রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে অপসারণের নির্দেশ। — ফাইল চিত্র।
রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে সরানোর নির্দেশ দিল নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের স্বরাষ্ট্রসচিবকেও অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হল। মিজোরাম, হিমাচল প্রদেশের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডিপার্টমেন্টের সচিবকেও সরানোর নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিব বিপি গোপালিককে চিঠি দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেখানে তারা জানিয়েছে, রাজ্য পুলিশের ডিজির পদ থেকে অবিলম্বে রাজীব কুমারকে সরাতে হবে। নির্বাচন সংক্রান্ত কোনও দায়িত্বে তিনি থাকতে পারবেন না। রাজ্য পুলিশের নতুন ডিজি নিয়োগের আগে পর্যন্ত এই দায়িত্ব সামলাবেন রাজীবের ঠিক নীচের পদে যে অফিসার রয়েছেন তিনি। এই পদে নতুন নিয়োগের জন্য সোমবার বিকেল ৫টার মধ্যে রাজ্য সরকারকে তিনটি নাম পাঠাতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। সাধারণত ভোটের মুখে কমিশনের নির্দেশে এ ধরনের বদলি হলেও সেই ব্যক্তিকে ভোট শেষে পুনরায় আগের পদে বহাল করে দেয় রাজ্য সরকার। রাজীবের ক্ষেত্রে তা না হলে আশ্চর্যেরই হবে। অতীতেও রাজীবকে ভোটের আগে দু’বার তাঁর তদানীন্তন পদ থেকে সরানো হয়েছে।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজীবকে তদানীন্তন পদ থেকে সরানো হয়েছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট ঘোষণার পর রাজীবকে ডেপুটেশনে দিল্লি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তী কালে রাজীব দীর্ঘ দিন ছিলেন কেন্দ্রীয় তথ্য প্রযুক্তি দফতরের সচিব। কয়েক মাস আগে রাজ্য পুলিশের ডিজি পদে মনোজ মালবীয়র মেয়াদ শেষ হয়। তার পর গত ডিসেম্বরে রাজ্য পুলিশের নয়া ডিরেক্টর জেনারেল (ডিজি) হিসাবে নিয়োগ করা হয় রাজীবকে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীবকে নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি অতীতে। তাঁকে রাজ্য পুলিশের সর্বোচ্চ পদে নিয়োগ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন ঠিক হয়েছিল, আপাতত তিনি ভারপ্রাপ্ত ডিজি হিসেবেই কাজ করবেন।
The Election Commission of India (ECI) has issued orders for the removal of the Home Secretary in six states namely Gujarat, Uttar Pradesh, Bihar, Jharkhand, Himachal Pradesh and Uttarakhand. Additionally, the Secretary of the General Administrative Department in Mizoram and… pic.twitter.com/DxvZPPlbNz
— ANI (@ANI) March 18, 2024
কলকাতা পুলিশের কমিশনার থাকাকালীন একাধিক বিতর্কে নাম জড়িয়েছিল রাজীবের। ২০১৩ সালে সারদা অর্থ লগ্নি সংস্থার মামলায় তদন্তের জন্য বিশেষ তদন্তকারী দল ‘সিট’ গঠন করে রাজ্য। ‘সিট’-এর দৈনন্দিন কাজকর্ম দেখার দায়িত্বে ছিলেন বিধাননগরের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার। ২০১৩ সালে সারদাকাণ্ডে তৃণমূলের তৎকালীন সাংসদ এবং তৃণমূলের প্রাক্তন মুখপাত্র কুণাল ঘোষকে গ্রেফতার করেছিলেন তিনি। কিন্তু ২০১৯ সালে সেই সারদা মামলাতেই রাজীবকে অভিযুক্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তে নামে সিবিআই। তাঁর বিরুদ্ধে সারদা মামলার তথ্য লোপাটের অভিযোগ ওঠে। সেই সময় কলকাতা হাই কোর্ট থেকে আগাম জামিনও নিতে হয়েছিল রাজীবকে। সে বছর ফেব্রুয়ারিতে রাজীবকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তাঁর বাসভবনে যায় সিবিআই। এর প্রতিবাদে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলে ধর্না দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সিবিআই দাবি করে, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সারদা-সহ সমস্ত অর্থ লগ্নি সংস্থার টাকা এবং সুবিধা কারা ভোগ করেছিলেন, সে বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে রাজীব কোনও সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ। এই সারদা তদন্তে শিলংয়ে রাজীব এবং কুণালকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই।
সম্প্রতি উত্তপ্ত সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব। লঞ্চ থেকে নেমে টোটোয় চড়ে সন্দেশখালি থানায় পৌঁছন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার এবং বসিরহাটের পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান।