WB Madhyamik Result 2024

‘আমি এতটুকু খুশি নই’, যাদবপুরকাণ্ডের দাদার স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ ছোট ভাইকে

২ মে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হলেও তার মনখারাপ। কোনওক্রমে পাশ করতে পারলেও দাদার কথা ভুলতে পারছে না সে।

Advertisement
সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২৪ ১৫:৩৯
Jadavpur University.

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত।

‘‘আমার মন ভাল নেই। কিছুই ভাল লাগছে না। আরও ভাল হতে পারত রেজ়াল্টটা।’’

Advertisement

ফোনের ও পার থেকে ভেসে এল এই কথাগুলি। শুনে বোঝা গেল, যাদবপুরকাণ্ডের স্মৃতি এখনও টাটকা। মাসের পর মাস কাউন্সেলিং করার পরেও মাধ্যমিক উত্তীর্ণ কিশোরের চোখে দাদার হাসিমুখটা ভেসে উঠছে বারে বারে। এ বারের পরীক্ষায় সে পাশ করেছে। পরীক্ষার ফলের কথা জিজ্ঞেস করতেই সে জানায়, ‘‘শুধু মনে পড়ছে, অঙ্কের জটিল সমস্যার সহজ সমাধান খুঁজে দিত দাদা।’’ ফোনের ও পারে বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা। এর পর আবার শুরু হল, ‘‘এখন দাদা নেই, কিন্তু ঘরের আনাচকানাচে ওর বইখাতার স্তূপ ওর কথা মনে করায়।” জানা গিয়েছে, যাদবপুরকাণ্ডে নিহত পড়ুয়া মাধ্যমিকে পেয়েছিলেন ৮৭ শতাংশ নম্বর।

এই মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মাস কয়েক আগে উত্তাল হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কিশোরের বাবার কাছে হঠাৎ করেই রাতে ফোন গিয়েছিল, ছেলের দুর্ঘটনা ঘটেছে। বগুলা থেকে কলকাতার পথে ছুটে আসার পথেই খবর পেল পরিবার, ছেলে আর নেই। সব শেষ। এক বৃহস্পতিবারে বড় ছেলে চলে গিয়েছিল, আর এক বৃহস্পতিবারে ছোট ছেলে কোনওক্রমে মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোল। ফোনের ও পারে বাবার স্বরে আক্ষেপের সুর, ‘‘আজকের দিনটাতে বড় ছেলেটা থাকলে কতই না আনন্দ করত! ছোট ভাইটাকে হয়তো বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়াত। রান্না করতে খুব ভালবাসত ও।”

Madhyamik Exam.

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

তিনি আরও বললেন, ‘‘চোখের সামনে ওই দিনটা এখনও ভাসে, যে দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় ছেলেকে পৌঁছে দিতে গিয়েছিলাম ছোটটাকে নিয়ে। ক্যাম্পাসে পৌঁছে যাওয়ার পর হঠাৎই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেছিলাম তিন জনেই। কিন্তু কেন সেই কান্না এসেছিল, তখন কেউই বুঝতে পারিনি।’’ এতগুলো দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর ওই দিনটার কথা ভেবে বাবার প্রশ্ন, ‘‘সে চলে যাবে বলেই কি চোখে জল এসেছিল!’’

ছোট ছেলেটির সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করা হয়েছিল। মাধ্যমিক পাশ করলেও সেই উত্তেজনার সুর নেই তার গলায়। সবটুকু ভুলে সে এগিয়ে চলার চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু চলার শক্তি যেন হারিয়ে গিয়েছে! খানিকটা থেমেই থেমেই সে বলল, ‘‘হাসিখুশি দাদাটা আর নেই। সে কেন চলে গেল, কী ভাবে চলে গেল, সেই রাতে কী হয়েছিল— প্রশ্নগুলো মাথার মধ্যে কিলবিল করছে! ঘুম হচ্ছে না, ভাল লাগছে না কিচ্ছু। ও থাকলে হয়তো আরও ভাল হতে পারত রেজ়াল্টটা।”

জানা গিয়েছে, যাদবপুরকাণ্ডের পর বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল ছোট ছেলেটির। তার মন থেকে কুয়াশা এখনও সরেনি। তাই রাজ্যের একটি সরকারি হাসপাতালে মাসে এক বার করে কাউন্সেলিং করিয়ে নিতে হচ্ছে। এত কিছুর পরেও নিহত পড়ুয়ার বাবার সাফ বক্তব্য, ছেলের বিচার পাওয়ার জন্য লড়াই থেমে থাকবে না। তাঁর আরও দাবি, অভিযুক্তেরা আইনজীবীদের জন্য টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। এত দিন ধরে আদালতের দোরে ঘুরে ঘুরে আরও জেদ চেপে গিয়েছে বাবার। এই লড়াইয়ের শেষ কোথায়? উত্তর খুঁজছেন হারানো সন্তানের মা-বাবা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
আরও পড়ুন
Advertisement