প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ক অক্ষুণ্ণ থাকবে না! শুক্রবার আরামবাগের সভা থেকে এমনই ভবিষ্যদ্বাণী করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঘড়ি ধরে আধ ঘণ্টার বক্তৃতার শেষ দিকে এই কথা বললেও শুরুতে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে আক্রমণ করতে গিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘মুসলিম তোষণের’ অভিযোগ তোলেন মোদী। তবে মোদীর অভিযোগ ও ভবিষ্যদ্বাণীকে তৃণমূল যে গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা বুঝিয়ে দলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী এবং তাঁর দল ধর্মীয় ভেদাভেদ করেন। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ধর্ম এবং মতনির্বিশেষে মানুষের সমর্থন রয়েছে।’’
শুক্রবার আরামবাগে বিজেপির জনসভায় মোদী তাঁর বক্তৃতার শুরুর দিকেই সন্দেশখালি প্রসঙ্গ টানেন। ওই এলাকায় যা ঘটেছে, তা নিয়ে গোটা দেশ ‘দুঃখিত’ বলার পাশাপাশি তিনি এমন মন্তব্যও করেন যে, ‘‘এখন বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসা করছেন, আপনার কাছে কিছু ভোটের মূল্য কি মা-বোনেদের কষ্টের থেকেও বেশি?’’
সন্দেশখালিকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত শাহজাহান শেখকে বৃহস্পতিবারই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তৃণমূল আশা করেছিল, মোদীর সফরের আগের দিনই শাহজাহান গ্রেফতার হওয়ায় বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার ঝাঁজ অনেকটাই কমে যাবে। কিন্তু সভার শুরুতেই মোদীর উপস্থিতিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার সংক্ষিপ্ত বক্তৃতার প্রায় গোটাটাই সন্দেশখালি নিয়ে বলেন। এর পরেই বক্তৃতা দিতে গিয়ে মোদী বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতা সন্দেশখালিতে মা-বোনেদের উপর অত্যাচারের সব সীমা পার করে দিয়েছে! যখন এর বিরুদ্ধে মহিলারা আওয়াজ তুললেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্য চাইলেন, তখন তার বদলে তাঁরা কী পেলেন? মুখ্যমন্ত্রী সমস্ত শক্তি লাগিয়ে দিলেন অপরাধীকে বাঁচাতে!’’
এখানেই না থেমে শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে সময় নেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিজেপির চাপে তৃণমূল বাধ্য হয়েছে তাকে গ্রেফতার করতে। তৃণমূল রাজত্বে তৃণমূলের এই নেতা দু’মাস গায়েব ছিল। কেউ তো ছিল, যারা একে আড়াল করে রেখেছিল!’’ এর পরেই জমায়েতের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘আপনারা কি এই তৃণমূলকে ক্ষমা করবেন? যারা মা-বোনদের সঙ্গে এমন করেছে, তাদের বদলা নেবেন কি না? সব হিসাব ভোটে হবে। এখন বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করছেন, আপনার কাছে কিছু ভোটের মূল্য কি মা-বোনেদের কষ্টের থেকেও বেশি?’’
বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘কিছু ভোট’ বলতে মোদী রাজ্যের মুসলিম ভোটের কথাই বলেছেন। একই সঙ্গে অভিযুক্ত শাহজাহানকেও ‘মুসলিম’ বলে দেগে দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, রাজ্য বিজেপিও একই সুরে সন্দেশখালিতে প্রথম থেকে নারী নির্যাতন নিয়ে দাবি করে এসেছে।
বক্তৃতার শেষে মোদী এই রাজ্যে মুসলিমরা লোকসভা নির্বাচনে কী করবেন, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনি বলেন, ‘‘মুসলিম ভাইবোনেরা এ বার তৃণমূলকে শিক্ষা দেবে। তৃণমূলের বিদায়ের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ যার জবাবে শান্তনু বলেন, ‘‘মোদীর আমলে দেশে সংখ্যালঘুদের কী অবস্থা, তা সারা দেশ জানে। আর বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সব ধর্মের মানুষ এক ছাতার তলায়। কেউই বিকল্প খুঁজতে যাবেন না।’’