আইসিএআর-সিআইএফআরআই- এর তত্ত্বাবধানে পুকুরে চলছে ইলিশ চাষ। সংগৃহীত চিত্র।
রুপোলি মাছের চাষ এ বার পুকুরে। কেন্দ্রীয় সংস্থার অধীনে রাজ্যের পুকুরে চলছে ইলিশ চাষ। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচার রিসার্চ(আইসিএআর)-এর অধীনস্থ মৎস্য গবেষণা সংস্থার নাম সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিআইএফআরআই), যা ব্যারাকপুর ফিশারি নামেও পরিচিত। এর সঙ্গে ৩টি সংস্থা যারা মৎস্য চাষ ও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত, তাদের যৌথ উদ্যোগ এই পুকুরে ইলিশ চাষ। এক-একটি ইলিশের সর্বোচ্চ ওজন প্রায় ৭০০ গ্রাম।
ইলিশ নোনা জলের মাছ। তবে ডিম পাড়ার সময়ে মিষ্টি জলে চলে আসে। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে গঙ্গায় ইলিশের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে। ফলে তাকে রক্ষা করা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। ইলিশ সংরক্ষণ যে পদ্ধতিতে করা হয়, তা যথেষ্ট ব্যয়বহুল। সাধারণত এ ক্ষেত্রে যে জাল ব্যবহার করা হয়, তাতে ছোট ইলিশ ধরা পড়ে। ফলে ইলিশ মাছের বংশবৃদ্ধি নষ্ট হয়।
সীমিত জায়গার মধ্যে ইলিশ সংরক্ষণ সম্ভব কি না, তাতে উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই নিয়ে একটি গবেষণা চলে। এই সময়ে আইসিএআর-এর সঙ্গে যুক্ত হয় সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ় রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
সিআইএফআরআই-এর প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর শ্রীকান্ত সামন্ত বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল গবেষণার মাধ্যমে ইলিশ মাছের জীবন চক্রকে একটি জায়গার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি কি না দেখা। তা হলে আমরা ইলিশ মাছ সংরক্ষণ করতে পারব। প্রথম দফার গবেষণা চলাকালীন এই পুকুরে ইলিশ মাছ চাষের ভাবনা সামনে আসে। সিআইএফআরআই তখন মূল গবেষণা শুরু করে এর উপরে। বর্তমানে আমরা জলাশয়ের মধ্যে ইলিশ চাষ সফল ভাবে করছি।”
১৯৮০-র দশকে এই কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানটিকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ইলিশ মাছ চাষের গবেষণার সঙ্গে যুক্ত তিনটি সংস্থা। সিআইএফআরআই ছাড়াও রয়েছে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ব্রাকিস ওয়াটার অ্যাকোয়াকালচার, যার আঞ্চলিক কেন্দ্র কাকদ্বীপে এবং সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফ্রেশ ওয়াটার অ্যাকোয়া কালচার, যার আঞ্চলিক কেন্দ্র রহড়া। এছাড়াও রয়েছে সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফিশারিস এডুকেশন, যার আঞ্চলিক কার্যালয় কলকাতায়। এই সংস্থাগুলির যৌথ উদ্যোগে ১৭ জন গবেষক পশ্চিমবঙ্গে তিনটি জেলায় পুকুরে ইলিশ মাছ চাষ করছেন-- উত্তর ২৪ পরগনা (রহড়া এবং কল্যাণী), দক্ষিণ ২৪ পরগনা (কাকদ্বীপ) এবং পূর্ব মেদিনীপুর (কোলাঘাট)।
বর্তমানে চার জায়গার মোট ১৫টি পুকুরে ইলিশ মাছ চাষ করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ২ হাজারেরও বেশি ইলিশ মাছ চাষ করা হয়েছে পুকুরে। তার মধ্যে সব থেকে বড় ইলিশ মাছটি ৬৮৯ গ্রামের।
কোলাঘাটে রূপনারায়ণ নদীর জল পুকুরে মেশানো হয়েছিল। সেখানে প্রায় ১০০টি মাছের ওজন ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। পুকুরে প্রায় ২৫০০ মাছের প্রজনন ঘটানো হয়েছে, যার মধ্যে বেশ কিছু মাছের ওজন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ গ্রাম। আইসিএআর ও সিআইএফআরআই পরিচালক বি কে দাস বলেন, “সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণে বিশেষ ধরনের প্রায় ১০০ ইলিশ মাছ পাওয়া গিয়েছে, যেগুলোর ওজন ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। কোলাঘাটে একটি মাছের ওজন প্রায় ৭০০ গ্রাম। আগামী দিনে গবেষণায় আরও বেশি সফল্য আসবে বলে বলে আমি আশাবাদী।”
ফারাক্কা ব্যারেজেও ইলিশের পরিমাণ কমে গিয়েছিল। সেখানেও ইলিশ মাছের বংশবৃদ্ধির জন্য ইলিশের চারা ছাড়া হয়েছে বলে জানান সিআইএফআরআই- এর পরিচালক।
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রথম পর্যায়ে যে গবেষণা চলেছিল, সেখানে বিজ্ঞানীরা মূলত ইলিশ মাছের জীবন চক্র, পুকুরে কী ভাবে প্রজনন করা যায়, তা নিয়ে বিশদ গবেষণা করেছিলেন। ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত যে গবেষণা হয়েছে, তাতে পুকুরে ইলিশ চাষ করে বড়সড় সাফল্য পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
মূলত, ইলিশের খাবারের উপরে গবেষণামূলক কাজ করেছে সিআইবিএ ও সিয়াইএফএ। জুপ্ল্যাঙ্কটন সাপ্লিমেন্টেশনের পাশাপাশি যে খাবার দেওয়া হয়, তার নিরিখেই এই বিশেষ গবেষণা।