯ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

তিন বছর পর টাডা আদালত কুকিকে দোষী সাব্যস্ত করে এবং তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে দিল্লি হাই কোর্টও তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে। এর পর ক্ষমার আবেদন করেন কুকি।

২০ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

২০০৪ সালে ললিত-কন্যা অবন্তিকার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় কুকির। সেই সময়ে জামিনে মুক্ত ছিলেন তিনি। কুকির কাছে অবন্তিকা জানতে চান, তাঁর মাকেও কেন খুন করা হল? ভুল স্বীকার করেন কুকি। পরে বাবা-মার খুনের জন্য গিলকে ক্ষমা করে দেন অবন্তিকা। তবে এরও প্রায় পাঁচ বছর পর, অর্থাৎ ২০০৯ সালে মুক্তি পান কুকি। কুকিকে তিনি ক্ষমা করেছেন, এই মর্মে দিল্লির তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শীলা দীক্ষিতকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন অবন্তিকা।

২১ ২১
All need to know about India’s first Extradition battle started in 1988

কুকি বর্তমানে পঞ্জাবে রয়েছেন। পঞ্জাবের সামাজিক উন্নয়নের জন্য, বিশেষ করে সে রাজ্যের তরুণদের হিতের উদ্দেশ্যে কাজ করেন তিনি। উল্লেখ্য, গিলের সঙ্গে মাকেন দম্পতিকে খুন করার অভিযোগ ওঠা সুখি এবং জ়িন্দার কিন্তু ফাঁসি হয়েছিল। ভারতের প্রাক্তন সেনাপ্রধান এএস বৈদ্য এবং কংগ্রেস নেতা অর্জন দাসের হত্যার জন্য জ়িন্দা এবং সুখিকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।

সব ছবি: সংগৃহীত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও গ্যালারি