প্রতীকী চিত্র।
চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু আগামী শুক্রবার অর্থাৎ ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে। একেবারে প্রথম দিনই রয়েছে বাংলা পরীক্ষা। এ বারের পরীক্ষায় যে সমস্ত পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেগুলি মাথায় রেখে কী ভাবে প্রস্তুতি নিলে ভাল হয়, শেষ মুহূর্তে কোন কোন টপিক দেখা জরুরি অথবা কী পদ্ধতি অবলম্বন করলে পরীক্ষায় ভাল ফল করা সম্ভব, সেই সমস্ত বিষয়ে বিশেষ পরামর্শ ভাগ করে নিয়েছেন যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের বাংলার শিক্ষক প্রিয়তোষ বসু।
যে বিষয়গুলি মনে রেখে পরীক্ষার হলে যেতে হবে : গত বছর থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র এবং উত্তরপত্রের ধরনে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। উত্তরপত্রের প্রথম পৃষ্ঠায় থাকছে এমসিকিউ-এর উত্তর লেখার নির্ধারিত জায়গা এবং পরবর্তী দু'টি পৃষ্ঠায় লিখতে হবে এসএকিউ-এর উত্তর। পরামর্শ হল, এমসিকিউ-এর ক্ষেত্রে শুধু মাত্র দাগ নয়, অপশনটিও উল্লেখ করে দিতে হবে। এসএকিউ-এর ক্ষেত্রে উত্তর দিতে হবে অতি সংক্ষিপ্ত ভাবে এক বা দুই লাইনে। এর বেশি লেখা চলবে না। উত্তর দিতে হবে নির্দিষ্ট বাক্সে।
সময় মেপে পরীক্ষা দিতে হবে। পরীক্ষা দেওয়ার সময় সহজ প্রশ্নের উত্তর আগেই লিখে ফেলতে হবে। মাথায় রাখতে হবে, প্রবন্ধ রচনার মতো বড় লেখার পিছনে যাতে বেশি সময় না চলে যায়। যে প্রশ্নে বেশি অংশ বিভাজন থাকবে, সেগুলির উত্তর করলে বেশি নম্বর তোলা সম্ভব। উত্তরের অংশ বিভাজনগুলি বুলেট দিয়ে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করে দিতে পারলে ভাল। পাঠ্যাংশ থেকে প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দিতে পারলে উত্তরের মান বাড়বে।
গুরুত্ব যেখানে: গত কয়েক বছরের প্রশ্নপত্র পর্যবেক্ষণের পরে ২০২৪ এর উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র নিয়ে কিছু ধারণা করা যেতে পারে। যদিও সেটা নিছক ধারণা মাত্রই। গল্পের ক্ষেত্রে এ বার গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে ‘ভাত’ গল্পটি। 'ক্রন্দনরতা জননীর পাশে', 'মহুয়ার দেশ' এবং 'আমি দেখি' কবিতাগুলি ভাল করে পড়তে হবে। নাটকের ক্ষেত্রে ‘নানা রঙের দিন’ এবং ‘বিভাব’-এর মধ্যে যে কোনও একটি ভাল ভাবে পড়লেই হবে। একই কথা প্রযোজ্য আন্তর্জাতিক কবিতা এবং ভারতীয় গল্প বিভাগের জন্য । এখান থেকেও যে কোনও একটি ভাল ভাবে পড়লেই হবে ।
পড়ুয়াদের বরাবরই ভয়ের জায়গা 'আমার বাংলা' এই সহায়ক পাঠটি । এখান থেকে এ বারের পরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে 'মেঘের গায়ে জেলখানা’, 'গারো পাহাড়ের নিচে’ এবং 'হাত বাড়াও'। একই ভাবে, আরও একটি জায়গায় ছাত্রছাত্রীদের ভীতি কাজ করে, সেটি হল 'শিল্প সংস্কৃতির ইতিহাস'। এখানে ‘বিজ্ঞানচর্চার ইতিহাস’ এ বার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে যে প্রসঙ্গগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে— নীলরতন সরকার, কাদম্বিনী বসু গঙ্গোপাধ্যায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, বিজ্ঞানচর্চায় জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির অবদান। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগ থেকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার— চলচ্চিত্রে মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক; চিত্রকলায় পটচিত্র, যামিনী রায়, নন্দলাল বসু, রামকিঙ্কর বেইজ; খেলাধুলার ইতিহাসে বাঙালির দাবা খেলা এবং বাঙালির সার্কাস ইত্যাদি।
ভাষাতত্ত্বের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে ভাষাবিজ্ঞান আলোচনার বিভিন্ন পদ্ধতি, রূপতত্ত্ব এবং বাক্যতত্ত্ব অধ্যায়গুলি। প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে প্রস্তুতির কোনও দরকার নেই, কারণ প্রতিটি ক্ষেত্রেই রচনায় যথেষ্ট সহায়ক উপাদান থাকে। তবুও তথ্যভিত্তিক রচনায় যে প্রবন্ধগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখা যেতে পারে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ— বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন, স্বামী বিবেকানন্দ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ, শঙ্খ ঘোষ, মৃণাল সেন।
প্রতি ক্ষেত্রেই মনে রাখতে হবে, বিষয়টি পড়ুয়ারা কতটা বুঝতে পেরেছে, বিশ্লেষণ করতে পেরেছে এবং সহজ ভাষায় লিখে বোঝাতে পারছে। উত্তরপত্র মূল্যায়নে সেগুলিই সব থেকে বেশি গুরুত্ব পায়।