জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেন-এ ভাল ফলের উপায় কী? প্রতীকী ছবি।
আগামী ৬ এপ্রিল থেকে শুরু হতে চলেছে জয়েন্ট এন্ট্রান্স এগ্জাম (জেইই) মেনের দ্বিতীয় পর্বের পরীক্ষা। দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এনআইটি), ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউটস অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইআইটি) এবং কেন্দ্র পোষিত টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটগুলি (সিএফটিআই)-তে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং টেকনোলজি নিয়ে পড়াশুনোর আকাঙ্ক্ষা পূরণের প্রথম ধাপ এই জেইই মেন। পরীক্ষায় কোন কোন বিষয় থাকে, বিভিন্ন বোর্ডের দ্বাদশের পরীক্ষার সঙ্গে এই পরীক্ষার ফারাক কোথায়, কেমন ভাবেই বা পরীক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়া যায়, সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন গুরু নানক ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সঙ্গীতা ভট্টাচার্য।
জেইই মেন সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং গণিত—এই ৩টি বিষয়ের উপর জেইই মেন হয়। প্রশ্নপত্রে প্রতিটি বিষয়ের দুটি বিভাগ থাকে। প্রতিটি বিষয়ের বিভাগ এ-তে ২০টি মাল্টিপল চয়েস (এমসিকিউ) প্রশ্ন এবং বিভাগ বি -তে ১০টি সংখ্যাসূচক প্রশ্ন থাকে। ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৫টির উত্তর দিতে হয় পরীক্ষার্থীদের। প্রতিটি প্রশ্নে থাকে ৪ নম্বর। উত্তর ভুল হলে প্রতি প্রশ্নে ১ নম্বর করে কেটে নেওয়া হয়। পরীক্ষায় সর্বমোট নম্বর থাকে ৩০০ এবং সময় থাকে ৩ ঘণ্টা।
জেইই মেনের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি বিভিন্ন বোর্ডের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার চেয়ে বেশ খানিকটা আলাদা। ঠিক কী কী পার্থক্য রয়েছে? জেনে নেওয়া যাক।
১. প্রশ্নের ধরন বা প্যাটার্ন: অনেক বোর্ডেই দ্বাদশের পরীক্ষায় অবজেক্টিভধর্মী প্রশ্নের পাশাপাশি থাকে রচনাধর্মী প্রশ্নও। তবে, জেইই মেন-এ শুধুমাত্র মাল্টিপল চয়েস (এমসিকিউ) এবং সংখ্যাসূচক প্রশ্নই থাকে, যেখানে বিস্তারিত উত্তর লেখার প্রয়োজন পড়ে না।
২. সিলেবাস বা পাঠ্যক্রম: একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাস নিয়েই হয় জেইই মেন। অন্য দিকে, বেশিরভাগ বোর্ডের দ্বাদশের পরীক্ষা শুধুমাত্র দ্বাদশ শ্রেণির পাঠ্যক্রমের উপরেই নেওয়া হয়।
৩. মাধ্যম: জেইই মেন হয় অনলাইনে কম্পিউটারের মাধ্যমে। অন্য দিকে, প্রায় সমস্ত দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা অফলাইন মাধ্যমেই আয়োজন করে।
৪. নম্বর: দ্বাদশের পরীক্ষায় উত্তর ভুল হলেও নেগেটিভ মার্কিং বা নম্বর কেটে নেওয়া হয় না। তবে, জেইই মেইন-এ প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য রয়েছে নেগেটিভ মার্কিং।
এ বার আসা যাক, জেইই মেন-এর প্রস্তুতি কী ভাবে নেওয়া যায়, সেই আলোচনায়।
১. শেষ কয়েক বছরের প্রশ্নপত্রের সমাধান: যদিও জেইই মেনে গত বছরগুলির প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি তেমন একটা দেখা যায় না। তবুও, শেষ কয়েক বছরের প্রশ্নপত্রগুলি ঘেঁটে তার সমাধান করলে পরীক্ষার প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে একটি যথাযথ ধারণা তৈরি হয়। এছাড়াও, এর মাধ্যমে জেইই মেনের জন্য কোন বিষয়গুলির উপর বেশি জোর দেওয়া উচিত বা আরও ভাল ভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত, তা সহজেই বুঝে নিতে পারবেন পরীক্ষার্থীরা।
২. টাইম ম্যানেজমেন্ট: শুধু পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন বিষয় পড়ার দিকে মন দিলেই চলবে না, পরীক্ষার দিন যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যথাযথ ভাবে উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়, সেই দিকেও নজর দিতে হবে পরীক্ষার্থীদের। গত বছরগুলির প্রশ্নপত্রের উপর বাড়িতেই কম্পিউটারে বসে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মক টেস্ট অনুশীলন করলেও উপকার পেতে পারেন পরীক্ষার্থীরা।
৩. নিউমারিক্যাল প্রশ্ন: পরীক্ষার জন্য পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নের নিউমারিক্যাল প্রশ্ন বা বিষয়গুলির দিকে বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া উচিত। পরীক্ষায় ভাল নম্বর তোলার জন্য এই নিউমারিক্যাল প্রশ্ন বা বিষয়গুলি বাড়িতে প্রতিনিয়ত অনুশীলনেরও প্রয়োজন রয়েছে।
৪. রুটিন: যেহেতু পরীক্ষা প্রায় দোরগোড়ায়, তাই এখন ৩টি বিষয়ের জন্য একটি দৈনিক রুটিন তৈরি করে বিষয়গুলি পড়া আর মক টেস্ট অনুশীলন করা উচিত।
৫. মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর: জেইই মেনের এর মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার সময় চিন্তা বা উদ্বেগ দূরে সরিয়ে মন শান্ত রেখে প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়া ভীষণ ভাবে জরুরি। এর জন্য পরীক্ষার্থীরা প্রতিদিন যোগাসন বা অন্যান্য ব্যায়াম বা ১০-১৫ মিনিটের জন্য মেডিটেশন অভ্যাস করে এবং বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে গল্পগুজব করে উপকৃত হতে পারেন।