(বাঁ দিক থেকে) অধীর চৌধুরী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ভোটের আগে অধীর চৌধুরীর গড় বহরমপুরে ঘাঁটি গাড়লেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দলীয় সূত্রে খবর, বহরমপুরের একটি রিসর্টে রয়েছেন তিনি। আগামী ৭ মে, লোকসভা ভোটের তৃতীয় দফায় মুর্শিদাবাদ জেলার মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর কেন্দ্রে ভোট। তা নজরে রেখেই বহরমপুর থেকে দলের সাংগঠনিক কাজকর্ম দেখছেন দলনেত্রী। তবে তাঁর নজর চতুর্থ দফায় বহরমপুরের ভোটে। সেখানে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীরকে হারাতে তাঁরই প্রাক্তন শিষ্য হুমায়ুন কবীরকে বিশেষ দায়িত্বও দিয়েছেন মমতা।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী তিন দিনের জন্য বহরমপুরের ওই রিসর্টে থাকবেন মমতা। সেখান থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় নির্বাচনী প্রচারে যাবেন। সোমবার মুর্শিদাবাদ জেলাতেই তাঁর দু’টি সভা রয়েছে। একটি হবে জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত খড়গ্রামে। দ্বিতীয় সভাটি হবে মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ভগবানগোলায়। লোকসভা ভোটের সঙ্গেই ভগবানগোলায় বিধানসভার উপনির্বাচন রয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ চপারে করে বহরমপুরে পৌঁছন মমতা। সেখান থেকে বহরমপুরের রিসর্টে যাওয়ার আগে ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন ও বহরমপুর পুরসভার চেয়ারম্যান নাড়ুগোপাল মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাদা করে বৈঠক করেন তিনি।
দলীয় সূত্রে খবর, বহরমপুরের তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠানকে জেতানোর রণকৌশল কী হবে, তা নিয়ে মমতা এবং হুমায়ুনের মধ্যে ১৫ মিনিটের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই দলীয় বিধায়ককে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বহরমপুর বিধানসভা এলাকা থেকেই বিপুল লিড পেয়েছিলেন অধীর। তাতেই তাঁর জয় নিশ্চিত হয়েছিল গত বার। এ বার যাতে অধীর কোনও ভাবে বহরমপুর পুরসভা এলাকা থেকে আগের বারের মতো লিড না পান, তা নাড়ুগোপালকে নিশ্চিত করতে বলেছেন মমতা। তবে গোটা লোকসভা কেন্দ্রে দলের রণকৌশলের জন্য নেত্রীর ভরসা হুমায়ুনই।
তৃণমূলের জেলা স্তরের নেতারা জানাচ্ছেন, হুমায়ুন বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র হাতের তালুর মতো চেনেন। গড়গড় করে বলে দিতে পারেন লোকসভার যাবতীয় ভোট-পরিসংখ্যান। গোটা লোকসভা কেন্দ্র জুড়েই দলের বুথকর্মীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। এর পাশাপাশি বহরমপুরের পাঁচ বারের সাংসদ অধীরের ‘ডান হাত’ও ছিলেন হুমায়ুন। ফলে বিদায়ী সাংসদের কোথায় দুর্বলতা রয়েছে, সে ব্যাপারে তৃণমূল বিধায়কের সম্যক জ্ঞান রয়েছে। দলনেত্রী হয়তো তাকেই কাজে লাগাতে চাইছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে হুমায়ুন আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভাল মতোই জানেন যে, বহরমপুর লোকসভা আমার হাতের তালুতে রয়েছে। অধীরের স্ট্র্যাটেজি কেউ যদি কৌশলগত ভাবে ভাঙতে পারে, তার নাম হুমায়ুন। দীর্ঘ দিন অধীরবাবুর সঙ্গে রাজনীতি করেছি। তিনি কী ভাবে কোথায় লিড পান, আমার সব জানা। যে ভরসা মমতাদি আমার উপর রেখেছেন, আশা করছি আমি তা রক্ষা করতে পারব।’’ নাড়ুগোপালও বলেন, ‘‘গোটা বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রের জন্য মুখ্যমন্ত্রী আমাকে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে। অধীর চৌধুরীকে তৃণমূল বুঝিয়ে দেবে, বহরমপুর কার গড়।’’
অধীর অবশ্য এ সবের তোয়াক্কা করছেন না। তাঁর দাবি, আতঙ্কে ভুগেই বহরমপুরে থাকতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি তো সরাসরি মাননীয়া ও খোকাবাবুকে প্রার্থী হওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জ করেছিলাম। উনি নিজেও জানেন, এখানে তৃণমূল হারবে। সেই আতঙ্ক থেকেই এ সব করছেন।’’ এ বার পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে লড়ছে কংগ্রেস। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা মুর্শিদাবাদের জোটপ্রার্থী মহম্মদ সেলিমও মমতার বহরমপুরে আসা নিয়ে বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাম-কংগ্রেস জোট ও অধীর-সেলিমের বন্ধুত্ব নিয়ে আতঙ্কে ভুগছেন। তিনি যতই ঘাঁটি গেড়ে পড়ে থাকুন, সাধারণ মানুষ বুঝিয়ে দেবেন, তাঁরা তৃণমূলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।’’