পুরুষোত্তম রূপালা। — ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের গুজরাতে বিজেপির অস্বস্তি বাড়িয়ে এ বার রাজপুত সমাজের ক্ষোভের মুখে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা প্রবীণ বিজেপি নেতা পুরুষোত্তম রূপালা। তাঁকে রাজকোট আসন থেকে না সরালে রাজপুত সমাজ গুজরাতে তো বটেই, অন্যত্রও বিজেপির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে বলে হুমকি দিয়েছেন রাজ্যের রাজপুত নেতারা। পাশাপাশি রানি পদ্মাবতী ও তাঁর দাসীদের আদলে ক্ষত্রিয় সম্প্রদায়ের সাত নারী তাঁদের আত্মসম্মান রক্ষার জন্য ‘জহর’ (আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা) করার হুমকি দিয়েছেন।
মহিলাদের ‘জহর’ হুমকিকে গুরুত্ব না দিলেও রূপালাকে নিয়ে রাজপুত নেতৃত্বের ক্ষোভ চাপ বাড়িয়েছে বিজেপির। কারণ রূপালাকে নিয়ে রাজপুত নেতৃত্বের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের একাধিক বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে। রাজপুত নেতারা রূপালাকে রাজকোট আসন থেকে সরানোর দাবিতে অনড়। এর আগে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর পরই স্থানীয় স্তরে ক্ষোভের কারণে দু’জন প্রার্থীকে বদল করতে হয়েছে বিজেপিকে। আরও ছ’টা আসনে প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভের মুখে দল। বিজেপির সবচেয়ে শক্ত ঘাঁটি গুজরাতে এমন পরিস্থিতি দলের নেতাদের রক্তচাপ বাড়াচ্ছে। যদিও তাঁরা আশাবাদী, মোদী বা অমিত শাহ কথা বললে, রাজপুত নেতারা ফের সুর বদলাবেন।
বিতর্কের সূত্রপাত রূপালার একটি মন্তব্যকে ঘিরে। দলিতদের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘বিদেশিরা আমাদের উপর রাজত্ব করেছে। ব্রিটিশরাও করেছে। ওরা আমাদের অত্যাচার করার কোনও পথই ছাড়েনি। কিন্তু রাজপুজ মহারাজারা ওদের প্রণাম করতেন এবং ‘রুটি ও বেটি’-র সওদা করতেন। কিন্তু আমাদের রুখী (গুজরাটের দলিত) সম্প্রদায় তাদের ধর্ম পরিবর্তন করেননি বা ব্রিটিশদের সাথে সম্পর্কও করেনি।’’ গত ২৩ মার্চ এই ভিডিয়োটি ভাইরাল হয় এবং তার পর থেকেই রাজপুতদের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। বিষয়টি বুঝে রূপালা একাধিক বার ক্ষমা চাইলেও তা মানতে নারাজ রাজ্যের রাজপুত নেতারা। এই পরিস্থিতিতে দু’দিন প্রচার বন্ধ রাখেন রূপালা। আজ থেকে অবশ্য তিনি ফের প্রচার শুরু করেছেন। এরই মধ্যে গীতাবা পারমার নামে এক মহিলা ‘জহর’ করার হুমকি দেন। তাঁর হুমকির পরেই আরও কয়েক জন মহিলা একই হুমকি দেন। রূপালার প্রার্থীপদ প্রত্যাহারে দু’দিন সময় দেওয়া হয়েছে।
রাজপুত ক্ষোভের আরও একটি কারণ হল, পাটিদার সমাজের চাপের মুখে তাঁদের গুরুত্ব হারানো। একাধিক রাজপুত নেতার ক্ষোভ, গুজরাতে তাঁরা বরাবর বিজেপির পাশে থাকলেও দলে পাটিদারদের গুরুত্ব বেশি। বিজেপি দাবি না মানলে অন্তত ২৬টি আসনে নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করানোর হুমকি দিয়েছেন রাজপুত নেতারা। অনেকেই মনে করছেন, ৪০০ আসনের লক্ষ্য নিয়ে জিততে মরিয়া মোদী প্রয়োজনে রূপালাকে রাজকোট থেকে সরাতে দ্বিধা করবেন না। কারণ রাজপুত ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়লে গুজরাতের পাশাপাশি রাজস্থানেও চাপে পড়ে যাবে দল। সে ক্ষেত্রে রূপালাকে অন্য কোনও নিরাপদ আসন থেকে দাঁড়ানোর বিষয়টিও মাথায় রাখছেন রাজ্য নেতাদের একাংশ।