‘হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড।’ নিজস্ব চিত্র।
শিক্ষা দফতর এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বোঝাপড়ার অভাবে বাতিল হয়ে গিয়েছিল হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে তা যাতে চালু করা যায় এ বার তার জন্য উদ্যোগী হল স্কুল শিক্ষা দফতর। নভেম্বর মাসেই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের ডিআইদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন করবে স্কুলশিক্ষা দফতরের কমিশনার। এই মর্মে সমস্ত ডিআইদের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে শিক্ষা দফতর।
প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সার্বিক অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে এই প্রকল্পের ঘোষণা করেছিল স্কুল শিক্ষা দফতর। চলতি বছরের জুলাই মাসে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে এই প্রকল্প চালু হচ্ছে না। হঠাৎ করে বিষয়টি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ে স্কুলগুলি।
এ প্রসঙ্গে বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, “গতবছর হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড চালু করবে বলে শিক্ষা দফতর নির্দেশ দিলেও মধ্যশিক্ষা পর্ষদ আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি। শেষমেশ কমিশনার বাধ্য হয়েছিলেন তাঁর নির্দেশ প্রত্যাহার করতে। এ বার সে রকম কিছু হবে না তো? মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কিন্তু এখনও কোনও নির্দেশ দেয়নি। তা ছাড়া সর্বত্র পরিকাঠামো ঠিক করে নির্দেশ দেওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।”
এই ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামও করা হবে প্রত্যেকটি জেলায় প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের ডিআইদের নিয়ে। ২১ ও ২২ তারিখ বেলা ১২টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত দু’টি ব্যাচে ভাগ করে এই ওরিয়েন্টেশন করা হবে। এই প্রোগ্রাম হবে অনলাইনের মাধ্যমে। প্রথম দিন ১৫টি জেলা এবং দ্বিতীয় দিন ১০টি জেলার ডিআইরা থাকবেন। শিক্ষক মহলের একাংশের বক্তব্য, শুধু জেলা পরিদর্শকদের ওরিয়েন্টেশন নয়। স্কুলের শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ এবং ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের রিপোর্ট তৈরি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। যার জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দক্ষ শিক্ষাকর্মীর প্রয়োজন। সময় অনেক কম। দ্রুত এই কাজগুলো সম্পূর্ণ করতে হবে স্কুলশিক্ষা দফতরকে।
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “এ বিষয়ে শিক্ষকদের যথাযথ ভাবে ট্রেনিং দেওয়া দরকার। এ ছাড়া প্রকৃত মূল্যায়নের জন্য প্রাথমিকে শ্রেণি অনুযায়ী শিক্ষক, প্রাথমিকে শিক্ষাকর্মী নিয়োগ, মাধ্যমিক স্তরে সমস্ত শূন্যপদে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ এবং সার্বিক পরিকাঠামোর উন্নতি করতে হবে। এর পাশাপাশি শিক্ষা বহির্ভূত অন্যান্য কাজ থেকে শিক্ষকদের সম্পূর্ণ ভাবে অব্যাহতি দিতে হবে। না হলে কোনও ভাবেই এর উদ্দেশ্য সফল হতে পারে না।”
পড়ুয়ার ব্যক্তিত্ব এবং লাইফ স্কিল বিকাশের সার্বিক রিপোর্ট কার্ড তৈরি করতে চলেছে রাজ্য। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি) এবং জাতীয় শিক্ষানীতিকে মান্যতা দিয়ে এই রিপোর্ট কার্ড তৈরি করা হবে। যার নামকরণ করা হয়েছে ‘হলিস্টিক রিপোর্ট কার্ড’।
আর শ্রেণিভিত্তিক নয়, প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের সার্বিক অগ্রগতির রূপরেখা তৈরি হবে একটি রিপোর্ট কার্ডে। পুস্তিকা আকারে সেই রিপোর্ট কার্ড ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে বিভিন্ন স্কুলে। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণির মধ্যে তিনটি পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মূল্যায়ন হবে। সেখানে যেমন জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য থাকবে, একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়া ব্যক্তিগত ও সামাজিক ভাবে কী ভাবে নিজেকে তুলে ধরছে, তা-ও উল্লেখ করা হবে। এ ছাড়াও থাকছে পড়ুয়ার নাম, ঠিকানা, আধার নম্বর, রক্তের গ্রুপ-সহ নানা তথ্য।
তবে, তিনটি পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়নের প্রতিটি ভাগের উল্লিখিত পূর্ণমান নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক মহল। কারণ, বর্তমান মূল্যায়নের নম্বরের বিভাজনের সঙ্গে এর অনেকটাই ফারাক বলে মনে করছেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা।