দিলীপ ঘোষ। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য বিজেপির সব চেয়ে ‘সফল’ সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেই দাবি করেন তাঁর অনুগামীরা। নির্বাচনী পরিসংখ্যানও সে কথাই বলে। ঘনিষ্ঠমহলে বিভিন্ন সময়ে নিজের সম্পর্কে এমন কথা বলেছেন তিনি। তবে আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই প্রথম বার নিজেকে তারকা ক্রিকেটার বিরাট কোহলির সঙ্গে তুলনা করলেন দিলীপ। দাবি করলেন, তিনিই ‘বিজেপির কোহলি’। নিজমুখেই বলেন, ‘‘আমি যখন ক্যাপ্টেন ছিলাম, তখন তো বিরাট কোহলিই ছিলাম!’’
নিজের সময়কে এগিয়ে রাখলেও ‘সতর্ক’ দিলীপ একটি বারের জন্যও বর্তমান নেতৃত্বের কড়া সমালোচনা করেননি। বিজেপির অন্দরেই এমন আলোচনা রয়েছে যে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে চিঠি দিয়ে মুখ বন্ধ রাখার যে নির্দেশ দিয়েছিল, সেই নির্দেশের পর থেকেই দিলীপ নিজেকে ‘সংযত’ রেখেছেন। সমালোচনা দূরে থাক, পরামর্শও দেন না আজকাল। আনন্দবাজার অনলাইনের ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’-তে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দিলীপ বলেন, ‘‘এটা তো ঠিক যে, আমার সময়ে দল সব চেয়ে বেশি এগিয়েছে। বাকিটা বাকিরা করবেন। এখনও অনেক পথ চলা বাকি।’’
তবে কিছুটা সমালোচনার সুর দিলীপের গলায় শোনা গিয়েছে। যখন তিনি বলেছেন যে, এখন দলের ‘গতি’ অনেকটাই কমে গিয়েছে। তার কারণ ব্যাখ্যা করে দিলীপ বলেন, ‘‘নেতৃত্বের বদল হলে এমনটা হয়। চেনামুখ সামনে না থাকলে কর্মীদের কাজ করতে মনে অস্বস্তি হয়। আবার মারপিট, আবার মামলা। বাংলার রাজনীতি তো আর সিনেমা দেখতে যাওয়া নয়, হাতে প্রাণ নিয়ে যাওয়া। সামনের নেতৃত্বের উপরে ভরসা রাখতে না পারলে কর্মীরা বের হন না।’’ নেতৃত্বের উপরে কর্মীরা কেন ভরসা রাখতে পারছেন না? ফের সতর্ক জবাব দিলীপের, ‘‘বের হবে। ভোট এলেই সবাই বের হবে। কর্মীরা সবাই তাল ঠুকছেন। যুদ্ধের ঘোড়া বাজনা না বাজলে বের হবে না।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এখন দু’জন সেনাপতি। তখন দিলীপ ঘোষ একা ছিল বলে ভাল-মন্দ সব আমার দিকে আসত। এখন আমাদের ৭০ জন বিধায়ক। ১৮ সাংসদ।’’
এত শক্তিবৃদ্ধির পরেও রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব কেন দানা বাঁধছে না? দিলীপের জবাব, ‘‘নেতৃত্ব তো রাতারাতি তৈরি হয় না! ঘাত-প্রতিঘাত একের পর এক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়। তবে তাঁকে মানুষ নেতা মানে। সব দলেই তাই হয়েছে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই বলুন বা দেশের প্রধানমন্ত্রী— সকলেই সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে অগ্নিপথ পার হয়ে এসেছেন। আসতে হয়। তবেই মানুষ ভরসা করে।’’
এর পরেই আসে বিরাট কোহলি প্রসঙ্গ। দিলীপ বলেন, ‘‘বিরাট কোহলি টেস্ট, ওয়ান ডে, টি-টোয়েন্টি সবেতে চ্যাম্পিয়ন হন। কিন্তু ক’টা বিরাট হয়! বাকিরা আছেন, কেউ টেস্টে ভাল খেলছেন, কেউ ওয়ান ডে ভাল খেলছেন।’’ দিলীপ কি তবে ‘বিজেপির বিরাট কোহলি’? প্রশ্ন শুনেই দিলীপের জবাব, ‘‘আমি যখন ক্যাপ্টেন ছিলাম, তখন তো বিরাট কোহলিই ছিলাম। আমি একদম পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে অভ্যস্ত। আর ছোটবেলা থেকে শৃঙ্খলার মধ্যে থাকা অভ্যাস করেছি। কেউ আঙুল তুলতে পারে না। অনেকের তাতে অসুবিধা হয়, কিন্তু আমার কিছু করার নেই।’’
তবে তিনি যে আগের মতো সমালোচনায় কঠোর নন, তা-ও বুঝিয়ে দিয়ে পর ক্ষণেই দিলীপ বলেন, ‘‘আমাদের আদর্শকেন্দ্রিক দল, কর্মীকেন্দ্রিক দল। তাতে ব্যক্তি খুব বড় হয় না। তখন দল ছোট ছিল বলে দিলীপ ঘোষকে বড় মনে হয়েছিল। দল যখন বড় হয়ে যায়, অনেক বড় নেতাও ছোট হয়ে যান।’’
অন্য দল থেকে নেতা নেওয়া নিয়ে বরাবরই তিনি ‘রক্ষণশীল’। আর রাজনীতিতে দলবদলকে তিনি একেবারে ‘আইপিএল’-এর সঙ্গেই তুলনা করেন। ক্রিকেটপ্রেমী দিলীপ বলেন, ‘‘এখন কেউই আদর্শের জন্য দলবদল করে না। অন্য ব্যাপার আছে। এখন সেটাকে উপেক্ষা করা যায় না। দিন দিন সেটাই প্রধান হয়ে উঠছে।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘ভরসা আছে বলেই অনেককে আমরা নিয়েছি, দায়িত্ব দিয়েছি। ছোট হোক, বড় হোক— তাঁকে টিকিট দিয়েছি। ভরসা না রাখলে তো চলতে পারে না। কিন্তু যাঁর উপরে ভরসা রাখা হচ্ছে, তিনি ভরসা রাখবেনই, সেটা হলে তো অর্জুন সিংহ হত না! এখন রাজনীতির এটা অঙ্গ। মেনে নিতে হবে।’’
গত বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে বিজেপির ‘যোগদান মেলা’ নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে দিলীপ বলেছেন, ‘‘অর্জুন সিংহ একটা চরিত্র। কত লোক এসেছে আমাদের দলে! আবার চলে গিয়েছে। এটা ভারতীয় রাজনীতি তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিরও অঙ্গ হয়ে গিয়েছে। আইপিএলের মতো। এ বার এই টিমে খেলছে, পরের বার মুম্বই বা বেঙ্গালুরুতে খেলবে।’’