Electoral Bonds

কিসের বিনিময়ে বন্ডে চাঁদা, তদন্ত চান সমাজকর্মীরা

এডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস), কমন কজ়-এর মতো অসরকারি সংস্থা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কে কোন দলকে গোপনে চাঁদা দিচ্ছে, তা প্রকাশ্যে আনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৬:১৪

—প্রতীকী চিত্র।

নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে। এ বার সামাজিক কর্মীরা কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির ‘অশুভ আঁতাঁত’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে বিশেষ তদন্তের দাবি করলেন। তাঁদের দাবি, কোন সংস্থা শাসক দলকে কত টাকা চাঁদা দিয়েছিল, তা এখন জানা গিয়েছে। কীসের বিনিময়ে সেই চাঁদা দিয়েছিল বা ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে কী ভাবে চাঁদা আদায় করা হয়েছিল, তার তদন্ত হওয়া উচিত। সিবিআই, ইডি এর তদন্ত করতে পারবে না। কারণ, তারা নিজেরাই এর সঙ্গে জড়িত।

Advertisement

এডিআর (অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস), কমন কজ়-এর মতো অসরকারি সংস্থা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কে কোন দলকে গোপনে চাঁদা দিচ্ছে, তা প্রকাশ্যে আনার জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। আজ এই অসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা নির্বাচনী বন্ডকে ভারতের ইতিহাসে সবথেকে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি আখ্যা দিয়ে তার তদন্ত দাবি করেছেন।

সুপ্রিম কোর্টে মামলাকারী এই সংগঠনগুলির আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, ৩৩টি সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে মোট ১,৭৫১ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিল। এই সংস্থাগুলি ৩.৭ লক্ষ কোটি টাকার সরকারি প্রকল্পের বরাত পেয়েছে। সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরের তদন্তের আওতায় থাকা ৪১টি সংস্থা শুধু বিজেপিকে ২,৪৭১ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছিল। এর মধ্যে ১,৬৯৮ কোটি টাকা চাঁদা জমা পড়েছিল তদন্তকারী সংস্থাগুলির হানার পরে। ৩০টি ভুয়ো সংস্থা মোট ১৪৩ কোটি টাকা চাঁদা জমা করেছে। ৪৯টি ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ৬২ হাজার কোটি টাকার বরাত মেলার পরে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা কেন্দ্র ও রাজ্যের শাসক দলকে ৫৮০ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে। ১৯২টি ক্ষেত্রে বরাত পাওয়ার আগে ৫৫১ কোটি টাকা চাঁদা দেওয়া হয়েছে।

ভূষণের মতে, চারটি উপায়ে নির্বাচনী বন্ড মারফত চাঁদা আদায় করা হয়েছে। এক, চাঁদা নিয়ে বরাত দিন। দুই, ইডি-সিবিআইয়ের ভয় দেখিয়ে তোলা আদায়। তিন, বরাত
দেওয়ার পরে চাঁদা মারফত ঘুষ নেওয়া। চার, ভুয়ো সংস্থা তৈরি করে তার মাধ্যমে চাঁদা দেওয়া। এই টাকার লেনদেনের সূত্র বের করতে টু-জি, কয়লা কেলেঙ্কারির মতোই সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।

স্টেট ব্যাঙ্ক কেন এই তথ্য প্রকাশে টালবাহানা করছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সমাজকর্মীরা। কমন কজ়-এর তরফে অঞ্জলি ভরদ্বাজ বলেন, কে কাকে কত টাকা চাঁদা দিয়েছে তা জানাতে স্টেট ব্যাঙ্ক প্রথমে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় চাইছিল। বৃহস্পতিবার সমস্ত তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরে দেখা গেল, সাংবাদিকরা আধ ঘণ্টার মধ্যে কে কাকে কত টাকা চাঁদা দিয়েছে, তা বের করে ফেলেছেন। দেশের সবথেকে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এর জন্য ৩ মাসের বেশি সময় চাইছিল। এর থেকে স্পষ্ট, স্টেট ব্যাঙ্ক সরকারের কথায় চলছিল।

এডিআর-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জগদীপ চোখার বলেন, সাধারণ মানুষের মনে হতেই পারে, কোনও কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিয়েছে, এতে আমজনতার কী এসে যায়? রাজনৈতিক দলকে চাঁদা দিয়ে কর্পোরেট সংস্থাগুলি যে সরকারি প্রকল্পের বরাত পেয়েছে, সেই প্রকল্পের টাকা আমজনতার দেওয়া করের টাকা থেকেই এসেছে। যে সব সংস্থা জনতার টাকা লুটছে বলে তদন্ত হচ্ছিল, তারা চাঁদা দিয়ে ফের লুট চালিয়েছে। এমনকি, নির্বাচনী বন্ড ছাপানো, তা পরিচালনার খরচও সরকার জুগিয়েছে। যা সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই এসেছে। অঞ্জলি, জগদীপের বক্তব্য, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন পুরোটাই নির্বাচনী বন্ডের টাকায় হয়েছে। গত পাঁচ বছরে যাবতীয় বিধানসভা নির্বাচন, ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনও বন্ডের টাকাতেই হবে। সুপ্রিম কোর্ট আগে মামলার নিষ্পত্তি করলে এটা হত না।

আরও পড়ুন
Advertisement