সংগৃহীত চিত্র।
বাংলার মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান ও কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করতে উদ্যোগী হল উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ ও বিষয় সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা তৈরি করতে পড়ুয়াদের নিয়ে বিশেষ কেরিয়ার কাউন্সেলিং কর্মশালার আয়োজন করতে চলেছে শিক্ষা সংসদ। এই কর্মশালায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়া পড়ুয়ারা। যার নামকরণ করা হয়েছে ‘বুটস্ট্র্যাপ প্রোগ্রাম।’
মাধ্যমিক পরীক্ষা ইতিমধ্যেই শেষ হয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনোর জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে মেধাবী পড়ুয়ারা। পাশাপাশি, শিক্ষা সংসদের তরফ থেকে বিগত কয়েক বছরে চারটি বিষয় কম্পিউটার সংক্রান্ত পাঠ্যক্রমে যুক্ত করা হয়েছে। সেগুলি হল, কম্পিউটার সায়েন্স, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন যার পাঠ্যক্রম নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। গত বছর দু’টি বিষয় যুক্ত করা হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডেটা সায়েন্স। আর এ বছর যুক্ত করা হয়েছে কম্পিউটার সংক্রান্ত আরও নতুন দু’টি বিষয়। সেগুলি হল, অ্যাপ্লিকেশন অফ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও সাইবার সিকিউরিটি।
উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য বলেন, “কম্পিউটার সংক্রান্ত যে ছ’টি বিষয় বিগত কয়েক বছর ধরে যুক্ত করা হয়েছে। সেগুলি সম্পর্কে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের ধারণা তৈরি করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবং আগামী বছর থেকে বিজ্ঞান বিষয়ের প্রতিও একই ভাবে ‘কেরিয়ার কাউন্সেলিং’ কর্মশালা করা হবে। বিজ্ঞান বিষয়ের প্রতি পড়ুয়াদের আগ্রহ বৃদ্ধি করতেই এই উদ্যোগ।”
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে পড়ুয়ারা। এ বছর প্রায় ৮ লক্ষ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও বিজ্ঞান বিষয় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ৮০ হাজার। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রের খবর, বিজ্ঞানের পড়ুয়ার সংখ্যা ক্রমেই নিম্নমুখী হচ্ছে যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়ে। আগামী দিনে কম্পিউটার ও বিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়ের প্রতি বাংলার মেধাবী পড়ুয়াদের আগ্রহ বৃদ্ধি না পেলে সর্বভারতীয় স্তরে বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিষয় বাংলার পড়ুয়াদের সংখ্যা হ্রাস পাবে বলে শিক্ষা সংসদের একাংশের মত।
‘বুটস্ট্র্যাপ প্রোগ্রাম’ অফলাইন এবং অনলাইন এই দু’টি ভাগে ক্লাস করানো হবে পড়ুয়াদের। যে সমস্ত মাধ্যমিক পড়ুয়ারা অনলাইনে ক্লাস করবে তাদের এই অনলাইন কর্মশালার ক্লাস করাবেন উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষা সংসদের ঠিক করে দেওয়া বিশেষজ্ঞরা। আর যারা অফলাইনে এই কর্মশালার সঙ্গে যুক্ত হবে তাদের স্কুলগুলি এই ক্লাস করাবেন এবং তাঁদের ‘স্টাডি মেটেরিয়াল’ দেবেন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। তবে অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে ক্লাস হবে সংশ্লিষ্ট স্কুলের ক্লাসরুম থেকে। ২০ এপ্রিল সংসদের নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকে এই স্টাডি মেটেরিয়াল ডাউনলোড করতে পারবে স্কুলগুলি।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “আপাতদৃষ্টিতে দেখলে শিক্ষা সংসদের এই উদ্যোগ যথেষ্ট ভাল। কিন্তু অধিকাংশ স্কুলেই এই বিষয়ে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এই বিষয়গুলি যে সমস্ত স্কুলে পড়ানো হবে সেখানে যেন দক্ষ বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক পদ তৈরি করা হয়, সেই প্রস্তাব সরকারকে দেওয়া উচিত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের।”
মোট এই ১৪ দিনের কর্মশালার আয়োজন করা হবে। যা স্কুলগুলিকে আয়োজন করতে হবে। ১৪ দিনে ১৪টি ক্লাস নেওয়া হবে, হাতে-কলমে শিক্ষার ব্যবস্থা রাখা হবে।প্রত্যেকটি ক্লাসের সময় ধার্য করা হয়েছে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা। স্কুলগুলির ক্ষেত্রে এই কর্মশালা বাধ্যতামূলক না হলেও সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে উচ্চমাধ্যমিকের ক্লাস শুরু হওয়ার আগে। কারা কারা এই প্রোগ্রামের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়, কতজন অনলাইনে ক্লাস করবে এবং কতজন অফলাইনে ক্লাস করবে স্কুলগুলিকে জানাতে হবে। সেই মতো সমস্ত ব্যবস্থা করবে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ।