(বাঁ দিক থেকে) অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মহুয়া মৈত্র। —ফাইল চিত্র।
তৃণমূলের অন্দরে একটা সময়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের ‘দক্ষতা’ সংশয় ছিল। অনেকেই বলতেন, সেই সংশয়ীদের মধ্যে ছিলেন সাংসদ মহুয়া মৈত্রও। যদিও মহুয়া দলের অন্দরে তেমন কিছু বলেছেন বলে কখনও শোনা যায়নি। প্রকাশ্যে তো নয়ই। বস্তুত, লোকসভা ভোটের আগে মহুয়া তৃণমূলের সেনাপতি অভিষেকের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। আনন্দবাজার অনলাইনের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’তে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী জানিয়ে দিয়েছেন, অভিষেক সংগঠনে তাঁর পারদর্শিতা প্রমাণ করে দিয়েছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংগঠনকে সাজিয়ে তুলেছেন। যে সংগঠনে একটি কাঠামো রয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে।
মহুয়ার বক্তব্য, ‘‘আমরা ডানপন্থী রাজনীতি করতাম জনগণের (মাস বেস) উপর নির্ভরশীল হয়ে। তাতে কোনও সাংগঠনিক কাঠামো ছিল না। কিন্তু এখন আমাদের লড়তে হচ্ছে ক্যাডারভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে। যেমন আরএসএস বা সিপিএম। সেই অনুযায়ী অভিষেক সাংগঠনিক কাঠামোয় বদল এনেছেন।’’
যদিও অভিষেক যে ভাবে রাজনীতিতে অবসরের বয়সবিধির কথা বলেছেন, তার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত নন মহুয়া। অভিষেক মনে করেন, অন্য সব পেশার মতোই রাজনীতিতেও অবসরের বয়স নির্দিষ্ট হওয়া উচিত। এবং তা কখনওই ৬৫ বছরের বেশি নয়। এ নিয়ে তৃণমূলে কম বিতর্ক হয়নি। যে বিতর্কে শাসকদলের মধ্যেও উথালপাথাল শুরু হয়েছিল। তবে অবসরের বয়স বেঁধে দেওয়ার পক্ষাপতী হলেও অভিষেক এ-ও মনে করেন যে, সব পেশাতেই ব্যতিক্রম থাকে। যেমন রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্র মোদী ব্যতিক্রম। আবার ক্রিকেটে ব্যতিক্রম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। তবে মহুয়া স্পষ্ট বলেছেন যে, তিনি মনে করেন, ‘‘বয়স কেবলই একটা সংখ্যা।’’ তাঁর বক্তব্য, কেউ ৮৫ বছর বয়সে ‘ফিট’ থাকেন। আবার কেউ ৫৫ বছর বয়সেই ন্যুব্জ হয়ে যান। মহুয়ার কথায়, ‘‘যত দিন শরীর ও মস্তিষ্ক কাজ করবে, তত দিনই রাজনীতিতে থাকা উচিত।’’ পাশাপাশিই কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী এ-ও মনে করেন, লোকসভা বা বিধানসভায় যাঁরা লড়েন, তাঁদের শারীরিক পরিশ্রম অনেক বেশি করতে হয়। যা রাজ্যসভার ক্ষেত্রে করতে হয় না। মহুয়া এ-ও মেনে নিয়েছেন, রাজনীতি নেশার মতো। তাই অনেকে তা ছাড়তে চান না।
মহুয়া বিদেশে চাকরি করতেন। সে সব ছেড়ে দেশে ফিরে গোড়ায় কংগ্রেস করতেন। তার পরেই তিনি যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। মহুয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, মমতার লড়াই-ই তাঁকে তৃণমূলে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু তাঁর মতো কেউ এখন রাজনীতিতে আসছেন না কেন? মহুয়ার কথায়, ‘‘আমি এখন সাহসের অভাব দেখি। যা মমতাদির মধ্যে দেখেছি। অদম্য সাহস। একদম বাঘের বাচ্চা! নেতা তো তিনিই, যিনি চোখে চোখ রেখে লড়ে যান। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও লড়াই জারি রাখেন।’’