Lok Sabha Election 2024

ভোট মিটলে আবার হিংসা মাথাচাড়া দেবে না তো, প্রশ্ন আমডাঙার ঘরে ঘরে

সোমবার ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত আমডাঙায় ভোট চলার মধ্যে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথাগুলি বলছিলেন গিয়াসুদ্দিন মণ্ডলের মা সেরেনা বিবি। জানালেন, আতঙ্কে এ দিন বাড়ির কেউ বুথমুখো হননি।

Advertisement
চন্দন বিশ্বাস
ব্যারাকপুর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ০৬:৩০
আমডাঙার তারাবেড়িয়া পঞ্চায়েতে ২০১৮ সালে ভোট-পরবর্তী হিংসায় মৃত ছত্রার আলির মা এবং অন্য পরিজনেরা। সোমবার।

আমডাঙার তারাবেড়িয়া পঞ্চায়েতে ২০১৮ সালে ভোট-পরবর্তী হিংসায় মৃত ছত্রার আলির মা এবং অন্য পরিজনেরা। সোমবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

‘‘ভোটই তো আমাদের সব শেষ করে দিল! যে হাত দিয়ে আমার ছেলেটা কাজ করত, সেই হাতটাই আর নেই। ভোটের দিন সবাই থাকে, কিন্তু তার পরে? ভোট যে দেব, পরে কি কেউ দেখবে আমাদের?’’

Advertisement

সোমবার ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত আমডাঙায় ভোট চলার মধ্যে বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথাগুলি বলছিলেন গিয়াসুদ্দিন মণ্ডলের মা সেরেনা বিবি। জানালেন, আতঙ্কে এ দিন বাড়ির কেউ বুথমুখো হননি। ভোটের দিন বড় কোনও অশান্তির ঘটনা না ঘটলেও ভোট মিটে গেলে কী হবে, আপাতত এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে সেরেনার মতো বাসিন্দাদের বড় অংশের মনে।

আতঙ্ক যে অমূলক নয়, তার উদাহরণও আছে একাধিক। বিগত কয়েক বছরে ভোট এবং ভোট পরবর্তী হিংসায় রক্ত ঝরেছে আমডাঙায়। কখনও পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন ঘিরে গুলি-বোমাবাজিতে মৃত্যু, কখনও ভোটের পরের দিন বোমায় উড়ে গিয়েছে বিরোধী দলের কর্মীর হাত। এ ছাড়া হুমকি, মারধর, মাসের পর মাস এলাকাছাড়া করে রাখার মতো অভিযোগ তো আছেই। ফলে, সোমবারের ভোট মোটের উপরে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিটলেও এ বছরও যে হিংসার পুনরাবৃত্তি হবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছেন না এলাকাবাসী।

গত বছর পঞ্চায়েত ভোটের পরদিন বোমার আঘাতে উড়ে গিয়েছিল আমডাঙার চণ্ডীগড় পঞ্চায়েতের হবিবপুরের বাসিন্দা গিয়াসুদ্দিনের হাত। প্রাণে বেঁচে গেলেও কনুই থেকে ডান হাত বাদ দিতে হয়। গিয়াসুদ্দিনের মা সেরেনা তো বটেই, পরিবারের কেউই এ দিন ভোট দিতে যাননি। বাড়িতে গিয়ে গিয়াসুদ্দিনকে না পেয়ে ফোনে ভোট দেবেন কি না জিজ্ঞাসা করতেই তিনি বললেন, ‘‘কলকাতার হাসপাতালে আছি। কাজে এসেছি।’’

শুধু গত বছরের পঞ্চায়েত ভোটই নয়। ছ’বছর আগে, ২০১৮ সালে ভোট পরবর্তী হিংসায় আমডাঙায় এক রাতে মৃত্যু হয়েছিল তিন জনের। সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পাওয়া তারাবেড়িয়া পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের আগের দিন বড়গাছিয়ায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। মারা যান নাসির হালদার, কুদ্দুস আলি, ছত্রার আলি। কারও সঙ্গেই রাজনীতির দৃশ্যত কোনও যোগ ছিল না। পরে মৃত্যু হয় আরও এক জনের। কুদ্দুস আলির স্ত্রী ফরিদা বিবি এ দিন বাড়িতে বসে বললেন, ‘‘ভোটের জন্যই তো ছেলে-মেয়ে নিয়ে আমরা আজ পথে। ভোট না হলে কি আমাদের কিছু হত? স্বামীকে হারানোয় যে ক্ষতি হয়েছে, কোনও দলই তো তার পরে ফিরেও দেখল না।’’ আতঙ্ক রয়েছে ছত্রার এবং নাসিরের পরিবারেও। ছ’বছর আগের স্মৃতি এখনও টাটকা তাঁদের মনে।

তবে, এ বারের লোকসভা ভোট ঘিরে আমডাঙায় বিক্ষিপ্ত অশান্তি থেমে থাকেনি। রবিবার রাতেই একাধিক জায়গায় বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ। এ দিন সকালে বুথে বিরোধী এজেন্টদের বসতে বাধা দেওয়া, ভোটারদের ভয় দেখানো, হুমকি দেওয়ার মতো একাধিক অভিযোগ এসেছে। যদিও পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী কঠোর হাতে পরিস্থিতি সামলানোয় বড় অশান্তির ঘটনা ঘটেনি।

যদিও বাসিন্দাদের বড় অংশ এখনই ততটা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। এ দিন আমডাঙা ব্লকের পদ্মলাভপুরের একটি বুথ থেকে ভোট দিয়ে বেরিয়ে আসছিলেন এক বৃদ্ধ। অশক্ত শরীরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘পাড়ার দাদারা আগেই শাসানি দিয়ে গিয়েছে। বলেছে, ফলাফল এ দিক-ও দিক হলে বুঝে নেবে। ভোট তো দিলাম, পরে কী হবে— তার জন্য কপালই ভরসা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement