Lok Sabha Election 2024

মহুয়া-ভূমে মোদীর মুখে মহুয়াই নেই! শুরুতেই সুর বাঁধেন সুকান্ত-শুভেন্দু, তবে এড়িয়েই গেলেন প্রধানমন্ত্রী

শুক্রবার আরামবাগের পরে শনিবার কৃষ্ণনগরের সভা করে রাজ্য ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে কৃষ্ণনগরে অনেক কথা বললেও তৃণমূলের মহুয়া মৈত্রকে ঘিরে তৈরি হওয়া বিতর্কের উল্লেখই করলেন না।

Advertisement
আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৪ ১৩:৩৬
PM Narendra Modi did not mention name of Mahua Moitra at Krishnangar

(বাঁ দিকে) মহুয়া মৈত্র। নরেন্দ্র মোদী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।

কৃষ্ণনগরে সভা। যে কৃষ্ণনগরের প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে বড় বিতর্ক হয়েছে মাস কয়েক আগেই। শেষে সংসদ বহিষ্কার করেছে মহুয়াকে। মনে করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষ্ণনগরে নির্বাচনী প্রচারে এসে আক্রমণ করবেন মহুয়াকে। কিন্তু একটি বারের জন্যও মহুয়ার নাম উচ্চারণ করলেন না মোদী! যদিও সভার শুরুতেই মোদীর জন্য সুর বেঁধে দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। টেনেছিলেন মহুয়ার বিদেশের মাটি থেকে সংসদের লগ-ইন আইডি ব্যবহার প্রসঙ্গ। মনে করান মা কালীকে নিয়ে মহুয়ার মন্তব্যও। তার পরেই বক্তৃতা করতে উঠে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও সেই প্রসঙ্গ ছুঁয়ে যান। কিন্তু মোদী একটি বারের জন্যও ব্যক্তি মহুয়াকে আক্রমণের পথে হাঁটেননি। বরং, একের পর এক প্রসঙ্গ টেনে তৃণমূল এবং রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেছেন।

Advertisement

কেন কিছু বললেন না মোদী? রাজ্য বিজেপির এক নেতার দাবি, মোদী ‘উপেক্ষা’ই করেছেন মহুয়াকে। তাঁর কথায়, ‘‘মোদীজি এখন যে উচ্চতায় পৌঁছেছেন, তাতে তিনি এমন এক জনের কথা বলবেন কেন! মহুয়ার রূপ তুলে ধরার জন্য রাজ্য নেতারাই যথেষ্ট। তা ছাড়া তিনি নিজের রূপ তো নিজেই তুলে ধরেছেন।’’

শনিবার কৃষ্ণনগরে বিজেপির সভায় ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির সঙ্গে কৃষ্ণনামও ছিল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও ‘হরেকৃষ্ণ’ উচ্চারণ করেন। শুভেন্দু তো কৃষ্ণনামের পাশাপাশি কীর্তনও পরিবেশন করেন বক্তৃতার শেষে। প্রত্যাশিত ভাবেই শুভেন্দুর বক্তৃতায় মহুয়া প্রসঙ্গ এসেছিল। বিজেপি নেতারাও আশা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মহুয়াকে নিয়ে কিছু বলবেন। প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বর মাসেই মহুয়াকে বহিষ্কার করা হয় সংসদ থেকে। ‘টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন’ বিতর্কে মহুয়াকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করেছিল লোকসভার এথিক্স কমিটি। মহুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দুবাইকেন্দ্রিক ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির থেকে অর্থ এবং উপহার নিয়ে লোকসভায় প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টি লিখিত ভাবে স্বীকার করে নেন হীরানন্দানি। ওই ব্যবসায়ীকে তাঁর লগ-ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন বলে মেনে নেন মহুয়াও।

মোদী সেই প্রসঙ্গ না তোলেননি। মহুয়া যদিও সকালেই করিমপুরের একটি দোকানে বসে ডালপুরি ভক্ষণরত একটি ছবি পোস্ট করে মোদীকে ওই দোকানের ‘বিখ্যাত ডালপুরি’ খাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কটাক্ষ নিশ্চিত ভাবেই। কিন্তু মোদী বিষয়টি এড়িয়েই গিয়েছেন। বিজেপির নেতাদের একাংশের মতে, ‘‘যিনি এখন সংসদের সদস্যই নন, নিছক এক জন ভোটপ্রার্থী, তাঁকে নিয়ে আলাদা করে দেশের প্রধানমন্ত্রী কেন বলতে যাবেন? তা হলে তো ওঁকে আরও গুরুত্ব দিয়ে দেওয়া হয়!’’

তবে ছাড় দেননি সুকান্ত-শুভেন্দু। সুকান্ত বলেন, ‘‘ভাবতে অবাক লাগে এক জন সাংসদ সামান্য কিছু পয়সার লোভে, লিপস্টিকের লোভে, পাউডারের লোভে, বিদেশি কোম্পানির পারফিউমের লোভে তাঁর সংসদের লগ-ইন আইডি অন্যকে দিয়ে দেন! বিদেশ থেকে একজন সাংসদের লগ-ইন আইডি ব্যবহার করেন।’’ এর পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘সংসদ যাঁকে সাংসদের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়ে রেখেছেন! এখানে এক বিশেষ সম্প্রদায়ের ৪০ শতাংশ ভোট রয়েছে বলে উনি নাকি আবার জিততে পারবেন।’’ এমন বলার পাশাপাশি জমায়েতের থেকে উত্তর শুনতে চেয়ে সুকান্ত বলেন, ‘‘আপনারা জেতাবেন এই সাংসদকে? জেতানো উচিত? জেতানো উচিত নয়।’’

প্রসঙ্গত, লোকসভা নির্বাচনে কৃষ্ণনগর আসনে মহুয়াকেই প্রার্থী করতে চান দলনেত্রী মমতা। সেই লক্ষ্যে মহুয়ার বহিষ্কার নিয়ে সরব হন শুভেন্দুও। তিনি বলেন, ‘‘কৃষ্ণনগরের সাংসদ এখন নেই। প্রাক্তন হয়েছেন। কেন হয়েছেন জানেন? দেশের লোকসভার পাসওয়ার্ড বাইরে বিক্রি করেছেন!’’

তবে সুকান্ত বা শুভেন্দুর আক্রমণ বেশি ছিল দেবী কালী সম্পর্কে মহুয়ার মন্তব্য ঘিরে তৈরি হওয়া অতীত বিতর্কের রেশ টেনে। ২০২২ সালের জুলাই মাসে একটি অনুষ্ঠানে মহুয়া যে মন্তব্য করেছিলেন, তা শনিবার বারবার কৃষ্ণনগরের মানুষকে মনে করাতে চেয়েছেন সুকান্ত-শুভেন্দু। সুকান্ত বলেন, ‘‘ভাবতে অবাক লাগে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী এখান থেকে এক জনকে সাংসদ করেছিলেন। তাঁর নাম আমি বলতে চাই না। তিনি বলেন, মা কালী নাকি মদ খান আর মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চুপ থাকেন। লজ্জা লাগে এই রকম মুখ্যমন্ত্রীর জন্য। আমি তীব্র ধিক্কার জানাই। কারণ, এক জন সাংসদ এই রকম কথা বলার পরেও আপনারা চুপ করে থাকেন।’’ মহুয়াকে নির্বাচনে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন সুকান্ত। আর শুভেন্দু বলেন, ‘‘মনে আছে তো? মা কালী আমাদের দেবী। মহুয়া মৈত্র কী বলেছিলেন, মনে আছে তো? ভুলে যাননি তো? বদলা হবে তো ইভিএমে?’’

কৃষ্ণনগরের সভায় মোদীই ছিলেন প্রধান বক্তা। তিনি মঞ্চে ওঠার পরে সুকান্ত-শুভেন্দু কয়েক মিনিটের জন্য বক্তৃতার সুযোগ পান। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, মোদীর বক্তৃতায় মহুয়ার নাম না থাকলেও রাজ্য বিজেপির প্রধান দুই নেতা বক্তৃতার সিংহভাগ সময় জুড়েই মহুয়ার কথা বলেছেন। যা থেকে এটা স্পষ্ট যে, কৃষ্ণনগর লোকসভা আসনের প্রচারে মহুয়ার গায়ে ‘হিন্দুবিরোধী’ তকমা লাগানোই হবে বিজেপির অস্ত্র। সেই সঙ্গে ‘টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন’ বিতর্ক টেনে মহুয়াকে ‘রাষ্ট্রবিরোধী’ বলে তুলে ধরার পথেও হাঁটতে পারে পদ্মশিবির। যে দাবি দু’টি বিতর্ক তৈরি হওয়ার সময়েই তুলেছিল বিজেপি।

আরও পড়ুন
Advertisement